ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় দগ্ধ ৪১ রোগী বর্তমানে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছেন। তাঁদের মধ্যে গুরুতর দগ্ধ সাতজনের অস্ত্রোপচার হয়েছে গতকাল শনিবার। ঢাকা থেকে আসা চিকিৎসকেরা তাঁদের অস্ত্রোপচার করেন। আর তিনজন গুরুতর দগ্ধ রোগীকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে রাখা হয়েছে। তাঁদের অবস্থা কিছুটা উন্নতির দিকে।
হাসপাতালে ভর্তি আছেন ওই লঞ্চের যাত্রী মাদরীপুরের কালু মিয়া। তিনি শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চক্ষু ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন। তাঁর সঙ্গে থাকা পাঁচ বছরের মেয়ে অহনার এখনো খোঁজ মেলেনি। এ নিয়ে তাঁর কান্না থামছে না।
হাসপাতালে ভর্তি রোগীরা বলেন, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা আসার পর দগ্ধ রোগীদের চিকিৎসায় গতি বেড়েছে। ওষুধ থেকে টেস্টের সার্বিক ব্যবস্থা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ করছে। তবে তাঁদের শরীরে পোড়া ছাড়াও অন্য রোগের উপসর্গ দেখা দিয়েছে, সেসবের চিকিৎসাও দরকার।
এদিকে হাসপাতালের ২০ শয্যার বার্ন ইউনিট প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর আজ রোববার খুলে দেওয়া হয়েছে। সেখানে শয্যাগুলো ঠিকঠাক করা হয়েছে। নিয়োগ করা হয়েছে চিকিৎসক ও নার্স। তবে এখনো কোনো রোগীকে সেখানে স্থানান্তর করা হয়নি। হাসপাতালের চক্ষু, শিশু ও মেডিসিন ইউনিটে দগ্ধ রোগীদের রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, দগ্ধ রোগীদের পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য যাতে ল্যাবে নিয়ে যেতে না হয়, সে জন্য প্রতিটি ল্যাবের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মীদের চাহিদা অনুযায়ী রোগীর নমুনা সংগ্রহের জন্য শয্যার কাছে যেতে বলা হয়েছে। তবে হাসপাতালের নার্স ও চিকিৎসকেরা বলছেন, রোগীদের স্বজন ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার লোকজন হাসপাতালে ভিড় করায় চিকিৎসা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় দগ্ধ রোগীদের চিকিৎসা দিতে ঢাকা থেকে বরিশালে যাওয়া সাত সদস্যের চিকিৎসক দল শনিবার থেকে কাজ শুরু করেছে। চিকিৎসক দলের প্রধান নুরুল আলম বলেন, ‘আমরা রোগীদের পর্যবেক্ষণ করে সে অনুযায়ী চিকিৎসা দিচ্ছি। প্রয়োজন হলে জরুরি অপারেশন করছি। এ জন্য অপারেশন থিয়েটার প্রস্তুত রাখা আছে।’
বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক এইচ এম সাইফুল ইসলাম সকালে প্রথম আলোকে বলেন, এই হাসপাতালে দগ্ধ হয়ে ৮৪ জন রোগী ভর্তি হয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে ১৯ জনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাঁদের ঢাকায় পাঠানো হয়। বর্তমানে এই হাসপাতালে ৪১ জন দগ্ধ রোগী ভর্তি আছেন। হাসপাতালের বার্ন ইউনিট বন্ধ থাকায় গুরুতর দগ্ধ রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছিল। এ কারণে ঢাকা থেকে চিকিৎসকদের এখানে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে সকাল থেকে দগ্ধ রোগীদের সঙ্গে কথা বলেছেন ফায়ার সার্ভিসের গঠিত তদন্ত দলের সদস্যরা। পাঁচ সদস্যের কমিটির প্রধান ফায়ার সার্ভিসের বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. কামাল উদ্দীন ভূঁইয়া। হাসপাতালে তদন্ত কমিটিকে সহায়তাকারী হিসেবে প্রত্যক্ষদর্শী দগ্ধ রোগীদের সঙ্গে কথা বলেন বরিশাল জেলা ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা ও সহকারী উপপরিচালক বেলাল উদ্দীন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা দগ্ধ রোগীদের সঙ্গে কথা বলে ওই দিনের ঘটনার বর্ণনা শুনেছি। পরবর্তী সময় এসব সমন্বয় করে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া হবে।’