বরিশাল বিভাগে নিবন্ধন করেও ১ লাখ ১৬ হাজারের বেশি মানুষ করোনা ‍টিকা নেননি

করোনার টিকা গ্রহণ
ফাইল ছবি

বরিশাল বিভাগে করোনাভাইরাসের টিকা নেওয়ার জন্য নিবন্ধন করেও ১ লাখ ১৬ হাজারের বেশি মানুষ প্রথম ডোজের টিকা নেননি। একই সঙ্গে দ্বিতীয় ডোজের টিকা নেওয়ার ক্ষেত্রেও ধীরগতি লক্ষ করা যাচ্ছে। টিকা গ্রহণে এই অনাগ্রহ কেন, তা সম্পর্কে স্বাস্থ্য বিভাগের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরাও সঠিক ধারণা পাচ্ছেন না।

বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্র জানায়, গত জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে বরিশাল বিভাগে কোভিশিল্ডের টিকা এসেছে ৩ লাখ ৪৮ হাজার ১০ ডোজ। এর মধ্যে বরিশাল জেলায় ১ লাখ ৬৮ হাজার ১০ ডোজ, ঝালকাঠিতে ১২ হাজার ডোজ, পিরোজপুরে ৩৬ হাজার ডোজ, পটুয়াখালীতে ৪৮ হাজার ডোজ, বরগুনায় ২৪ হাজার ডোজ ও ভোলায় ৬০ হাজার ডোজ টিকা যায়। এসব টিকা আইস-লাইনড রেফ্রিজারেটর (আইএলআর) বা হিমায়িত বাক্সে সংরক্ষণ করা হয়।

সূত্র জানায়, বরিশাল বিভাগের ৬ জেলায় প্রথম ডোজ নেওয়ার জন্য অনলাইনে আবেদন করেছিলেন ৩ লাখ ৫৫ হাজার ৪০০ জন। এর মধ্যে গত ২ মাস ৪ দিনে টিকা নিয়েছেন ২ লাখ ৩৩ হাজার ২৬০ জন। বাকি ১ লাখ ১৬ হাজার ৬১৭ জন আবেদন করেও টিকা নেননি।

বরিশাল বিভাগের টিকার প্রথম ডোজ নেওয়ার জন্য অনলাইনে আবেদন করেছিলেন ৩ লাখ ৫৫ হাজার ৪০০ জন। এর মধ্যে গত ২ মাস ৪ দিনে টিকা নিয়েছেন ২ লাখ ৩৩ হাজার ২৬০ জন। বাকি ১ লাখ ১৬ হাজার ৬১৭ জন আবেদন করেও টিকা নেননি।

গত ৭ ফেব্রুয়ারি সারা দেশের মতো বরিশালেও করোনা টিকার প্রথম ডোজ প্রয়োগ শুরু হয়। শুরুতে টিকা নেওয়ার ক্ষেত্রে বেশ গতি ছিল। ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ৭ মার্চ—এই এক মাসে বরিশাল বিভাগে ১ লাখ ৭২ হাজার ১১৯ জন টিকা নিয়েছিলেন। এর মধ্যে বরিশাল জেলায় ৫৪ হাজার ৭৫৪ জন, ভোলায় ৩২ হাজার ৩৪৯, পটুয়াখালীতে ২৯ হাজার ৩৪২, পিরোজপুরে ২৬ হাজার ৯৭, বরগুনায় ১৬ হাজার ৪১১ ও সবচেয়ে কম ঝালকাঠি জেলায় ১৩ হাজার ১৯৬ জন টিকা নেন। এরপর ১ মাস ৪ দিনে বিভাগে টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছেন মাত্র ৬১ হাজার ১৪১ জন। সব মিলিয়ে এখনো ১ লাখ ১৬ হাজারের বেশি নিবন্ধনকৃত মানুষ টিকা নেননি।

