বরিশাল বিভাগে টিকার প্রথম চালান যাচ্ছে কাল, প্রথম ধাপে টিকা পাবেন ৩ লাখ ৪৮ হাজার জন

করোনার ভ্যাকসিন
প্রতীকী ছবি

বরিশাল বিভাগে করোনাভাইরাসের টিকা (ভ্যাকসিন) আসছে কাল শুক্রবার। আগামী ৭ কিংবা ৮ ফেব্রুয়ারি এই বিভাগে টিকা দেওয়ার কার্যক্রম শুরু হতে পারে। প্রাথমিকভাবে বিভাগে ৩ লাখ ৯৬ হাজার ডোজ টিকা আসছে বলে নিশ্চিত করেছেন বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, এসব টিকা সংরক্ষণের জন্য জেলা-উপজেলা পর্যায়ের স্বাস্থ্য বিভাগ আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। একই সঙ্গে টিকা দেওয়ার জন্য জেলা, উপজেলা ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলোতে টিকা দিতে কর্মীদের প্রশিক্ষণ শেষ হয়েছে। এখন তাঁরাই স্থানীয় পর্যায়ে স্বেচ্ছাসেবকদের প্রশিক্ষণ প্রদান করবেন। একই সঙ্গে টিকা দেওয়ার জন্য হাসপাতালের বুথ স্থাপন করে সেগুলো প্রস্তুত করা হয়েছে।

বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, বরিশাল বিভাগের ৬ জেলায় প্রাথমিকভাবে ৩৩ কার্টন টিকা আসছে। এতে ৩ লাখ ৯৬ হাজার ডোজ টিকা থাকবে। এর মধ্যে প্রাথমিকভাবে ২৯ কার্টন বা ৩ লাখ ৪৮ হাজার ডোজ ৬ জেলায় প্রয়োগ করা হবে। বাকি ৪ কার্টন বা ৪৮ হাজার ডোজ জরুরি প্রয়োজনে সংরক্ষণ করা হবে।

বরিশাল জেলায় ১ লাখ ৬৮ হাজার ব্যক্তি, পিরোজপুরে ৩৬ হাজার ব্যক্তি, ঝালকাঠিতে ১২ হাজার ব্যক্তি, ভোলায় ৬০ হাজার ব্যক্তি, পটুয়াখালীতে ৪৮ হাজার এবং বরগুনায় ২৪ হাজার ব্যক্তি প্রথম ধাপে টিকা পাবেন।

সূত্র জানায়, প্রতি কার্টনে ১ হাজার ২০০ ভায়েল (শিশি) টিকা রয়েছে। প্রতি ভায়েলে রয়েছে ১০টি ডোজ। প্রাথমিক পর্যায়ে যে ২৯ কার্টন টিকা সরবরাহ করা হবে তার মধ্যে বরিশালে ১৪ কার্টন, পিরোজপুরে ৩ কার্টন, ঝালকাঠিতে ১ কার্টন, ভোলায় ৫ কার্টন, পটুয়াখালীতে ৪ কার্টন এবং বরগুনা জেলায় ২ কার্টন টিকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এ দিয়ে বরিশাল জেলায় ১ লাখ ৬৮ হাজার ব্যক্তি, পিরোজপুরে ৩৬ হাজার ব্যক্তি, ঝালকাঠিতে ১২ হাজার ব্যক্তি, ভোলায় ৬০ হাজার ব্যক্তি, পটুয়াখালীতে ৪৮ হাজার এবং বরগুনায় ২৪ হাজার ব্যক্তি প্রথম ধাপে টিকা পাবেন।

