বরিশালে করোনায় আক্রান্ত অনেকেরই উপসর্গ নেই
বরিশাল বিভাগে গত এক সপ্তাহে অন্তত ২৫ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। তাঁদের বেশির ভাগ অন্য এলাকা থেকে ফিরেছেন। অনেকে বলছেন, তাঁদের শরীরে করোনার উপসর্গ ছিল না। এখনো নেই। তাঁরা সুস্থ আছেন। কিন্তু নমুনা পরীক্ষা করে তাঁদের করোনা সংক্রমিত হওয়ার প্রমাণ মিলেছে।
উপসর্গ না থাকা অবস্থায় করোনা শনাক্ত হওয়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্বেগ বেড়েছে। তাঁরা বলছেন, এমনটা হলে বোঝার সাধ্য নেই কে আক্রান্ত, কে আক্রান্ত নয়। উপসর্গহীন ব্যক্তি সবার মাঝে ঘুরে বেড়ালেও কেউ সাবধান হতে পারবেন না। ফলে আরও অনেকের মধ্যে এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে।
জানতে চাইলে বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও করোনা পরীক্ষাগারের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক এ কে এম আকবর কবির বৃহস্পতিবার বলেন, বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, লক্ষণ প্রকাশ ছাড়াও কারও করোনা পজিটিভ হতে পারে। সবার মধ্যে উপসর্গ থাকবে, এমন নয়। ৫০ থেকে ৮০ ভাগ লোকের উপসর্গ থাকে না। তাঁরা কোনোরকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা কিংবা চিকিৎসা ছাড়াই শারীরিক প্রতিরোধ ক্ষমতা দিয়ে ভাইরাস প্রতিহত করে সুস্থ হয়ে ওঠেন। প্রাকৃতিকভাবে সুস্থ হওয়া এসব ব্যক্তির দ্বিতীয়বার সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে না। কিন্তু সমস্যা হলো, আক্রান্ত ব্যক্তিদের দ্বারা অন্যরা সংক্রমিত হতে পারেন। এ জন্য সবাইকে ঘরে অবস্থান করতে হবে। এটাই সবচেয়ে বড় চিকিৎসা।
গতকাল বুধবার পর্যন্ত বরিশাল বিভাগে করোনায় আক্রান্ত ১৪ জন রোগীর সঙ্গে কথা হয়। তাঁদের মধ্যে পিরোজপুর সদরের দুজন বলেন, তাঁদের একজন নারায়ণগঞ্জ ও অপরজন ঢাকার সাভারে পোশাক কারখানায় কাজ করতেন। তাঁরা চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে ফেরেন। শরীরে করোনার উপসর্গ ছিল না। তাই তাঁরা পরিবারের সঙ্গে বসবাস করছেন। ফেরার পর এলাকার লোকজন স্বাস্থ্য বিভাগে খবর দিলে পরীক্ষার জন্য তাঁদের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। গত মঙ্গলবার পাওয়া পরীক্ষার প্রতিবেদনে তাঁদের করোনা শনাক্ত হয়।
ঝালকাঠি সদর উপজেলার একটি গ্রামে ৮ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ থেকে ফেরে একটি পরিবার। তাঁদেরও করোনার উপসর্গ ছিল না। তাঁদের ছয় মাসের বাচ্চাসহ তিনজনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। গত সোমবার তিনজনেরই করোনা শনাক্তের প্রতিবেদন এসেছে।
সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জোবায়দুর হোসেন বলেন, ওই পরিবারের তিনজনই সুস্থ। পরিবারটিকে দেখাশোনার দায়িত্বে ছিলেন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) স্থানীয় সদস্য। বুধবার রাতে তাঁরও করোনা শনাক্ত হয়েছে।
একই ধরনের কথা বলেন নারায়ণগঞ্জ থেকে ফেরা বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জের এক শ্রমিক ও ঢাকা থেকে ফেরা হিজলা উপজেলার এক কলেজছাত্র। তাঁরা বলেন, বাইরে থেকে ফেরায় এলাকার লোকজন স্বাস্থ্য বিভাগে খবর দেন। নমুনা পরীক্ষায় তাঁদের করোনা ‘পজিটিভ’ এসেছে।
জানতে চাইলে বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল বলেন, করোনায় আক্রান্ত রোগীদের চারটি স্তরে ভাগ করা হয়েছে—স্বল্প, মাঝারি, তীব্র ও মারাত্মক তীব্র। স্বল্প আক্রান্তদের হাঁচি, কাশি থাকতে পারে। মাঝারি আক্রান্তদের নিউমোনিয়া থাকবে। তীব্রভাবে যাঁরা আক্রান্ত তাঁদের মারাত্মক নিউমোনিয়া ও জটিল রোগ থাকবে। মারাত্মক তীব্রভাবে আক্রান্তদের ‘মাল্টি অর্গান ফেইলিওর’ হবে। এ জন্য মারাত্মক তীব্রভাবে আক্রান্ত রোগীদের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) দরকার হয়। ৯৬ ভাগ রোগী এমনিতেই সুস্থ হয়ে যান। চার ভাগ রোগী গুরুতর হন। এর বাইরে ৫০ থেকে তারও বেশির ভাগ লোকের করোনার কোনো উপসর্গ থাকবে না।