বরগুনায় টেকসই বাঁধের জন্য হাহাকার

নদীতে বিলীন হওয়ার হাত থেকে রক্ষার জন্য বাঁধের ঢালে মাটির বস্তা ফেলে রাখা হয়েছে। তালতলী উপজেলার তেঁতুলবাড়িয়া এলাকা থেকে ছবিটি তোলা।
ছবি: মোহাম্মদ রফিক

বরগুনায় তিন নদীর ভাঙন ও উচ্চ জোয়ারের তোড়ে জেলার ৩০ কিলোমিটারজুড়ে বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ বিলীনের মুখে পড়েছে। বাঁধ সংস্কার না হওয়ায় প্রবল বর্ষণে ভাঙনকবলিত এলাকায় পানি ঢুকে পড়ে।

ভুক্তভোগীরা জানান, ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাব এবং পায়রা, বিষখালী ও বলেশ্বর নদের অব্যাহত ভাঙনে বাঁধগুলো খুব নাজুক অবস্থায়। প্রবল বর্ষণে তাঁরা পানিবন্দী হয়ে পড়েন। বর্ষা মৌসুম এলেই বাঁধ নির্মাণ শুরু হয়। এতে বাঁধ টেকসই হয় না। শুকনা মৌসুমে স্থায়ী টেকসই বাঁধ নির্মাণের আবেদন জানান তাঁরা।  

পানি উন্নয়ন বোর্ড, বরগুনা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলার ২২টি পোল্ডারে ৯০৫ কিলোমিটার বাঁধের মধ্যে ঘূর্ণিঝড় আম্পানে ২১ কিলোমিটার এবং সম্প্রতি অধিক উচ্চতার জোয়ারে প্রায় ৯ কিলোমিটার বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব বাঁধ সংস্কারের জন্য তিনটি প্রকল্পের মাধ্যমে অর্থ বরাদ্দ চেয়ে মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বরগুনা সদর উপজেলার ফুলঢলুয়া, ছোট বালিয়াতলী, আঙ্গারপাড়া, ডৌয়াতলা, জয়ালভাঙা, পাথরঘাটা উপজেলার কালমেঘা, ছোনবুনিয়া, তালতলী উপজেলার তেঁতুলবাড়িয়া এলাকার এক কিলোমিটার বাঁধ ভেঙে নদীতে বিলীনের মুখে রয়েছে।

সদর উপজেলার গুলিশাখালী গ্রামের বাসিন্দা খাইরুল আলম স্বপন বলেন, ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের সময় কর্তৃপক্ষের বাঁধ নির্মাণের টনক নড়ে। ঝড় থেমে গেলে তাদের আর খবর থাকে না। এ ছাড়া নিম্নমানের উপকরণ দিয়ে বাঁধ নির্মাণ করায় এসব বাঁধ দীর্ঘস্থায়ী হয় না।

পাথরঘাটা উপজেলার চরলাঠিমারা গ্রামের বাসিন্দা আবদুস সাত্তার খান বলেন, বেড়িবাঁধ ঠিক না করায় মানুষের দুঃখ-কষ্টের শেষ নেই। প্রতিদিন দুইবার জোয়ার শেষে পানিতে ভাসতে হয়। যত দ্রুত সম্ভব এলাকার ভাঙা বাঁধগুলো সংস্কার করা প্রয়োজন।

তালতলী উপজেলার জয়ালভাঙা এলাকার বাসিন্দা আকলিমা বেগম বলেন, ‘জরুরি ভিত্তিতে বাঁধের ভাঙা অংশ মেরামত করা প্রয়োজন। ভাঙা বাঁধ দিয়ে জোয়ারের পানি ঢুকে ঘরবাড়ি ও ফসল তলিয়ে যায়। এ ছাড়া কোনো সবজি চাষ করতে পারি না।’

তেঁতুলবাড়িয়া এলাকার বাসিন্দা শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘আমরা ভাঙা-গড়া নিয়ে বেঁচে আছি। ঘূর্ণিঝড় সিডরে এই এলাকার বাঁধ নদীতে বিলীনের পর থেকে এখন পর্যন্ত কোনো স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ হয়নি। প্রতিবছর ঝড়-জলোচ্ছ্বাসে আমাদের বাড়িঘর, ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। টেকসই ও দীর্ঘস্থায়ী বাঁধ নির্মাণ না করা হলে এই এলাকার ভাঙন রোধ করা যাবে না।’

পানি উন্নয়ন বোর্ড বরগুনা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী কাইছার আলম প্রথম আলোকে বলেন, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপ, বৃষ্টি ও অমাবস্যার প্রভাবে উপকূলের নদ-নদীতে অস্বাভাবিক জোয়ারের তোড়ে জেলার পাঁচটি উপজেলায় প্রায় ৯ কিলোমিটার বাঁধের ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়া ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে জেলার আরও ২১ কিলোমিটার বাঁধ নদীতে বিলীনের মুখে পড়েছে। এসব বাঁধের সংস্কার ও পুনর্নির্মাণের জন্য অর্থ বরাদ্দ চেয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘উপকূলের বাসিন্দাদের ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষার জন্য বাঁধের উচ্চতা বাড়ানো দরকার। আমরা এই বিষয়টি নিয়েও কাজ করছি।’

জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, ঘূর্ণিঝড় আম্পানে জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত ২১ কিলোমিটার বাঁধের সংস্কারকাজ চলমান। অধিক উচ্চতার জোয়ারের তোড়ে ক্ষতিগ্রস্ত ৯ কিলোমিটার বাঁধ দ্রুত সংস্কার করা হবে।