বন্ধুসভার সহযোগিতায় কলেজে ভর্তি হলো মোর্শেদা

মোর্শদার হাতে প্রবাসীর দেওয়া সহয়তা তুলে দেন রাজবাড়ী বন্ধুসভার সদস্যরা
প্রথম আলো

তিন বোনের মধ্যে মোর্শেদা খাতুন দ্বিতীয়। বড় বোন শারীরিক প্রতিবন্ধী। আর ছোট বোন শিশু শ্রেণিতে পড়ে। বাবা শ্রমিকের কাজ করেন। বড় মেয়ের ওষুধপত্র জোগাড় করার পর কোনোভাবে সংসার চলে। করোনাকাল শুরু হওয়ার পর থেকে আর্থিক অবস্থা আরও নাজুক হয়েছে। দুই বেলা খাবার জোগাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে পরিবারটিকে। সেখানে এবার এসএসসি পাস করা মোর্শেদার কলেজে ভর্তির টাকা জোগাড় করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।

মেয়ে উত্তীর্ণ হওয়ার পর থেকেই ভর্তি ও পড়ালেখা নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েন মা শিরিনা খাতুন। বিভিন্নজনের কাছে সহায়তার জন্য ঘুরতে থাকেন। কিন্তু প্রত্যাশিত সহযোগিতা পাননি। না পেয়ে পড়ালেখা বন্ধ করে দিতে চান। এ অবস্থায় ভর্তির সহায়তার জন্য রাজবাড়ী বন্ধুসভার উদ্যোগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সহায়তার আবেদন জানানো হয়। বিষয়টি নজরে আসে ফ্রান্সপ্রবাসী আশরাফুল ইসলামের। তিনি পেশায় ব্যবসায়ী। সমাজসেবক। তিনি ভর্তি ও বই কেনার দায়িত্ব নেন। পাঁচ হাজার টাকা পাঠিয়ে দেন।

আজ সোমবার দুপুরে প্রথম আলো রাজবাড়ী শহরে বন্ধুসভার সভাপতি ও রাজবাড়ী সরকারি আদর্শ মহিলা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মো. নুরুজ্জামান মোর্শেদার হাতে পাঁচ হাজার টাকা তুলে দেন। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে শিক্ষার্থীর মা শিরিনা খাতুন, জেলা ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি আবদুল হালিম, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুল জব্বার, প্রথম আলো বন্ধুসভার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শরীফুল ইসলাম, রিদয় খান, বন্ধুসভার সাবেক সাধারণ সম্পাদক নাহিদুল ইসলাম, বন্ধু শেখ ফয়সাল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

টাকা পাওয়ার পর আজ দুপুরে মোর্শেদা রাজবাড়ী সরকারি আদর্শ মহিলা কলেজে ভর্তি হয়েছে।

মোর্শেদার মা শিরিনা খাতুন বলেন, ‘ভর্তি নিয়ে খুব দুশ্চিন্তায় ছিলাম। আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম। একে তো বেঁচে থাকাই দায়। তার ওপর মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা। উপায় না দেখে পড়ালেখা বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। কিন্তু বরাবরের মতো বন্ধুসভা আমাকে হতাশ করে নাই। মেয়ের ভর্তি ও বই কেনার চিন্তা দূর হয়েছে। আশরাফুল ইসলাম ও প্রথম আলোকে ধন্যবাদ।’

ফেসবুক মেসেঞ্জারে কথা হয় আশরাফুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আর্থিক কারণে একটি মেয়ে ভর্তি হতে পারবে না—এটা কেমন কথা। মেয়েটির বাবা অসচ্ছল। আবার করোনার কারণে অনেকের আয়রোজগার কমে গেছে। তাতে কী? মেয়েটিকে সহায়তা করতে পেরে ভালো লাগছে।’