বরিশাল সদর হাসপাতালে এখন থেকে পুরোদমে করোনার চিকিৎসা

বরিশাল জেলা সদর হাসপাতালে এখন থেকে পুরোদমে চলবে করোনা রোগীদের চিকিৎসা। ১০০ শয্যার এই প্রতিষ্ঠানকে করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল হিসেবে আনুষ্ঠানিক অনুমোদন দিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। মঙ্গলবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা-১ অধিশাখার উপসচিব মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এ অনুমোদনের কথা জানানো হয়। বুধবার এই চিঠি বরিশালে পৌঁছায়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, বিভাগে করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় হাসপাতালগুলোতে শয্যাসংকট চলছে এক মাসের বেশি সময় ধরে। এমন অবস্থায় গত জুলাইয়ের দ্বিতীয় সপ্তাহে বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সদর হাসপাতালকে করোনা ডেডিকেটেড করার প্রস্তাব দেয়। এরপর স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বিষয়টির অনুমোদন দিয়ে গত ১৯ জুলাই চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর মঙ্গলবার এ প্রস্তাবের চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়। অনুমোদনের চিঠিতে বলা হয়, বরিশাল অঞ্চলে কোভিড-১৯–এর সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী। কোভিড রোগীদের চিকিৎসার স্বার্থে জেলা সদর হাসপাতালকে পুরোপুরি কোভিড ডেডিকেটেড করতে প্রশাসনিক অনুমোদন দেওয়া হলো।

বরিশালের সিভিল সার্জন ও ওই হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মো. মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমরা এরই মধ্যে এই হাসপাতালকে করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে রূপান্তরের কার্যক্রম শুরু করেছি। এ হাসপাতালে কেন্দ্রীয় অক্সিজেন ব্যবস্থা রয়েছে। ৮০ রোগী এ সুবিধা পাবেন।’

বরিশাল বিভাগে করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয় গত মে মাসে। এরপর জুলাইয়ে সংক্রমণ চূড়ায় পৌঁছায়। একই সঙ্গে মৃত্যুহার অনেক বেড়েছে। জুলাইয়ে ভয়ংকর এক মাস পার করে বরিশাল বিভাগের মানুষ। বিভাগে মোট করোনা রোগীর ৩৯ দশমিক ৬৬ শতাংশ শনাক্ত হয়েছেন সদ্য শেষ হওয়া জুলাই মাসে। এ মাসে মারা যান ৪৪ দশমিক ১৩ শতাংশ রোগী।

স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যমতে, জুলাইয়ে বরিশাল বিভাগে ১৩ হাজার ১৪৮ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। করোনায় ও উপসর্গে মৃত্যু হয়েছে ৪০১ জনের। এর মধ্যে ১৫৮ জন করোনায় ও ২৪৩ জন করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা যান।

স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, ৩১ জুলাই বিভাগে করোনা শনাক্তের সংখ্যা ছিল ৩৩ হাজার ১৪৪। এর মধ্যে ৭৬ দশমিক ১৯ শতাংশ শনাক্ত হয়েছে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরুর পর মে থেকে জুলাই—এই তিন মাসে। এ সংখ্যা ২৫ হাজার ২৫৪।

স্বাস্থ্য বিভাগের ছয় জেলায় করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল আছে সাতটি। এতে শয্যাসংখ্যা ৬২০টি। বরিশাল জেলা সদর হাসপাতালটিকে করোনা ডেডিকেটেড করায় এই শয্যাসংখ্যা বেড়ে হবে সাত শতাধিক।

সংক্রমণ ও মৃত্যুর উল্লম্ফন আগস্টেও অব্যাহত আছে। সার্বিক অবস্থা নিয়ে উদ্বিগ্ন প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগ। পরিস্থিতি মোকাবিলায় কীভাবে সামর্থ্য আরও বাড়ানো যায়, তা নিয়ে মঙ্গলবার তারা জরুরি বৈঠক করেছে।

বৈঠকে বরিশাল নগরে নারী করোনা রোগীদের জন্য ২০ শয্যার একটি সংরক্ষিত ইউনিট এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে ১৮০টি নতুন শয্যা বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে পরিস্থিতি অনুযায়ী বরিশাল নগরের একটি বেসরকারি হাসপাতালকে করোনা ডেডিকেটেড করার প্রস্তুতি রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার এ সভা আহ্বান করেন। এতে বিভাগীয় স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র ও সহকারী পরিচালক শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল বুধবার রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘পরিস্থিতি মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি আমাদের আছে। চিকিৎসার জন্য সামর্থ্য, শয্যা বাড়ানোর ব্যাপারে প্রস্তুতি চলছে।’