‘বছর ভালা’, তাই খুশি কৃষক

এবার ঝড়-বৃষ্টি কম। শ্রমিকের সংকট নেই। নেই আগাম বন্যার শঙ্কা। সব মিলিয়ে ভালো বছর পেয়েছেন কৃষক।

ধান কাটছেন কৃষকেরা। মঙ্গলবার বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার খরচার হাওরে।
ছবি: প্রথম আলো

করোনায় যখন সর্বত্র অস্থিরতা, তখন সুনামগঞ্জের হাওরে চলছে অন্য রকম উৎসব। শ্রম–ঘামে ফলানো সোনার ধান গোলায় তোলার এ উৎসব। দিনভর ধান কাটা, মাড়াই ও শুকাতে ব্যস্ত কৃষক পরিবারের লোকজন। এবার আবহাওয়া ভালো। ঝড়-বৃষ্টি কম। শ্রমিকের সংকট নেই। নেই আগাম বন্যার শঙ্কা। সব মিলিয়ে একটা ভালো বছর পেয়েছেন কৃষকেরা। এখন খুশি মনে ধান গোলায় তুলছেন তাঁরা।

সুনামগঞ্জের ১৫৪টি ছোট-বড় হাওরে বোরো ধানের আবাদ হয়। ধান লাগানোর পর মাঝামাঝি সময়ে বৃষ্টি হলে ফলন ভালো হয়। এবার সেটা হয়নি। তাই খরায় ফলন কিছুটা কম হয়েছে। তবে এতে কৃষকদের কোনো আক্ষেপ নেই। সবকিছুর পর এবার তেমন কোনো ঝামেলা ছাড়াই ফসল তুলতে পারায় একটা স্বস্তি আছে তাঁদের মনে। তাঁরা বলছেন, এভাবে আর ১৫ দিন সময় পেলে হাওরের ধান কাটা শেষ হয়ে যাবে।

সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার খরচার হাওরপাড়ের রাধানগর গ্রামের বড় কৃষক হাফিজ উদ্দিন (৬০)। হাওরে তাঁর জমি আছে প্রায় ২০ একর। এখন পর্যন্ত ধান কাটা হয়েছে ১২ একরের। মধ্য দুপুরে বৈশাখের কড়া রোদ মাথায় নিয়ে মাঠে ধান মাড়াই ও শুকানোর কাজ তদারক করছিলেন তিনি। হাফিজ উদ্দিন জানান, গত চার-পাঁচ বছরের মধ্যে এবার এ সময়ে আবহাওয়া অনেকটা ভালো থাকায় কৃষকেরা নির্বিঘ্নে ধান গোলায় তুলতে পারছেন। দেখা গেছে, বৈশাখে টানা বৃষ্টির সঙ্গে ঝড়, শিলাবৃষ্টি থাকে। বজ্রপাতও বেশি হয়। এতে ধান কাটা ও মাড়াইয়ে সমস্যা হয়। পাশাপাশি শ্রমিক সংকট ও আগাম বন্যার আশঙ্কা থাকলে কৃষকদের মধ্যে একটা অস্থিরতা কাজ করে। কিন্তু এবার এসব নেই। হাফিজ উদ্দিন বললেন, ‘সব দিক মিইল্যা ইবার বছর ভালা। সবাই খুশি। কোনো টেনশন নাই। খুশি মনেই ইবার ধান ঘরও তুলরাম।’

হাওরপাড়ে ধান শুকানোর কাজ করছিলেন গ্রামের আকলিমা বেগম (৪২)। তিনি বলেন, পুরা বৈশাখ মাস তাঁরা ধান তোলার কাজ করেন। কষ্ট নয়, বরং খুশি লাগে। ঘরের ছোট-বড় সবাই ধান তোলার কাজ করেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এবার জেলায় ২ লাখ ২৩ হাজার ৩৩০ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৩ লাখ ৪৪ হাজার ৫৪ মেট্রিক টন। এখন পর্যন্ত ধান কাটা হয়েছে ৩০ শতাংশ।

জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা কৃষকদের মুখে হাসি দেখতে চাই। এ জন্য তাঁদের সঙ্গে মাঠেই আছি। যখন যা লাগবে, সেটির ব্যবস্থা করা হবে। অন্য জেলা থেকে শ্রমিক আনা হয়েছে। মাঠে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের বেশ কিছু যন্ত্র আছে। আমাদের কথা হলো, পাকা ধান কোনো অবস্থাতেই জমিতে রাখা যাবে না। এখন পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে আছে। এই মাস এভাবে থাকলে হাওরের ৯০ শতাংশ ধান কাটা শেষ হয়ে যাবে বলে আশা করছি।’