বন্যার পর জমিতে কচুরিপানা, শর্ষের আবাদ ব্যাহত

টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে খেত থেকে কচুরিপানা সরানো হচ্ছে। কচুরিপানার জন্য ফসলের আবাদ করা যাচ্ছে না। শনিবার উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের থলপাড়া গ্রামে।
ছবি : প্রথম আলো।


টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলায় দীর্ঘস্থায়ী বন্যার পর জমিতে এবার কচুরিপানার বিস্তার ঘটেছে। এতে চাষিদের ফসলের আবাদ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বিশেষ করে শর্ষের আবাদ কম হতে পারে বলে চাষিদের আশঙ্কা। কারণ, নভেম্বরের মাঝামাঝি সময় শর্ষের রোপণ শেষ করতে হয়।

উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে প্রায় ৮ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে শর্ষের আবাদের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। কিন্তু দীর্ঘস্থায়ী বন্যায় এ বছর উপজেলার কৃষিজমি থেকে দেরিতে পানি সরছে। পাশাপাশি যেসব জমি থেকে পানি সরেছে, সেখানে প্রচুর পরিমাণে কচুরিপানা রয়েছে। ফলে জমি থেকে কচুরিপানা ও আগাছা পরিষ্কার করে চাষিরা এখনো জমি চাষের উপযোগী করতে পারেননি। এতে ভরা মৌসুমেও মির্জাপুরে শর্ষের আবাদ শুরু হয়নি।

শনিবার সরেজমিন উপজেলার ফতেপুর, ভাতগ্রাম ও ভাওড়া ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে দেখা গেছে, চাষিরা শর্ষে আবাদের উপযোগী করতে খেত থেকে কচুরিপানা অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন। পাশাপাশি আগাছাও পরিষ্কার করছেন। পরিবারের সবাই মাঠে নেমে পড়েছেন। অনেকে শ্রমিক দিয়ে কাজ করাচ্ছেন।

ফতেপুর ইউনিয়নের থলপাড়া গ্রামের কায়েস খান বলেন, ‘দীর্ঘ বন্যায় কস্তুরিপানা (কচুরিপানা) আইসা আমার ৩০ শতাংশ জমিতে ভইর‌্যা যায়। অহন দুদিন ধইর‌্যা জনপ্রতি ৩৫০ টাকা কইর‌্যা চারজন কামলা (শ্রমিক) নিয়্যা খ্যাত পরিষ্কার করতাছি। এইবার অহনও সরষা আবাদ করা পারলাম না। কস্তুরিপানার জন্য কামলা নিয়াতে বাড়তি টাকা যাইতাছে। না জানি এইবার কেমন আবাদ অয়।’

শ্রমিকের কাজ করা ফতেপুর গ্রামের বাদ্যকরপাড়া এলাকার নয়নতারা বাদ্যকর বলেন, করোনায় তাঁদের হাতে কোনো কাজ নেই। অথচ বাড়িতে মেয়ে আছে, নাতি আছে। কোনোমতে দিন কাটাচ্ছেন। কচুরিপানা পরিষ্কার করা মোটামুটি কম শক্তির কাজ। তাই এখন চার–পাঁচ দিন ধরে কামলা খাটছেন।

শ্রমিক নিমাই বাদ্যকরের স্ত্রী লক্ষ্মী রানী বাদ্যকর বলেন, ‘এইব্যার খ্যাতে ম্যালা টাগাই (কচুরিপানা) অইছে। ত্যাই স্বামীর লগে কাম করতাছি। পরাই এক সপ্তাহ ধইর‌্যা ম্যালা খ্যাতে কাম করতাছি। তা–ও চকের টাগাই সরিয়া শ্যাষ করা পারতাছি না।’

ভাতগ্রাম ইউনিয়নের গোড়াইল গ্রামের লিয়াকত আলী বলেন, কচুরিপানার জন্য এবার জমিতে সময়মতো আবাদ করা কষ্টকর হয়ে পড়েছে। এবার লোকজন আগাম সবজিরও আবাদ করতে পারছেন না। কী হয়, তা নিয়ে সবাই চিন্তায় আছেন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ মশিউর রহমান বলেন, দীর্ঘস্থায়ী বন্যায় চাষিরা এ বছর আগাম সবজির আবাদ করতে পারেননি। এখনো অনেক জমিতে হাঁটুপানি। পাশাপাশি জমিতে কচুরিপানার কারণে চাষিরা শর্ষে আবাদের উপযোগী করতে পারছেন না। সাধারণত ১৫ নভেম্বরের মধ্যে শর্ষের আবাদ শেষ করতে হয়। কিন্তু এ বছর তা করা যাবে না। এতে শর্ষের আবাদের লক্ষ্যমাত্র অর্জন না হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।