বন্যায় টাঙ্গাইলে ১৪১ কোটি টাকার ফসলের ক্ষতি

বন্যার পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে সবজি খেত। সম্প্রতি টাঙ্গাইল পৌরসভার কাগমারা এলাকায়প্রথম আলো

টাঙ্গাইলে চলতি বন্যায় ১৮ হাজার ১২৬ হেক্টর ফসলি জমি নিমজ্জিত হয়েছে। এর মধ্যে ১৩ হাজার ৮৯২ হেক্টর জমির ফসলের ক্ষতি হয়েছে। এতে জেলার ১১টি উপজেলার ১ লাখ ৭ হাজার ৩৯১ জন কৃষকের ১৪১ কোটি ২৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। জেলার ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা এখনো সরকারি কোনো প্রণোদনা পাননি।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, টাঙ্গাইলের ১২টি উপজেলার মধ্যে ১১টি উপজেলায় বন্যার পানিতে বোনা আমন, রোপা আমন, বীজতলা, আউশ, সবজি, তিল, আখ, কলা ও লেবুর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ১০ হাজার ৫৮৮ হেক্টর বোনা আমন, ১ হাজার ৩৫৯ হেক্টর রোপা আমন, ১ হাজার ৮০৮ হেক্টর আউশ, ১ হাজার ৪৬৪ হেক্টর সবজি, ১ হাজার ৬৫২ হেক্টর তিল, ৬৫ হেক্টর আখ, ৪৫ হেক্টর কলা ও ৩৮০ হেক্টর জমির লেবু বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়।

সদর উপজেলায় ৩ হাজার ৮২৫ হেক্টরের ফসলি জমির মধ্যে ১ হাজার ৯০০ হেক্টর ফসলি জমি নিমজ্জিত হয়। এ ছাড়া বাসাইল উপজেলায় ১ হাজার ৯৪৯ হেক্টরের ফসলি জমির মধ্যে ১ হাজার ৫৫৬ হেক্টর, কালিহাতীতে ২ হাজার ৭৮৭ হেক্টরর ফসলি জমির মধ্যে ৫২৫ হেক্টর, ঘাটাইলে ২ হাজার ৮৫৯ হেক্টরের ফসলি জমির মধ্যে ৮১১ হেক্টর, নাগরপুরে ৫ হাজার ১৭ হেক্টর ফসলি জমির মধ্যে ১ হাজার ১৬৬ হেক্টর, মির্জাপুরে ৬ হাজার ৭৪৩ হেক্টর ফসলি জমির মধ্যে ২ হাজার ৮৬৪ হেক্টর, ভূঞাপুরে ৩ হাজার ৭৭৩ হেক্টর ফসলি জমির ১ হাজার ১৯০ হেক্টর, গোপালপুরে ১ হাজার ৪৯৯ হেক্টর ফসলি জমির মধ্যে ৬২৫ হেক্টর, সখীপুরে ২ হাজার ৫৮৮ হেক্টর ফসলি জমির মধ্যে ৬৬ হেক্টর, দেলদুয়ারে ৫ হাজার ১৯৩ হেক্টর ফসলি জমির মধ্যে ১ হাজার ২২৫ হেক্টর, ধনবাড়ীতে ৯০৮ হেক্টর ফসলি জমির মধ্যে ২৭০ হেক্টর নিমজ্জিত হয়েছে। শুধু মধুপুর উপজেলায় বন্যার পানি প্রবেশ না করায় ফসলের কোনো ক্ষতি হয়নি।

সাড়ে তিন বিঘা জমিতে শাকসবজি চাষ করেছিলাম। বন্যার পানিতে সব তলিয়ে গিয়ে প্রায় এক লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। বন্যায় ক্ষতি হলেও এ পর্যন্ত সরকারি কোনো প্রণোদনা পাইনি
রুস্তম মিয়া, বাসিন্দা, ডিগ্রী হুগড়া গ্রাম
বন্যার পানিতে ধান খেত ডুবে আছে। শুক্রবার কালিহাতী উপজেলার পাইকড়া ইউনিয়নের গোলড়া গ্রামে
প্রথম আলো

টাঙ্গাইল সদর উপজেলার কাকুয়া গ্রামের হাসমত আলী জানান, তিনি এবার ছয় বিঘা জমিতে ধান ও চার বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছিলেন। বন্যায় সব নষ্ট হয়ে তাঁর দেড় লক্ষাধিক টাকা ক্ষতি হয়েছে।
ডিগ্রী হুগড়া গ্রামের রুস্তম মিয়া বলেন, ‘সাড়ে তিন বিঘা জমিতে শাকসবজি চাষ করেছিলাম। বন্যার পানিতে সব তলিয়ে গিয়ে প্রায় এক লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। বন্যায় ক্ষতি হলেও এ পর্যন্ত সরকারি কোনো প্রণোদনা পা্ইনি।’

কৃষ্ণপুর গ্রামের আবদুল খালেক জানান, তিনি দুই বিঘা জমিতে আখের চাষ করেছিলেন। বন্যার পানিতে এক বিঘার আখ তলিয়ে প্রায় ৪০ হাজার টাকা ক্ষতি হয়েছে। তিনি বলেন, সরকারি সহযোগিতা না পেলে এ ক্ষতি পুষিয়ে ওঠা কঠিন হবে।

এ বিষয়ে টাঙ্গাইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আহ্সানুল বাশার জানান, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের অবশ্যই প্রণোদনা দেওয়া হবে। আটটি উপজেলায় ২০ একর জমিতে নাবি জাতের পাটের বীজতলা করা হবে। এ চারা বিনা মূল্যে কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করা হবে। ট্রেতে বীজতলা প্রস্তুত করা হবে। বন্যার পানি নেমে গেলে চার হাজার কৃষকের মধ্যে বিনা মূল্যে মাষকলাইয়ের বীজ ও সার বিতরণ করা হবে। কিছুদিন পর আট হাজার কৃষকের মধ্যে সবজির বীজ দেওয়া হবে। যেসব চাষি আমন চাষে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাঁদের বোরো বীজ ও সার দেওয়া হবে। ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের আগাম জাতের সরিষার বীজ ও সার দেওয়া হবে।