বরিশালে কোরবানির পশুর চামড়া কিনতে পাইকারদের আগ্রহ নেই

বরিশালে কোরবানির পশুর চামড়া কিনতে তেমন আগ্রহ নেই ব্যবসায়ীদের। তেমনি মৌসুমি খুচরা ব্যবসায়ীরাও দাম কমে যাওয়ায় হতাশ। তাঁরা বিনা মূল্যে চামড়া সংগ্রহ করে নগরের পাইকারি মোকামে এনে যে দামে চামড়া বিক্রি করছেন, তাতে লাভ তো দূরে থাক, পরিবহন ব্যয় পর্যন্ত উঠছে না।

এবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় প্রক্রিয়াজাতকারী কাঁচা চামড়ার দাম ঢাকার বাইরে প্রতি বর্গফুট ৩৩ থেকে ৩৪ টাকা নির্ধারণ করেছে। কিন্তু সেই দামে বরিশালে চামড়া বিক্রি হচ্ছে না।

নগরের পাইকারি চামড়ার মোকাম পদ্মাবতী এলাকার ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঢাকার ট্যানারিগুলোতে তাঁদের আগের কয়েক বছরের চামড়া বিক্রির টাকা বকেয়া পড়ে আছে। এ ছাড়া দামও অনেক কম। এ অবস্থায় পুঁজিসংকট আর লোকসানের শঙ্কায় তাঁরা নগদ মূল্যে এবার চামড়া কিনতে পারছেন না। যাঁরা বাকিতে বিক্রি করতে রাজি হচ্ছেন, তাঁদের চামড়াই তাঁরা কিনছেন। সামান্য কিছু চামড়া নগদ মূল্যে কিনছেন।

ব্যবসায়ীরা আরও জানান, আগের বছরগুলোতে নগর এবং নগরের বাইরের অনেক এলাকা থেকে অসংখ্য খুচরা মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ী এখানে চামড়া নিয়ে আসতেন। কিন্তু এবার সেই সংখ্যাও অনেক কম। তাঁদের মতে, মূল্য না পাওয়ায় এবার অধিকাংশ মৌসুমি ব্যবসায়ী মাঠপর্যায়ে চামড়া সংগ্রহ করেননি। তবে বিভিন্ন মাদ্রাসা ও এতিমখানা থেকে চামড়া নিয়ে আসছেন পাইকারদের কাছে।

মৌসুমি ব্যবসায়ীরা বলছেন, চামড়া বলতে গেলে পানির দরে বিক্রি করতে হচ্ছে। এতে লাভ তো দূরে থাক, পরিবহন ব্যয়ও ওঠে না। এরপরও আবার বাকিতে বিক্রি করতে হয়। ফলে অনেকেই এবার চামড়া কিনতে আগ্রহ দেখাননি। বেশির ভাগ চামড়াই এলাকাভিত্তিক বিনা মূল্যে সংগ্রহ করছেন।

বরিশালের পদ্মাবতী এলাকার চামড়া ব্যবসায়ী শামিম উল্লাহ বলেন, ‘এবার চামড়া সংগ্রহের কোনো ইচ্ছাই ছিল না। তাই কোরবানির দিন বিকেল পর্যন্ত কোনো চামড়াই কিনিনি। পরে আগের খুচরা বিক্রেতাদের পিড়াপিড়িতে কিনতে বাধ্য হয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘ট্যানারি ব্যবসায়ীদের কাছে লাখ লাখ টাকা আটকে থাকায় এখন নিজের কাছে থাকা ও ধার করা সামান্য কিছু টাকা নিয়ে চামড়া কিনতে বসেছি। বলতে পারেন দীর্ঘদিনের ব্যবসার মায়ায় এটা করছি।’

সরকারনির্ধারিত মূল্যে তাঁরা যেমন চামড়া কিনতে পারছেন না, তেমনি সবাইকে নগদ টাকাও পরিশোধ করতে পারছেন না। বরিশালে সর্বোচ্চ ১৮ ফুটের ওপরে চামড়া পাওয়া যায় না, আর তা–ও খুব কম। তবে সব চামড়ার দরই আলোচনা করে ঠিক করে কিনতে হচ্ছে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সরকার নির্ধারিত মূল্যে কেনা যাচ্ছে না। পুঁজির স্বল্পতায় কিছু চামড়া বাকিতে, আবার নগদ অর্থে যা কিনছেন, তারও ২৫ শতাংশ বাকি রাখার শর্তে কিনছেন।

খুচরা বিক্রেতারা বলেন, একটি গরুর চামড়া সর্বোচ্চ ৪০০ টাকার বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে না। আর ছাগলের চামড়া তো বিনা মূল্যেও কেউ নিচ্ছে না।

পদ্মাবতীর ব্যবসায়ীরা বলেন, একটি চামড়া ৩০০ টাকায় কিনলে লবণ ও প্রক্রিয়াজাত করতে আরও ৩০০ টাকা খরচ হয়। এরপর পরিবহন খরচ দিয়ে মোকামে পাঠাতে আরও বেশ অর্থ খরচ হয়। এরপর পরিবহন খরচ দিয়ে ট্যানারিতে পাঠিয়ে সে অনুযায়ী মূল্য পাব, এমন নিশ্চয়তা নেই।

বরিশাল চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সহসাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দীন বলেন, একসময়ে বহু চামড়া ব্যবসায়ী বরিশালে থাকলেও ট্যানারির মালিকদের কাছে টাকা আটকে যাওয়ায় এবং ঋণগ্রস্ত হওয়ায় এখন তা কমে এসেছে। অনেকে ব্যবসার ধরনও পাল্টে অন্য ব্যবসায় চলে গেছেন।

‘পুরোনো ব্যবসা এ জন্য ধারদেনা করে এবারও চামড়া সংগ্রহ করছি, বাকিতে আর নগদ মিলিয়ে আমার সর্বোচ্চ ছয় হাজারটি চামড়া সংগ্রহ করার ইচ্ছা আছে। ঈদের আগে যদি ট্যানারিমালিকেরা পাওনা থেকে কিছু টাকাও পরিশোধ করত, তাহলে আমাদের এই দৈন্যদশা হতো না। দেশের চামড়াশিল্পকে বাঁচাতে হলে সরকারের উচিত এই খাতে গুরুত্বের সঙ্গে নজর দেওয়া।’