বন্ধ দোকানটি চালু হলো সেই শিক্ষার্থীদের সহায়তায়

চা-পাতি, বিস্কুট, কেক মিলিয়ে ২৮ ধরনের পণ্য কিনে দিয়ে দোকান সাজিয়ে দিয়েছে শিক্ষার্থীরাপ্রথম আলো

পাবনার বেড়া পৌর এলাকার দক্ষিণপাড়া মহল্লায় ছোট চায়ের দোকান চালান আসলাম আলী (৫২)। করোনা পরিস্থিতির কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল দোকানটি। এর মধ্যেই বড় মেয়েটির ক্যানসার ধরা পড়ে। মেয়েটি ঢাকায় চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্সি (সিএ) পড়তেন। মেয়ের চিকিৎসার পেছনে সর্বস্ব খুইয়েও তাঁকে বাঁচাতে পারেননি আসলাম আলী। ১৭ সেপ্টেম্বর মারা যান মেয়েটি। এ অবস্থায় কোনো পুঁজি না থাকায় দোকানটিও খুলতে পারছিলেন না তিনি।

এমন পরিস্থিতিতে তাঁর পাশে এসে দাঁড়িয়েছে টিফিনের টাকায় গড়ে ওঠা ‘শিক্ষার্থী সহযোগিতা সংগঠন’ নামে একটি সংগঠন। সংগঠনের পক্ষ থেকে আজ সোমবার আসলাম আলীর দোকানটি চায়ের কাপ-পিরিচ থেকে শুরু করে নানা রকম খাদ্যসামগ্রী দিয়ে সাজিয়ে দেওয়া হয়েছে। এরপর থেকে দোকানটিতে পুরোদমে বেচাকেনা চলছে।

আসলামের (ডানে) দোকান সাজিয়ে দিচ্ছেন শিক্ষার্থীরা
প্রথম আলো

শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বছর পাঁচেক আগে ঐতিহ্যবাহী বেড়া বিপিন বিহারী সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির কয়েকজন শিক্ষার্থী টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে গঠন করে শিক্ষার্থী সহযোগিতা সংগঠন নামে সংগঠন। শুরুর দিকে তারা দরিদ্র শিক্ষার্থীদের শিক্ষাসংক্রান্ত সহায়তাসহ দুস্থদেরও নানাভাবে সহায়তা করেছে।

যেখানেই তারা মানুষের অসহায়ত্বের খবর পেয়েছে, সেখানেই পৌঁছে গেছে। দুস্থদের মধ্যে খাদ্যসামগ্রী, চিকিৎসাসামগ্রী, শীতবস্ত্র প্রভৃতি বিতরণ করেছে। তাদের কর্মকাণ্ডে খুশি হয়ে অনেক সচ্ছল ও ধনী ব্যক্তি সংগঠনের তহবিলে অর্থসহ বিভিন্ন রকম সামগ্রী দান করছেন। বর্তমানে সংগঠনটির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বেড়া উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শতাধিক শিক্ষার্থী।

রবিউল, রাকিব, মাকসুদা, মাহবুবা, আনিস, মিলন, রোহান, সৌরভ, রাতুল, সুলতানাসহ ২০–২৫ জন শিক্ষার্থী আজ আসলামের দোকানটি সাজিয়ে দেয়। তারা জানায়, আসলাম আলী বড় মেয়ে আয়েশা খাতুনের ক্যানসার চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করতে পারছিলেন না। এ খবর পেয়ে সংগঠনের শিক্ষার্থীরা আয়েশার চিকিৎসার জন্য তহবিল সংগ্রহ শুরু করে।

নিজেদের মধ্য থেকে চাঁদা ওঠানোর পাশাপাশি হৃদয়বান কিছু মানুষের কাছ থেকে পাওয়া সহায়তা মিলিয়ে তারা বেশ ভালোই অর্থ সংগ্রহ করে। কিন্তু সহায়তা দেওয়ার আগেই ১৭ সেপ্টেম্বর আয়েশা মারা যান। টাকার অভাবে আসলাম আলীর দোকান বন্ধ হয়ে যাওয়ার খবর পেয়ে তারা আয়েশার চিকিৎসার জন্য সংগৃহীত অর্থের সঙ্গে আরও কিছু যোগ করে তাঁর বাবার দোকানটি বিভিন্ন পণ্যে সাজিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।

সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি মেহরাব হোসেন বলে, ‘আসলাম আঙ্কেলের দোকানে আমরা চা-পাতি, বিস্কুট, কেক মিলিয়ে ২৮ ধরনের পণ্য কিনে দিয়েছি। এর আগেও আমরা অনেক অসহায় মানুষকে সহায়তা করেছি। কিন্তু এবার একজন অসহায় ও সন্তানহারা পিতার জন্য সহায়তা করতে পেরে আমরা সবাই খুব আনন্দিত।’

আসলাম আলী বলেন, ‘শুনেছি টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে এ ছেলেমেয়েরা মানুষের সেবা করে যাচ্ছে। তারা সহায়তা না করলে আপাতত হয়তো আমার দোকান খোলাই হতো না। তারা আমার মতো অসহায় মানুষের পাশে এভাবে সারা জীবন যেন দাঁড়াতে পারে, সেই দোয়া করি।’