বঙ্গবন্ধুর লেখা বই পড়ে পুরস্কার পেল ১১ শিক্ষার্থী

বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ পড়ে সিলেটে পুরস্কার পেল শিক্ষার্থীরা। আজ শুক্রবার বিকেলে সিলেট জেলা পরিষদ মিলনায়তনেপ্রথম আলো

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের লেখা অসমাপ্ত আত্মজীবনী বইটি পাঠে অংশ নিয়েছিল সিলেটের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ১ হাজার ৬ শিক্ষার্থী। এরপর তারা অংশ নেয় প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায়। পরে সেখান থেকে মহান মুক্তিযুদ্ধের ১১টি সেক্টরের সঙ্গে মিলিয়ে ১১ শিক্ষার্থীকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। আজ শুক্রবার বেলা তিনটায় সিলেট জেলা পরিষদ মিলনায়তনে এই পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান হয়।

বিজয়ী শিক্ষার্থীদের হাতে পুরস্কারের পাশাপাশি বইপাঠে অংশগ্রহণকারী সবাইকে দেওয়া হয় সনদ। সিলেট জেলা পরিষদের সহযোগিতায় অনুষ্ঠানের আয়োজক ছিল বইপড়ুয়াদের সংগঠন ‘ইনোভেটর’। ২০০৬ সাল থেকে ‘ইনোভেটর’ শিক্ষার্থীদের মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস–সংবলিত বই পড়িয়ে আসছে। এ পর্যন্ত তারা প্রায় সাড়ে ১৪ হাজার শিক্ষার্থীকে বই পড়িয়েছে।

করোনা পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে মাস্ক পরে সবাই অনুষ্ঠানে অংশ নেন আজ। অনুষ্ঠান শুরু হয় শিল্পী অনিমেষ বিজয় চৌধুরী, প্রতীক এন্দ টনি ও আশরাফুল ইসলাম অনির পরিবেশনায় জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ উদ্‌যাপন কমিটি জাতীয় বাস্তবায়ন পরিষদের প্রধান সমন্বয়ক ও কবি কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন। তাঁরা দুজনই ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভার্চ্যুয়ালি অনুষ্ঠানে অংশ নেন।

শ্রেষ্ঠ পাঠকের পুরস্কার পান কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে তাসফিয়া চৌধুরী ও স্কুল পর্যায়ে সঞ্চিতা দাশ। এ ছাড়া সেরা পাঠকের পুরস্কার পান কলেজ–বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে দেবাঞ্জন দেব, মৌসুমী রানী রায়, সোনিয়া আক্তার, প্রীতিরাজ বণিক ও হাদী হোসেন এবং স্কুল পর্যায়ে সুলতানা জামান, মুসতারী আহমেদ, মানসুরা সিদ্দিকা ও আহবাবুর রহমান।

অনুষ্ঠানের মঞ্চে সভাপতিত্ব করেন আয়োজক সংগঠনের মুখ্য সঞ্চালক রেজওয়ান আহমদ। অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার মো. মশিউর রহমান ও সিলেট জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা দেবজিৎ সিনহা। স্বাগত বক্তব্য দেন আয়োজক সংগঠনের নির্বাহী সঞ্চালক প্রণব কান্তি দেব। অনুষ্ঠান সঞ্চালন করেন আয়োজক সংগঠনের সদস্য ঈশিতা ঘোষ চৌধুরী ও সৈয়দা আছিয়া খাতুন। পুরস্কার বিতরণ পর্ব সঞ্চালনা করেন সুমন রায়।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে জানার সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য মাধ্যম হচ্ছে বই। বঙ্গবন্ধুর নীতি ও আদর্শকে হৃদয়ে লালন করতে হলে তাঁর মহাজীবন পাঠের কোনো বিকল্প নেই। এ ছাড়া পঠন-পাঠন ছাড়া তারুণ্যের মনোজগতের বিকাশ সম্ভব নয়। মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ গড়তে হলে বঙ্গবন্ধুকে জানার বিকল্প নেই।
কামাল চৌধুরী, প্রধান অতিথি

আয়োজকেরা জানান, গত বছরের ডিসেম্বরে সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এক বর্ণাঢ্য আয়োজনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের হাতে ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ তুলে দেওয়া হয়। এরপর চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে এই বইয়ের ওপর প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা হয়। ‘স্কুল পর্যায়’ ও ‘কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়’ এই দুই ক্যাটাগরিতে পরীক্ষাটি হয়। আজ বিজয়ীদের পুরস্কৃত করা হলো। বিজয়ীদের সনদ, ক্রেস্ট, মেডেল, উত্তরীয় ও বই উপহার হিসেবে দেওয়া হয়।

শ্রেষ্ঠ পাঠকের পুরস্কার পান কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে তাসফিয়া চৌধুরী ও স্কুল পর্যায়ে সঞ্চিতা দাশ। এ ছাড়া সেরা পাঠকের পুরস্কার পান কলেজ–বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে দেবাঞ্জন দেব, মৌসুমী রানী রায়, সোনিয়া আক্তার, প্রীতিরাজ বণিক ও হাদী হোসেন এবং স্কুল পর্যায়ে সুলতানা জামান, মুসতারী আহমেদ, মানসুরা সিদ্দিকা ও আহবাবুর রহমান। এই ১১ জন ছাড়াও ‘বিশেষ পাঠক’ ক্যাটাগরিতে গ্রিন ডিজেবল ফাউন্ডেশন সিলেটের তাবাসসুম ফেরদৌসকে পুরস্কৃত করা হয়। সমাপনী অনুষ্ঠান উপলক্ষে বিশেষ স্মারক সংকলন প্রকাশিত হয়েছে। এটি সম্পাদনা করেছেন সুমন রায়।

শেখ মুজিব আর বাংলাদেশ অভিন্ন সত্তা। মুজিব জীবনের নিবিড় পাঠ ছাড়া তাঁকে ভালোবাসা যায় না। মুজিবের রচনাগুলো আমাদের অমূল্য সম্পদ।
সেলিনা হোসেন, কথাসাহিত্যিক

সমাপনী পর্বে বক্তারা বলেন, তরুণ প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরার প্রত্যয়ে বইপড়া উৎসব প্রতিবছর আয়োজন করা হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের বই পড়িয়ে ‘ইনোভেটর’ এরই মধ্যে সারা দেশে বিশেষ পরিচিতি অর্জন করে নিয়েছে। এর স্বীকৃতিস্বরূপ তারা ২০১৭ সালে ‘জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড’ অর্জন করে নেয়।

প্রধান অতিথি হিসেবে কবি কামাল চৌধুরী বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে জানার সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য মাধ্যম হচ্ছে বই। বঙ্গবন্ধুর নীতি ও আদর্শকে হৃদয়ে লালন করতে হলে তাঁর মহাজীবন পাঠের কোনো বিকল্প নেই। এ ছাড়া পঠন-পাঠন ছাড়া তারুণ্যের মনোজগতের বিকাশ সম্ভব নয়। মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ গড়তে হলে বঙ্গবন্ধুকে জানার বিকল্প নেই। বরেণ্য কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন বলেন, ‘শেখ মুজিব আর বাংলাদেশ অভিন্ন সত্তা। মুজিব জীবনের নিবিড় পাঠ ছাড়া তাঁকে ভালোবাসা যায় না। মুজিবের রচনাগুলো আমাদের অমূল্য সম্পদ।’