বন্ধ থাকার ৮ ঘণ্টা পর পাটুরিয়া-দৌলতদিয়ায় ফেরি চলাচল শুরু

ঘন কুয়াশায় বন্ধ ছিল পাটুরিয়া–দৌলতদিয়া নৌপথের ফেরি চলাচল। আজ মঙ্গলবার সকালে পাটুরিয়ার তিন নম্বর ঘাট এলাকায়
প্রথম আলো

ঘন কুয়াশার কারণে আট ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টা থেকে মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ও রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া নৌপথে ফেরি চলাচল শুরু হয়। দীর্ঘ সময় ফেরি বন্ধ থাকায় দুই ঘাটে আটকা পড়ে শত শত যানবাহন। এতে কনকনে শীতে চরম দুর্ভোগে পড়েন যাত্রী ও যানবাহনের শ্রমিকেরা।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন সংস্থার (বিআইডব্লিউটিসি) আরিচা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে ১৬টি ফেরি রয়েছে। তবে কুয়াশার কারণে নৌপথ দেখতে না পাওয়ায় গত রোববার রাত থেকে ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

গতকাল সোমবার রাত ১২টার পর থেকে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে অববাহিকায় পদ্মা নদী কুয়াশায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। একপর্যায়ে দিবাগত রাত তিনটার দিকে কুয়াশার তীব্রতা বেড়ে গেলে ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় দৌলতদিয়া প্রান্ত থেকে যাত্রী ও যানবাহন নিয়ে ছেড়ে আসা চারটি ফেরি মাঝনদীতে নোঙর করে থাকে। এগুলো হচ্ছে খান জাহান আলী, শাহ আলী, ঢাকা ফেরি ও শাপলা-শালুক। এসব ফেরিতে প্রায় ২০টি যাত্রীবাস এবং ৪০টি ব্যক্তিগত গাড়ি ছিল। এদিকে পারাপার বন্ধ থাকায় ঢাকাসহ আশপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে ছেড়ে আসা যাত্রীবাহী বাস ও পণ্যবাহী গাড়ি পাটুরিয়া ঘাট এলাকায় আটকা পড়ে। এসব যাত্রীবাহী বাস পাটুরিয়া-উথলী সংযোগ সড়কে দীর্ঘ সারিতে নদী পারের অপেক্ষায় আছে। এ ছাড়া পণ্যবাহী গাড়িগুলো পাটুরিয়ায় টার্মিনালে রাখা হয়েছে।

আজ সকালে সরেজমিনে দেখা গেছে, পাটুরিয়া প্রান্তে দীর্ঘ সারিতে আটকা পড়া বাসের যাত্রীদের কেউ বাসের ভেতর বসে আছেন, কেউ ঘুমাচ্ছেন। কেউ বাস থেকে নেমে চা পান করছেন। সকাল নয়টার দিকে সাউদিয়া পরিবহনের বৃদ্ধ যাত্রী আবদুস সাত্তার ফকিরকে (৭০) দেখা গেল ফেরির টিকিট কাউন্টারের কাছে চায়ের দোকানে আগুনের পাশে। তিনি চট্টগ্রাম থেকে স্ত্রীকে নিয়ে গ্রামের বাড়ি মাগুরা সদরের রাঘবদাইর গ্রামে ফিরছেন। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ভোর পাঁচটায় ঘাটে আইচি। ফেরি বন্ধ। শীতের মধ্যে গাড়ির মধ্যি কষ্ট হচ্ছিল। তাই আগুনের তাপ নিচ্ছি।’

যশোরের অভয়নগর উপজেলার নওয়াপাড়া গ্রামের আলামিন শিকদার সোহাগ পরিবহনে করে স্ত্রী ও শ্যালিকাকে নিয়ে ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছিলেন। ঘাট এলাকায় কথা হলে তিনি বলেন, ‘রাত দুইটায় ঘাটে আসছি। সাত ঘণ্টা শীতের মইধ্যে ঘাটে আটকা আছি। ঘন কুয়াশার কারণে ইতিমধ্যে ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বাধ্য হয়ে বাসের মধ্যেই সারা রাত কাটাইছি। খাবার ও শৌচাগার সমস্যায় স্ত্রী ও শ্যালিকাকে নিয়ে ভোগান্তি আরও বেশি।’

ভুক্তভোগী যাত্রীরা অভিযোগ করেন, ঘাট এলাকায় রাতের বেলা খাবার হোটেল খোলা থাকে না। এ ছাড়া ব্যবহারের উপযোগী কোনো শৌচাগারও নেই। প্রকৃতির কাজ সারতে নারী যাত্রীদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়।

ট্রাফিক পুলিশ ও ঘাটসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘ সময় ফেরি চলাচল ও পারাপার বন্ধ থাকায় ঘাট এলাকায় যানবাহনের তীব্র চাপ পড়েছে। আজ দুপুর ১২টা পর্যন্ত পাটুরিয়া প্রান্তে দুই শতাধিক যাত্রীবাহী বাস, শতাধিক ব্যক্তিগত গাড়ি এবং তিন শতাধিক পণ্যবাহী ট্রাক পাটুরিয়া প্রান্তে আটকা পড়েছে।

বিআইডব্লিউটিসির আরিচা কার্যালয়ের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) খন্দকার মুহম্মদ তানভীর হোসেন বলেন, ঘন কুয়াশার কারণে গতকাল রাত তিনটা থেকে আজ বেলা ১১টা পর্যন্ত আট ঘণ্টা ফেরি বন্ধ থাকায় পাটুরিয়া প্রান্তে যানবাহনের প্রচণ্ড চাপ পড়েছে। ফেরি চলাচল শুরু হলে যাত্রীদের দুর্ভোগের বিষয়টি বিবেচনা করে যাত্রীবাহী বাসগুলোকে আগে পারাপার করা হচ্ছে। দুপুরের পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসার সম্ভাবনা রয়েছে।