বছরে পর্যটনকেন্দ্রিক লেনদেন হাজার কোটি টাকা

মৌলভীবাজারের পর্যটনকেন্দ্রিক অর্থনীতির মূলে রয়েছে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ছড়িয়ে থাকা চা–বাগান

মৌলভীবাজারে পর্যটনকেন্দ্রিক ব্যবসা এখন লতায়–পাতায় বেড়ে চলছে। পর্যটনকে ঘিরে বছরে অন্তত হাজার কোটি টাকার ওপর লেনদেন হচ্ছে। রিসোর্ট-হোটেল, পরিবহন, স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পণ্যের কেনাকাটাসহ বিভিন্ন খাতে এই লেনদেন হয়ে থাকে।

শ্রীমঙ্গল পর্যটন সেবা সংস্থা, হোটেল-রিসোর্টের মালিক ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মৌলভীবাজারে আগে থেকেই পর্যটনের স্থান থাকলেও পর্যটকদের আনাগোনা বাড়া শুরু হয়েছে ১০ থেকে ১২ বছর আগে থেকে। আর সেটা মোটামুটি ভালো পর্যায়ে এসেছে গত পাঁচ বছরে। এ সময়ের মধ্যে ছোট–বড় এবং বিভিন্ন মানের প্রায় ৮০টি হোটেল-রিসোর্ট তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে আছে পাঁচ তারকা মানের গ্র্যান্ড সুলতান টি রিসোর্ট অ্যান্ড গলফ এবং দোসাই। বেশির ভাগ হোটেল-রিসোর্টই শ্রীমঙ্গলে গড়ে ওঠেছে। বছরে অন্তত চার থেকে পাঁচ লাখ পর্যটকের আনাগোনা ঘটছে। পর্যটকদের আসা-যাওয়াকে কেন্দ্র করে হোটেল-রিসোর্ট, পরিবহন, স্থানীয় পণ্য কেনাকাটাসহ বিভিন্ন খাতে পর্যটকেরা অর্থ খরচ করেন। দেখা গেছে, একজন পর্যটক এক-দুই দিন অবস্থানের সময় ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকার মতো খরচ করেন। উন্নত মানের হোটেল-রিসোর্টে অবস্থানকারী পর্যটকদের খরচের পরিমাণ আরও বেশি। খরচের খাতের মধ্যে আছে থাকা, খাওয়াদাওয়া, গাড়িভাড়া, কেনাকাটা ইত্যাদি।

পর্যটকদের কেন্দ্র করে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, মাইক্রোবাসসহ পরিবহনের সংখ্যা বেড়েছে। পরিত্যক্ত জিপগুলো আবার সচল হয়ে ওঠেছে। চা-পাতার দোকান বেড়েছে। মণিপুরি শাড়িসহ স্থানীয় কারুপণ্যের ব্যবসা বেড়েছে। ফুটপাত ও ভ্রাম্যমাণ দোকানে বিভিন্ন পণ্যের ব্যবসা বেড়েছে। একজন পর্যটক ২ থেকে ১৫ কেজি চা-পাতা কিনে ফেরেন। তৈরি হয়েছে নতুন নতুন কর্মসংস্থান। হোটেল-রিসোর্টে অন্তত আড়াই হাজার কর্মকর্তা–কর্মচারীসহ পরিবহন, ট্যুর গাইডসহ অন্যান্য খাতে প্রায় পাঁচ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। এতে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের অনুমান, জেলার পর্যটন খাতে বছরে হাজার কোটি টাকার ওপর লেনদেন হচ্ছে। এতে স্থানীয় লোকজনের জীবনমানেরও উন্নতি হচ্ছে।

করোনার সংক্রমণ রোধে হোটেল-রিসোর্ট, রেস্তোরাঁ বন্ধ থাকায় বেশ কয়েক মাস ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা গেছে। অনেকেই আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তবে পুনরায় সবকিছু সচল হয়ে ওঠলে পর্যটকদের ঢল নেমেছে। ব্যবসা আবারও চাঙা হয়ে ওঠেছে। ব্যবসা করোনাকালের আগের অবস্থানে ফিরছে বলে অনেকেই মনে করছেন।

মৌলভীবাজারের বড়লখো উপজেলায় অবস্থিত মাধবকুন্ড জলপ্রপাতটি বাংলাদেশের বৃহত্তম জলপ্রপাত। প্রায় ২০০ ফুট উঁচু টিলা থেকে পাহাড়ি ঝর্নার পতিত জলরাশি পর্যটকের জন্য আকর্ষণীয়

শ্রীমঙ্গলের গ্র্যান্ড সেলিম রিসোর্টের মালিক সেলিম আহমেদ বলেন, ‘পর্যটনকে কেন্দ্র করে টোটাল ব্যবসা একটা ভালো অবস্থানে চলে আসছে। স্থানীয়ভাবে সবকিছুর ব্যবসা বেড়েছে। পরিবহন থেকে শুরু করে অনেক ধরনের ব্যবসা আছে, যা একটার সঙ্গে আরেকটা সম্পর্কিত। হিসাব করে দেখেছি, খাওয়াদাওয়া, ঘোরাঘুরি, কেনাকাটাসহ বিভিন্ন খাতে একজন পর্যটক ২ দিনে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা খরচ করেন। অনেকে আরও বেশি করেন। করোনার বন্ধের পরে ব্যবসা ভালো হয়েছে। ভালোর দিকে আছে।’

সেলিম আহমেদ জানিয়েছেন, তাঁর রিসোর্টে চলতি বছরের জানুয়ারির প্রথম ১০ দিনে সাড়ে ৩০০ পর্যটক এসেছেন। মাসে ৭০০ পর্যটক আসেন। এক মাসের হিসাবে দেখা গেছে, তাঁর রিসোর্টে আসা পর্যটকেরাই এক কোটি পাঁচ লাখ টাকার মতো খরচ করেন। এ রকম মানের অন্তত ১০টি রিসোর্ট আছে।

করোনার পর পর্যটকদের ঢল নেমেছে। মৌলভীবাজারের পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে। সবাই আশান্বিত। আগামীতে আরও বাড়বে
ছবি: প্রথম আলো

শ্রীমঙ্গল পর্যটন সেবা সংস্থার সভাপতি আবু সিদ্দিক মো. মুসা বলেন, পর্যটকদের আনাগোনার কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি এসেছে। শুধু রিসোর্টমালিকই নন, পরিবহন ও গ্রোসারিমালিক; মাংস, চটপটি ও পান বিক্রেতা—সবাই ব্যবসা করছেন। বলা যায়, পর্যটনের কারণে ব্যবসা বেড়েছে। আগে এ রকম ছিল না। এতে মানুষের জীবনমানেরও উন্নতি হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, করোনার কারণে গোটা পৃথিবী স্তব্ধ হয়ে পড়েছে। হোটেল-রিসোর্ট বন্ধ হওয়ায় অনেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। অনেকে এখনো ক্ষতি কাটিয়ে ওঠতে পারেননি। তবে করোনার পর পর্যটকদের ঢল নেমেছে। সবাই আশান্বিত। আগামীতে আরও বাড়বে।