অপর দিকে ৮ এপ্রিল থেকে বরিশাল বিভাগে টিকার দ্বিতীয় ডোজ প্রয়োগ শুরু হয়েছে। ওই দিন থেকে রোববার পর্যন্ত ৪ দিনে বিভাগে টিকার দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ৫ হাজার ৫২৩ জন। এর মধ্যে দ্বিতীয় ডোজের টিকা সবচেয়ে বেশি নিয়েছেন বরিশাল জেলায় ২ হাজার ১৩২ জন। এরপরেই আছে পটুয়াখালী। এ জেলায় দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ১ হাজার ২২১ জন। সবচেয়ে কম নিয়েছেন ঝালকাঠি জেলায় ৪৪৬ জন। বরগুনা জেলায় নিয়েছেন ৪৫৫ জন, ভোলায় ৫৯২ জন আর পিরোজপুরে ৬৮৭ জন।
দ্বিতীয় ডোজের টিকা নেওয়ার ক্ষেত্রে কিছু ব্যক্তি অবশ্য খুদে বার্তা না পাওয়ার অভিযোগ তুলেছেন। তাঁরা বলেছেন, নিবন্ধন করেও নির্দিষ্ট দিনে কেন্দ্রে গিয়ে তাঁরা দ্বিতীয় ডোজের টিকা নিতে পারেননি। এতে অনেকেই বিভ্রান্তিতে পড়েছেন।

গণমাধ্যমসহ স্বাস্থ্য বিভাগ, প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ বিভিন্ন পক্ষ থেকে টিকা নেওয়ার ব্যাপারে ব্যাপক প্রচার চালানো হয়েছে। তারপরও টিকা নিতে অনাগ্রহ, ভীতি কিংবা অসচেতনতা থাকার কথা নয়। এর পেছনে গোঁড়ামি ও কুসংস্কার কাজ করছে বলে মনে হচ্ছে। তবে অনেকে অসুস্থতার কারণেও টিকা নেননি। তবে যাঁরা নেননি, তাঁদের এখনো নেওয়ার সুযোগ আছে।
শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল, সহকারী পরিচালক, বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর

তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলেছেন, টিকার প্রথম ডোজ নিতে লোকজনকে অনুপ্রাণিত করতে শুরুতে খুদে বার্তা পাননি কিংবা নিবন্ধন করেননি, এমন অনেক ব্যক্তিকেও টিকা দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনলাইন সার্ভারের এন্ট্রিতে কিছু সমস্যা হয়েছে। তবে যিনি টিকা নিয়েছেন, তাঁকে ওই সময় একটি কার্ড দেওয়া হয়েছে। এখন খুদে বার্তা না পেলে ওই ব্যক্তি কার্ড নিয়ে সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রে গিয়ে কেন্দ্রপ্রধানের সঙ্গে কথা বললে তিনি এ বিষয়ে সমাধান দেবেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে এমন নির্দেশনা দেওয়া আছে। এদিকে কেন্দ্রের সংখ্যা কম বলে একসঙ্গে সবাইকে খুদে বার্তা পাঠানোর পর সবাই একসঙ্গে ভিড় করলে করোনা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে। তাই বর্তমানে খুদে বার্তা একটু সীমিত করে দেওয়া হচ্ছে। তবে এতে হতাশ হওয়ার কিছু নেই, সবাই টিকা পাবেন। কেন্দ্রের সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে।

নিবন্ধন করেও টিকা না নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল সোমবার দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরাও এর পেছনে কোনো যুক্তি দেখছি না। কারণ, গণমাধ্যমসহ স্বাস্থ্য বিভাগ, প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ বিভিন্ন পক্ষ থেকে টিকা নেওয়ার ব্যাপারে ব্যাপক প্রচার চালানো হয়েছে। তারপরও টিকা নিতে অনাগ্রহ, ভীতি কিংবা অসচেতনতা থাকার কথা নয়। এর পেছনে গোঁড়ামি ও কুসংস্কার কাজ করছে বলে মনে হচ্ছে। তবে অনেকে অসুস্থতার কারণেও টিকা নেননি। তবে যাঁরা নেননি, তাঁদের এখনো নেওয়ার সুযোগ আছে। আমরা বিভাগের সব জেলাতেই দ্বিতীয় ডোজের পাশাপাশি প্রথম ডোজের টিকা কার্যক্রমও চালু রেখেছি।’