বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়: আলটিমেটাম দিয়ে অবরোধ প্রত্যাহার করলেন শিক্ষার্থীরা

৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম শেষে শুক্রবার বিকেলে বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে।
ছবি: প্রথম আলো

তিন দফা দাবি বাস্তবায়নে শনিবার সকাল ১০টা পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়ে মহাসড়ক অবরোধ তুলে নিয়েছেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। আজ শুক্রবার সন্ধ্যা সোয়া সাতটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি আরিফ হোসেন, সাধারণ সম্পাদক খোরশেদ আলম ও প্রক্টর সুব্রত কুমার দাস শিক্ষার্থীদের আন্দোলনস্থলে আসেন। তাঁরা শিক্ষার্থীদের দাবি বাস্তবায়নে শনিবার সকাল ১০টা পর্যন্ত সময় নিয়েছেন। এরপর শিক্ষার্থীরা সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে তাঁদের মহাসড়ক অবরোধ স্থগিত করেন। শনিবার সকাল ১০টার মধ্যে দাবি আদায় না হলে পুনরায় মহাসড়ক অবরোধ করার ঘোষণা দিয়েছেন।
এর আগে শুক্রবার বিকেল পাঁচটার পর শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়ক আবার অবরোধ করে সেখানে বিক্ষোভ শুরু করেন। ফলে বরিশাল থেকে বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, কুয়াকাটাসহ দক্ষিণের জেলাগুলোর সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। সন্ধ্যার পর আন্দালনরত শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে মশাল নিয়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি দিয়েছেন। সন্ধ্যা পৌনে সাতটায় শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে মশাল মিছিল করেন। মিছিলটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে।

গত মঙ্গলবার রাতে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর পরিবহনশ্রমিকদের হামলার ঘটনা ঘটে। এরপর গত বুধবার সকাল থেকে ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধ করেন। সেখান থেকে তিন দফা দাবি জানানো হয়। দাবিগুলো হচ্ছে মঙ্গলবারের ঘটনায় দোষী ব্যক্তিদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার পদক্ষেপ গ্রহণ, এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে হামলায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে মামলা করা এবং অনাবাসিক সব শিক্ষার্থীর নিরাপত্তা বিধানে পদক্ষেপ নেওয়া।
পরে ওই দিন বিকেল পাঁচটায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও নগর পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে প্রশাসন শিক্ষার্থীদের ওই দাবি ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে মেনে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলে পরে অবরোধ প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। তবে শিক্ষার্থীরা তাঁদের অবস্থান কর্মসূচি অব্যাহত রাখেন।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানায়, শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী বৃহস্পতিবার দুপুরে মঙ্গলবারের ঘটনার জন্য বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানায় একটি মামলা করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মুহা. মুহসিন উদ্দীন বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। তবে ওই মামলায় কাউকে আসামি করা হয়নি। বৃহস্পতিবার বিকেলে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বিষয়টি জানতে পেরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. ছাদেকুল আরেফিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং দায়ের করা ওই মামলা প্রত্যাখ্যান করেন।
এরপর বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে আটটায় এক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি সুজয় শুভ বলেন, তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে ওই হামলায় নেতৃত্ব দেওয়া তিনজনের নাম দিয়েছেন। এ ছাড়া হামলায় আহত শিক্ষার্থীরাও বেশ কয়েকজনের নাম বলেছেন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মারধরের একটি সাধারণ মামলা করেছে কোনো আসামির নাম উল্লেখ না করেই। এটা অগ্রহণযোগ্য। এ সময় পুনরায় মামলা সংশোধন করে এবং আসামিদের নাম উল্লেখ করে মামলা করার দাবি জানান তাঁরা। অন্যথায় শুক্রবার বিকেল পাঁচটার পর পুনরায় সড়ক অবরোধ ও নতুন কর্মসূচি ঘোষণা দেওয়ার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।

এদিকে এ ঘটনায় শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। একই সঙ্গে অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তায়ও কোনো উদ্যোগ নেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ফলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে।
গত মঙ্গলবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীসহ দুই শিক্ষার্থীকে রূপাতলী বাসস্ট্যান্ডে বিআরটিসি বাসের এক শ্রমিক মারধর ও লাঞ্ছিত করেন। এর প্রতিবাদে রূপাতলী বাসস্ট্যান্ড-সংলগ্ন মহাসড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। পরে শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে রফিক নামের অভিযুক্ত বাসশ্রমিককে গ্রেপ্তার করতে বাধ্য হয় পুলিশ। এর জেরে পরিবহনশ্রমিকেরা মঙ্গলবার গভীর রাতে রূপাতলী হাউজিং এলাকায় মেসে বসবাসরত অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালান। পরিবহনশ্রমিকেরা ধারালো অস্ত্র ও লাঠিসোঁটা দিয়ে যাঁকে যেখানে পান, সেখানে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালান। প্রায় এক ঘণ্টা ধরে এ হামলার ঘটনা অব্যাহত থাকে।
রাত দুইটার দিকে অতিরিক্ত পুলিশ গিয়ে ঘটনা নিয়ন্ত্রণে আনে এবং আহত বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে উদ্ধার করে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করায়। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অ্যাম্বুলেন্স গিয়ে আরও কয়েকজন শিক্ষার্থীকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। আহত শিক্ষার্থীরা বর্তমানে ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।