বন্যার থাবায় সড়কের বারোটা

বিভিন্ন স্থানে বন্যার পানি নামতে শুরু করেছে। বন্যার ভয়াবহতার চিহ্ন নিয়ে বেরিয়ে আসছে সড়ক। এগুলোর ঢালাই উঠে গেছে। তৈরি হয়েছে বড় গর্ত।

বন্যার পানির তোড়ে ধসে গেছে সড়কের বিভিন্ন অংশ। এ অবস্থায় সড়কে চলতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে যানবাহনের চালক ও যাত্রীদের। গতকাল সুনামগঞ্জ-বিশ্বম্ভরপুর সড়কেছবি: প্রথম আলো

সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার আবদুজ জহুর সেতুর সংযোগ সড়ক থেকে বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার চালবন্দ পর্যন্ত সুনামগঞ্জ-বিশ্বম্ভরপুর সড়ক। বন্যায় সড়কটি ভেঙেচুরে যেন কঙ্কাল হয়ে গেছে। পিচ, ঢালাই উঠে গেছে। স্থানে স্থানে বড় বড় গর্ত। দেখে মনে হয় এবারের বন্যার চিহ্ন পুরোপুরিভাবে থেকে গেছে সড়কটিতে।

শুধু এই একটি সড়ক নয়, বন্যায় সুনামগঞ্জের বেশির ভাগ সড়কই কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখন পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে সড়কে ভেসে উঠছে বন্যার ক্ষত। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অসংখ্য সেতু ও কালভার্ট।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) সুনামগঞ্জ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, তাদের অধীনে সড়ক আছে ৪ হাজার ৫৭১ কিলোমিটার। এখন পর্যন্ত যে হিসাব সংস্থাটি পেয়েছে, সে অনুযায়ী বন্যায় ১২টি উপজেলায় প্রায় দুই হাজার কিলোমিটার সড়কের ক্ষতি হয়েছে। সেতু ও কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১৩০টি। টাকার অঙ্কে এই ক্ষতির পরিমাণ ১ হাজার ৫০০ কোটি।

এখনো বিভিন্ন উপজেলায় বন্যার পানি আছে। বিশেষ করে জগন্নাথপুর, তাহিরপুর, শান্তিগঞ্জ ও জামালগঞ্জ উপজেলায় অসংখ্য সড়ক পানির নিচে। এলজিইডি সূত্র জানিয়েছে, ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে। পানি পুরোপুরি নেমে যাওয়ার পরই ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণাঙ্গ হিসাব পাওয়া যাবে। গত মাসের বন্যায় জেলায় এলজিইডির সড়কের ক্ষতি হয়েছিল ২৭২ কিলোমিটার।

সুনামগঞ্জ সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সংস্থাটির অধীনে সড়ক আছে ২২৩ কিলোমিটার। এর মধ্যে ১৮৪ কিলোমিটার সড়কের ক্ষতি হয়েছে। ২৫টি সেতুর ক্ষতি হয়েছে। এসব ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও আরও বাড়বে।

এদিকে বন্যায় ব্যাপকভাবে সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এখনো সুনামগঞ্জ-দোয়ারাবাজার, সুনামগঞ্জ-তাহিরপুর ও সুনামগঞ্জ-জামালগঞ্জ সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়নি।

স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সুনামগঞ্জ-বিশ্বম্ভরপুর-তাহিরপুর, সুনামগঞ্জ-জামালগঞ্জ, সুনামগঞ্জ-দোয়ারাবাজার, সুনামগঞ্জ-জগন্নাথপুর, সুনামগঞ্জ-দিরাই সড়ক বেহাল। এরপর আছে বিভিন্ন উপজেলার ইউনিয়ন ও গ্রামীণ সড়ক। সুনামগঞ্জে এবার বন্যায় শুধু উপজেলা, ইউনিয়ন কিংবা গ্রামীণ সড়কই নয়, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কও। এই সড়কের বিভিন্ন স্থান প্লাবিত হওয়ায় সুনামগঞ্জ টানা চার দিন বিচ্ছিন্ন ছিল সারা দেশ থেকে। শান্তিগঞ্জ উপজেলার সদরপুর এলাকায় এই সড়কের একটি সেতুর সংযোগ সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। যেকোনো সময় সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়ক বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে।

বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার সলুকাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান নূরে আলম বলেন, সব সড়কই ভেঙেচুরে একাকার হয়ে গেছে। এবারের বন্যায় পানির উচ্চতা যেমন বেশি ছিল, তেমনি পানিতে স্রোতও ছিল বেশি। এ কারণে ক্ষতিও বেশি হয়েছে। এসব সড়ক দ্রুত সংস্কার করা না হলে মানুষের ভোগান্তি আরও বাড়বে।

সদর উপজেলার নিধিরচর গ্রামের বাসিন্দা শাহ নূর জানান, সুনামগঞ্জ-জামালগঞ্জ সড়কের বেশির ভাগ অংশই ভেঙে গেছে। কয়েকটি কালভার্টের সংযোগ সড়কের মাটি ধসে যাওয়ায় যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে।

সুনামগঞ্জ-দোয়ারাবাজার সড়কের দোহালিয়া ইউনিয়নের রামপুর এলাকায় একটি সেতু ভেঙে যাওয়ায় ওই সড়ক দিয়ে সরাসরি যান চলাচল বন্ধ আছে। সুনামগঞ্জ-দোয়ারাবাজার সড়কেরও ক্ষতি হয়েছে। ছাতক উপজেলার ছাতক-গোবিন্দগঞ্জ সড়কের হাসনাবাদ, কালারুকা এলাকায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান করুনা সিন্ধু চৌধুরী জানান, তাঁর উপজেলার তাহিরপুর-সুনামগঞ্জ সড়ক, তাহিরপুর-বাদাঘাট সড়ক, সীমান্ত এলাকার বড়ছড়া-চারাগাঁও সড়কের ক্ষতি হয়েছে।

সুনামগঞ্জ-৪ আসনের (সুনামগঞ্জ সদর ও বিশ্বম্ভরপুর) সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমান বলেন, সুনামগঞ্জ-বিশ্বম্ভরপুর সড়ক দ্রুত সংস্কারের জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কারণ, এই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন দুটি উপজেলার মানুষের পাশাপাশি পর্যটকেরা টাঙ্গুয়ার হাওরে যাতায়াত করেন। তাই এটি আগে সংস্কার করতে হবে।

সুনামগঞ্জ সওজ বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মাহমুদুল হাসান বলেন, এরই মধ্যে কিছু কিছু স্থানে জরুরি সংস্কারকাজ শুরু করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সব সড়কেরই কাজ হবে। আর সুনামগঞ্জ এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুব আলম বলেন, এখনো কয়েকটি উপজেলায় পানি আছে। পানি নেমে গেলে সড়ক সংস্কারের কাজ শুরু করা হবে।