বনের মালিক দখলদার

পীরগঞ্জ, রানীশংকৈল ও বোচাগঞ্জে বন বিভাগের ১ হাজার ৪৪১ দশমিক ৭৮ একর জমি আছে। এর মধ্যে ৭৮৫ দশমিক ৪৯ একরই হাতছাড়া হয়েছে।

দিনাজপুর বন বিভাগের পীরগঞ্জ বিটের আওতায় থাকা দেড় হাজার একর জমির মধ্যে প্রায় আট শ একরই অবৈধভাবে দখল হয়েছে। এসব জমি পুনরুদ্ধারে দীর্ঘদিনেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেয়নি প্রশাসন। দখল হওয়া জমি বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করছেন স্থানীয় লোকজন।

পীরগঞ্জ বিটের জমিগুলো পীরগঞ্জ, রানীশংকৈল ও দিনাজপুরের বোচাগঞ্জ উপজেলায়। দখলদারেরা এসব জমিতে ফলের বাগান ও ধান চাষ করছেন। এ ছাড়া তৈরি করা হয়েছে চাতাল, দোকান ও গবাদিপশুর খামার। ৩০ থেকে ৩৫ বছর ধরে এসব জমি দখল হয়েছে।

বন বিভাগের দিনাজপুর বিভাগীয় কর্মকর্তা (ডিএফও) আবদুল্লাহ আল মামুন দাবি করেছেন, অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদের জন্য সম্প্রতি ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসকের কাছে তালিকাসহ উচ্ছেদের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলেই কার্যক্রম শুরু হবে।

২০১৮ সালের ডিসেম্বরে দিনাজপুর বন বিভাগের ঠাকুরগাঁও রেঞ্জ কর্মকর্তার কাছে ‘জবরদখলকৃত বনভূমি উদ্ধার’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন পাঠানো হয় পীরগঞ্জ বিট থেকে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, পীরগঞ্জ, রানীশংকৈল ও বোচাগঞ্জে ১ হাজার ৪৪১ দশমিক ৭৮ একর (১ হাজার ৪৪১ একর) বনভূমি আছে। এর মধ্যে ৭৮৫ দশমিক ৩০ একরই বন বিভাগের হাতছাড়া হয়ে গেছে।

সবচেয়ে বেশি জমি দখল হয়েছে পীরগঞ্জের সাগুনী, বাঁশগাড়া এবং রানীশংকৈলের কাশিপুর ও ফরিঙ্গাদীঘি মৌজায়। সাগুনী মৌজার ৫৩৫ এর মধ্যে ৪৮৬, বাঁশগাড়ায় ৮৯ এর মধ্যে ৭৪, কাশিপুরে ১৩৭ একরের পুরোটাই ও ফরিঙ্গাদীঘিতে ৫৮ এর মধ্যে ৩৫ একর জমি দখল হয়েছে।

এ ছাড়া পীরগঞ্জের ভবানীপুরে ৬ দশমিক ৬০, থুমনিয়ায় ৬ দশমিক ৬৫, সৈয়দপুরে ১, বান্দিগড়ে ২ দশমিক ১২, হরশুয়ায় ১ দশমিক ৪২ এবং পূর্ব হাজিপুর মৌজায় দখল হয়েছে ২ দশমিক ১২ একর বনভূমি।

পীরগঞ্জের হাজিপুর গ্রামের কয়েকজন বাসিন্দা জানান, পূর্ব হাজিপুর মৌজায় বন বিভাগের সংরক্ষিত শালবাগানের জমি ৪ দশমিক ৫৩ একর। এর মাঝখানে ২ দশমিক ৪১ একর জমির ওপর ২৬ থেকে ২৭টি বড় শালগাছের বাগান আছে। বাকি ২ দশমিক ১২ একর জমিই দখলে চলে গেছে। দখলদারেরা এ অংশে চালকল-চাতাল ও ৮ থেকে ৯ বছর আগে আমের বাগান তৈরি করেছেন।

সাগুনী পেট্রল পোস্টের (পিপি) দায়িত্বে থাকা বোটম্যান আবদুস সামাদ মণ্ডল জানান, পূর্ব হাজিপুরে শালবাগানের ছয় দখলদারকে জমি ছেড়ে দেওয়ার জন্য আট বছর আগে নোটিশ দেওয়া হয়। তাঁদের মধ্যে আছেন পূর্ব হাজিপুর গ্রামের তাইজুল, এনামুল হক, মঈনুল হক ও সনাতন রায়। এনামুল হক ও সনাতন রায় বলেন, শালবাগানের পাশের দুই-তিন মিটার জায়গা তাঁদের দখলে যেতে

পারে। তবে প্রয়োজনে বন বিভাগের জায়গা ছেড়ে দেওয়া হবে।

সাগুনী পিপির আবদুস সামাদ ও বাঁশগাড়া গ্রামের আরও তিনজন বাসিন্দা জানান, সাগুনী শালবাগানের পশ্চিম পাশে ৪ দশমিক ১৩ একর জমি ১৬ থেকে ১৭ বছর ধরে দখলে নিয়ে চাষাবাদ করছেন বাঁশগাড়া গ্রামের হায়জত আলীসহ দুজন। হায়জত আলী বলেন, তিনি ১ দশমিক ৭৫ একর জমির মামলায় আপিল করেছেন। এই জমিতে তিনি ক্রয়সূত্রে আবাদ করছেন।

পীরগঞ্জ বিটের থুমনিয়া শালবাগানটি জেলার মধ্যে সবচেয়ে বড় বাগান। ভবানীপুর ও থুমনিয়া গ্রামের সমশের ও মো. মেদা জানান, বনের পুরোনো ও বড় শালগাছ এখন আর দেখা যায় না। ২৫ থেকে ৩০ বছর আগে শালগাছ কেটে চোরেরা পাচার করতেন। মামলায় জেলহাজত খেটে অনেকেই বুড়ো হয়েছেন। দুজন মারাও গেছেন।

জেলার রানীশংকৈল উপজেলার কাশিপুর মৌজার ১৩৭ দশমিক ৩০ একরের পুরোটাই গত ১৭ থেকে ১৮ বছরে দখল হয়েছে। দিনাজপুরের বোচাগঞ্জে ফুটকিবাড়ি মৌজার ৪ দশমিক ৩৯, কংশরায় ১ দশমিক ৮০, সাদামহলে ১৪ দশমিক ৯২, হাটরামপুরে ৩ দশমিক ৫৫ ও হরিপুরে ২ দশমিক ৩৮ একরের পুরোটাই দখল হয়েছে। তবে মালদগাঁও মৌজার ৮ দশমিক ৮১ একর শালবনের পুরোটাই বন বিভাগের নিয়ন্ত্রণে আছে।

বন বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, এত দিনেও জমি উদ্ধার না হওয়ার কারণ লোকবলের সংকট। ঠাকুরগাঁও রেঞ্জ কর্মকর্তা হরিপদ দেবনাথ দাবি করেন, তালিকা করেও শুধু লোকবল সংকটের কারণে জমি উদ্ধার করা যাচ্ছে না। আর পীরগঞ্জ বিটের কর্মকর্তা মো. শাহজাহান বলেন, গত এক বছরে নতুন করে এই বিটের কোনো জমি দখল হয়নি।