প্রথম ধাপে ১৫টি শ্রেণির (ক্যাটাগরি) ব্যক্তিরা এই টিকা পাওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, করোনার টিকা সংরক্ষণ, ব্যবস্থাপনা, টিকা পাবেন এমন ব্যক্তিদের তালিকা প্রণয়নসহ যাবতীয় কার্যক্রম গুছিয়ে এনেছে তারা। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে টিকা ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করে এসব কার্যক্রম চূড়ান্ত করেছে। জেলা পর্যায়ে জেলা প্রশাসক এবং উপজেলা পর্যায়ে ইউএনওদের প্রধান করে এই কমিটি গঠন করা হয়েছে। স্থানীয় সাংসদদের কমিটিতে উপদেষ্টা করা হয়েছে।

প্রথম ধাপে ১৫টি শ্রেণির (ক্যাটাগরি) ব্যক্তিরা এই টিকা পাওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন। এর মধ্যে রয়েছে কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবিলায় নিয়োজিত সরকারি-বেসরকারি সব চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মী, ৭৬ বছরের ঊর্ধ্বে বয়োজ্যেষ্ঠ জনগোষ্ঠী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য, বিচার বিভাগ, মন্ত্রণালয়, সচিবালয়, জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তা, গণমাধ্যমকর্মী, সব নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, শিক্ষাকর্মী, ব্যাংক-বিমার কর্মীরা, বীর মুক্তিযোদ্ধা, সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস ও অগ্নিনির্বাপককর্মী, এনজিওকর্মী, দাফন ও সৎকারকর্মী, সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ কাজে যুক্ত ব্যক্তিরা।

প্রথম ধাপে জেলা, উপজেলা ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলোতে এই টিকা প্রয়োগ করা হবে। এ জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দুটি, জেলা হাসপাতালে চারটি এবং মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলোতে আটটি করে বুথ স্থাপন করা হবে। প্রতিটি বুথে ছয়জন প্রশিক্ষিত ব্যক্তি এই টিকা প্রয়োগের দায়িত্ব পালন করবেন। এর মধ্যে দুজন প্রশিক্ষিত টিকাকর্মী এবং চারজন স্বেচ্ছাসেবক থাকবেন। তাঁদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।

টিকা দেওয়ার জন্য দক্ষ টিকাকর্মীদের এরই মধ্যে ঢাকায় নিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এখন তাঁরা স্বেচ্ছাসেবকদের প্রশিক্ষণ দেবেন।
শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল, সহকারী পরিচালক, বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর

প্রথম ধাপে টিকা প্রয়োগের পর নেতিবাচক কোনো শারীরিক প্রতিক্রিয়া না হলে এই কার্যক্রম ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সম্প্রসারণ করা হবে। স্বাস্থ্য বিভাগের সূত্র জানায়, বিভাগের ছয় জেলায় সিভিল সার্জন কার্যালয়ে ২ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় টিকা সংরক্ষণের সক্ষমতা রয়েছে। এ জন্য এসব সংরক্ষণাগারে স্টিলের শেলফ স্থাপন করা হয়েছে। একই সঙ্গে আইস লাইনড রেফ্রিজারেটর (আইএলআর) বা হিমায়িত বাক্সের মধ্যে টিকা সংরক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে।

জানতে চাইলে বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল আজ বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, বিভাগের সব জেলা-উপজেলায় একই পদ্ধতিতে করোনার টিকা সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীদের টিকা প্রয়োগের অভিজ্ঞতা আছে। টিকা দেওয়ার জন্য দক্ষ টিকাকর্মীদের এরই মধ্যে ঢাকায় নিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এখন তাঁরা স্বেচ্ছাসেবকদের প্রশিক্ষণ দেবেন।

শ্যামল কৃষ্ণ আরও বলেন, ‘কাল শুক্রবার টিকার প্রথম চালান বরিশালে পৌঁছাবে। আমরা প্রথম ধাপে ৩ লাখ ৯৬ হাজার ডোজ টিকা পাচ্ছি। এর মধ্যে ৪৮ হাজার ডোজ জরুরি প্রয়োজনে সংরক্ষণ করা হবে। বাকি ৩ লাখ ৪৮ হাজার ডোজ ছয় জেলায় সরবরাহ করা হবে।’