বন্যায় বাড়িঘর প্লাবিত, হুমকির মুখে বাঁধ

বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে বসতবাড়িতে। মঙ্গলবার সিংড়া উপজেলার বালুভরা এলাকায়
প্রথম আলো

রাজশাহীর বাগমারায় বন্যা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে। নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে লোকালয়ে ঢুকে পড়ছে। উপজেলার প্রায় ৬০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। কয়েকটি স্থানে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ রয়েছে হুমকির মুখে।

এদিকে আত্রাই ও বারনই নদের পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় নাটোরের সিংড়া ও নলডাঙ্গা উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন ও একটি পৌর এলাকায় পানি ঢুকে পড়েছে। এসব এলাকা তৃতীয় দফা বন্যার কবলে পড়েছে।

গত কয়েক দিনের প্রবল বর্ষণ ও উজান থেকে আসা ঢলের পানিতে বাগমারা উপজেলায় আবার বন্যা দেখা দিয়েছে। উপজেলার প্রায় ১৬টি ইউনিয়ন তৃতীয় দফায় বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বড়বিহানালী, ঝিকড়া, সোনাডাঙ্গা, গোবিন্দপাড়া ও দ্বীপপুর ইউনিয়ন। উপজেলার অন্যান্য ইউনিয়নও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বন্যায়। এসব এলাকার প্রায় ৬০ হাজার লোক পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। লোকজন নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য স্বজনদের বাড়িঘর ও প্রতিষ্ঠানের ভবনে আশ্রয় নিয়েছেন।

উপজেলার পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ফকিন্নি নদী ও বারনই নদের পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গতকাল মঙ্গলবার সকালে ফকিন্নি নদীর পানি ১৬ দশমিক ৮৩ সেন্টিমিটার (বিপৎসীমা ১৬ সেন্টিমিটার) উচ্চতায় প্রবাহিত হয়। অপর দিকে বারানই নদে ১৩ দশমিক ২৫ সেন্টিমিটার (বিপৎসীমা ১৩ সেন্টিমিটার) উচ্চতায় প্রবাহিত হয় বলে জানিয়েছেন রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাগমারার উপসহকারী প্রকৌশলী আমজাদ হোসেন।

তৃতীয় দফা বন্যায় একটি বাড়ির শোবার ঘরে ময়লা পানি ঢুকে পড়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে সিংড়ার বালুভরা এলাকায়
মুক্তার হোসেন
আমার একটি দিঘির সব মাছ পানিতে ভেসে গেছে। প্রায় ১৪ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
আলমগীর হোসেন, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা

গতকাল সকালে উপজেলার বিহানালী ও দ্বীপপুর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, লোকজন নৌকা ও ভেলায় করে চলাচল করছে। অনেকে গবাদিপশু নিয়ে উঁচু স্থানের সন্ধানে বের হয়েছেন। বেশ কয়েকজন বাড়িঘর রক্ষার জন্য চারপাশ দিয়ে মাটির বস্তা ফেলে সেগুলো রক্ষার চেষ্টা করছেন।

বড় বিহানালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আলমগীর হোসেন বলেন, ‘আমার একটি দিঘির সব মাছ পানিতে ভেসে গেছে। প্রায় ১৪ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।’

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নাটোর কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গতকাল সকাল আটটায় সিংড়া সেতু পয়েন্টে আত্রাই নদের পানি বিপৎসীমার ৯০ সেন্টিমিটার ও নলডাঙ্গা রেল সেতু পয়েন্টে বারনই নদের পানি ১১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এতে সিংড়ার পৌরসভাসহ সাতটি ইউনিয়ন ও নলডাঙ্গার দুটি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল তলিয়ে গেছে।

সিংড়া-বলিয়াবাড়ি-কলম সড়কের পাঁচ কিলোমিটার তলিয়ে গেছে। বলিয়াবাড়ি এলাকায় সড়কের কিছু অংশ ভেঙে যাওয়ায় গতকাল দুপুর থেকে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এ ছাড়া তাজপুর ইউনিয়নে তাজপুর উচ্চবিদ্যালয়ের পাশের সড়ক ভেঙে পানি বিদ্যালয়ের মাঠে ঢুকে পড়েছে। এদিকে নলডাঙ্গা উপজেলার মাধনগর ও ব্রহ্মপুর ইউনিয়নের শতাধিক বাড়িঘরে বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে।