নাম দেখে রাজাকারের তালিকা পোড়ালেন মুক্তিযোদ্ধা

রাজাকারের তালিকায় নিজের নাম দেখে দুঃখ ভারাক্রান্ত হয়ে পড়েন মুক্তিযোদ্ধা আইনজীবী তপন কুমার চক্রবর্তী। ছবিটি আজ মঙ্গলবার বরিশাল নগরের সদর রোড থেকে তোলা। ছবি: সাইয়ান
রাজাকারের তালিকায় নিজের নাম দেখে দুঃখ ভারাক্রান্ত হয়ে পড়েন মুক্তিযোদ্ধা আইনজীবী তপন কুমার চক্রবর্তী। ছবিটি আজ মঙ্গলবার বরিশাল নগরের সদর রোড থেকে তোলা। ছবি: সাইয়ান

রাজাকারের তালিকায় মুক্তিযোদ্ধার নাম অন্তর্ভুক্ত করার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) বরিশাল জেলার নেতা-কর্মীরা। বাসদের বরিশাল জেলা সদস্যসচিব মনীষা চক্রবর্তীর বাবা মুক্তিযোদ্ধা আইনজীবী তপন চক্রবর্তী ও দাদি শহীদজায়া উষা চক্রবর্তীর নাম রাজাকার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এর প্রতিবাদে বরিশাল নগরে আজ মঙ্গলবার দুপুরে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ হয়।

সমাবেশ শেষে সদ্য প্রকাশিত রাজাকারের তালিকায় অগ্নিসংযোগ করেন মুক্তিযোদ্ধা তপন চক্রবর্তী। এর আগে এক সংবাদ সম্মেলনে এই তালিকা প্রত্যাখ্যান করেন মনীষা চক্রবর্তী।

বেলা ১১টার দিকে জেলা বাসদের ফকিরবাড়ি রোডের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য দেন মনীষা চক্রবর্তী। তিনি বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদজায়ার নাম রাজাকারের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা শুধু শহীদ পরিবারের জন্য নয়, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সব মানুষের জন্য লজ্জাজনক। বরিশাল বাসদের সদস্যসচিব হওয়ায় আমার পরিবারের সঙ্গে এমন আচরণ করা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত।’

সংবাদ সম্মেলনে মনীষা বলেন, যে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় তপন চক্রবর্তীকে মুক্তিযোদ্ধা গেজেটে অন্তর্ভুক্ত করেছে সেই একই মন্ত্রণালয় তাঁকে রাজাকারের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নের জন্য রাজাকারের তালিকা করা জরুরি। কিন্তু মহান বিজয় দিবসে রাজাকারের যে তালিকা মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় প্রকাশ করেছে তা প্রশ্নবিদ্ধ। একজন গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধাকে কোনো রকম যাচাই-বাছাই ছাড়া রাজাকার বানিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়ার তদন্ত দাবি করেন তিনি।

বরিশালে রাজাকারের তালিকা পুড়িয়ে প্রতিবাদ জানায় বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) নেতা-কর্মীরা। ছবিটি আজ মঙ্গলবার নগরের সদর রোড থেকে তোলা। ছবি: সাইয়ান
বরিশালে রাজাকারের তালিকা পুড়িয়ে প্রতিবাদ জানায় বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) নেতা-কর্মীরা। ছবিটি আজ মঙ্গলবার নগরের সদর রোড থেকে তোলা। ছবি: সাইয়ান

সংবাদ সম্মেলন শেষে দলীয় কার্যালয় থেকে বাসদের উদ্যোগে একটি বিক্ষোভ মিছিল নগরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে অশ্বিনী কুমার হলের সামনে সমাবেশ করে। সমাবেশে মুক্তিযোদ্ধা তপন চক্রবর্তী, বাসদের জেলা আহ্বায়ক ইমরান হাবিব, সদস্যসচিব মনীষা চক্রবর্তী বক্তব্য রাখেন।

সমাবেশে তপন চক্রবর্তী বলেন, ‘বিজয়ের ৪৮ বছর পর রাজাকারের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছি। এখন আর বেঁচে থেকে লাভ কী? এ তালিকা বাতিল করে রাষ্ট্রকে ক্ষমা চাইতে হবে। রাজাকারের তালিকায় আমি ও আমার মায়ের নাম অন্তর্ভুক্তির পেছনে বড় ষড়যন্ত্র আছে।’

সমাবেশ শেষে তপন চক্রবর্তী ও মনীষা চক্রবর্তী একযোগে রাজাকারের তালিকায় অগ্নিসংযোগ করেন।

মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষোভ
প্রথম ধাপে স্বাধীনতাবিরোধী হিসেবে ১০ হাজার ৭৮৯ জন রাজাকারের নামের তালিকা প্রকাশ করেছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। তালিকায় মুক্তিযোদ্ধাদের নাম থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অন্য মুক্তিযোদ্ধারা। এ ছাড়া বরগুনা মহকুমা শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান প্রয়াত খলিলুর রহমানের নাম এই তালিকায় না থাকায় তীব্র নিন্দা জানান মুক্তিযোদ্ধা। ১৫ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে এই তালিকা প্রকাশ করা হয়।

মুক্তিযুদ্ধের সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ছিলেন মজিবুর রহমান। তিনি পাথরঘাটা থানা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতিও ছিলেন। প্রকাশিত রাজাকারের তালিকায় তাঁর নাম অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ মানুষ অবাক হয়েছেন। এ নিয়ে তীব্র নিন্দা জানান তাঁরা।

তালিকার সূত্র ধরে মুক্তিযোদ্ধারা বলেন, ঘোষিত তালিকায় রাজাকারের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তাতে প্রকৃত রাজাকারের বাইরে গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধার নাম আছে। এই তালিকা মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য লজ্জাজনক। জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করার জন্য সরকারে কাছে সঠিক রাজাকারের তালিকা প্রকাশের দাবি জানান তাঁরা।

বরগুনার জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, ‘তালিকা প্রকাশের কথা শুনেছি। এখনো আমরা অফিশিয়াল কোনো চিঠি পাইনি। রাজাকারের তালিকায় কোনো মুক্তিযোদ্ধার নাম অন্তর্ভুক্ত হয়ে থাকলে বিষয়টি আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাব।’