বরিশালের ৮ ইউনিয়নে নৌকার ১৭ ‘বিদ্রোহী’কে বহিষ্কার

আওয়ামী লীগের দলীয় লোগো

বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জ ও হিজলা উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থীদের দল থেকে বহিষ্কার করেছে সংগঠনটি। বহিষ্কৃত ১৭ জনের মধ্যে ৬ জন বিভিন্ন পদে ছিলেন।

জেলা আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, বহিষ্কার হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ১৬ জন স্বতন্ত্র হিসেবে চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন। অন্যজন এক স্বতন্ত্র প্রার্থীর প্রধান সমন্বয়কারী। উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে পদে থাকা ছয়জন ছাড়া বাকিরা প্রাথমিক সদস্য ছিলেন।

বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মো. ইউনুস স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে গতকাল শনিবার রাতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়, দলের পদে থেকে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়া এবং প্রচারে সহযোগিতা করায় ১৭ জনকে গঠনতন্ত্রের ৪৭(ঠ) ধারা অনুযায়ী বহিষ্কার করা হয়েছে।

১৫ জুন হিজলার দুটি ও মেহেন্দীগঞ্জে ৬টি ইউপির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। বহিষ্কার হওয়ার প্রতিক্রিয়ায় স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থীরা বলেছেন, দলীয়ভাবে মনোনয়ন না পাওয়ায় তাঁরা জনগণের সমর্থন নিয়ে প্রার্থী হয়েছেন। তাই প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে দাঁড়াবেন না।

মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলায় পদে থাকা বহিষ্কার হওয়া ব্যক্তিরা হলেন চরএক্করিয়া ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি আবুল হোসেন; গোবিন্দপুর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য মহিউদ্দিন তালুকদার; লতা ইউনিয়নের আবু রাশেদ (উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক), বিদ্যানন্দপুর ইউনিয়নের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আবুল বাশার, বর্তমান চেয়ারম্যান ও সাধারণ সম্পাদক আবদুল জলিল মিয়া। এ ছাড়া হিজলা উপজেলার ধুলখোলা ইউনিয়নের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও উপজেলার আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক জামাল উদ্দিন ঢালীকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

বহিষ্কৃত অন্য ব্যক্তিরা হলেন মেহেন্দীগঞ্জের চরএক্করিয়া ইউনিয়নের রুহুল আমিন; আন্ধারমানিকের নাসির উদ্দিন, আবদুর রহমান, কাজী শহিদুল ইসলাম; লতা ইউনিয়নের ফজলে রাব্বী; বিদ্যানন্দপুরের শাহ আলমগীর, শাহাব উদ্দিন ফকির, মনির হোসেন; জয়নগরের মনির হোসেন হাওলাদার এবং হিজলা উপজেলার গৌরবদী ইউনিয়নের ফিরোজ হোসেন ও জাহাঙ্গীর মুনসি।

মেহেন্দীগঞ্জের বিদ্যানন্দপুর ইউপির চেয়ারম্যান আবদুল জলিল মিয়ার ছেলে মনির হোসেন এবার চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। ছেলের নির্বাচনী প্রচারের প্রধান সমন্বয়কারী হওয়ায় আবদুল জলিলকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

একই উপজেলার গোবিন্দপুর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন তালুকদার গতবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জয়ী হন। তিনি এবারও স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। বহিষ্কারের বিষয়ে তিনি গতকাল বলেন, ‘আমি এখনো কোনো চিঠি পাইনি। তাই কিছু জানি না। জনগণ আমার সঙ্গে আছে এ জন্য ভোটের মাঠ ছাড়ব না।’

হিজলা উপজেলার ধুলখোলা ইউনিয়নের জামাল উদ্দীন ঢালী এর আগেও দুইবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ায় বহিষ্কার হয়েছিলেন। এবারও তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী। বহিষ্কারের বিষয়ে বলেন, আগের বহিষ্কারের বিষয়ে মৌখিকভাবে জেনেছেন। এবারও বহিষ্কার হয়েছেন। এ ধরনের বহিষ্কারাদেশ তিনি গুরুত্বহীন মনে করেন।

প্রসঙ্গত, মেহেন্দীগঞ্জ ও হিজলা উপজেলা নিয়ে গঠিত বরিশাল-৪ সংসদীয় আসন। এ আসনের সংসদ সদস্য পংকজ দেবনাথের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া পক্ষটি জেলা আওয়ামী লীগের সমর্থক হিসেবে পরিচিত। দুই উপজেলা মিলিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের অনুসারীরা ৬টি ইউনিয়নে এবং ২টি ইউনিয়নে পংকজ দেবনাথের অনুসারীরা নৌকা প্রতীক পেয়েছেন। নৌকা না পাওয়া ৬ ইউনিয়নেই পংকজ দেবনাথের অনুসারীরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। অন্যদিকে নৌকা না পেয়ে দুই ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের অনুসারীরা।