বর্ষা শুরুর আগেই মশা নিয়ন্ত্রণ করার দাবি

সন্ধ্যা নামার আগেই দল বেঁধে ঝাঁকে ঝাঁকে মশা ঢুকে পড়ছে বসতবাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানসহ সর্বত্র।

বরিশাল জেলার মানচিত্র

শীতের মৌসুম শেষ হওয়ার পরই বরিশাল নগরে বেড়েছে মশার উপদ্রব। সন্ধ্যা নামার আগেই দল বেঁধে ঝাঁকে ঝাঁকে মশা ঢুকে পড়ছে বসতবাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানসহ সর্বত্র। অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে নগরবাসী।

কয়েকজন বাসিন্দা অভিযোগ করে বলেন, মশা নিধনে ধারাবাহিক উদ্যোগ না থাকায় হঠাৎ করেই মশার উপদ্রব বেড়েছে। বর্ষা মৌসুম শুরুর আগে মশা নিধনে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে।

অবশ্য সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা বিভাগের কর্মকর্তারা বলেছেন, ১৭ মার্চ থেকে নগরে বিশেষ পরিচ্ছন্নতা অভিযান শুরু হবে। এই বিশেষ অভিযানে মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে গতি আসবে। মাসখানেকের মধ্যে মশার উৎপাত কমে যাবে বলেও তাঁরা আশা করছেন।

বরিশাল সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, ৩০টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত ৫৮ বর্গকিলোমিটার আয়তনের বরিশাল নগরে প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ লোকের বাস। মশা নিধনে লোকবল–সংকট যেমন রয়েছে, তেমনি যাঁরা আছেন, তাঁদেরও মশা নিধনে প্রশিক্ষণ নেই। রয়েছে আধুনিক সরঞ্জামের অভাব। মশকনিধনে সিটি করপোরেশনে কাজ করছেন ৭০ জন কর্মী। আর মশকনিধনের জন্য আছে ২টি ফগার মেশিন ও ৭০টি হস্তচালিত স্প্রে।

সন্ধ্যার আগেই দরজা-জানালা আটকে দিই। কিন্তু এরপরও রক্ষা হয় না। মশার যন্ত্রণায় টানা কোথাও বসে থাকা যায় না। মশার কামড়ে স্বাভাবিক কাজ করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
মো. শহিদুল্লাহ, রূপতলী হাউজিং এলাকা

রূপতলী হাউজিং এলাকার মো. শহিদুল্লাহ বলেন, ‘সন্ধ্যার আগেই দরজা-জানালা আটকে দিই। কিন্তু এরপরও রক্ষা হয় না। মশার যন্ত্রণায় টানা কোথাও বসে থাকা যায় না। মশার কামড়ে স্বাভাবিক কাজ করা কঠিন হয়ে পড়েছে।’

এই এলাকার আরেক বাসিন্দা আবদুর রাজ্জাক বলেন, এখানে পয়োনিষ্কাশনের জন্য এখনো কার্যকর কোনো ড্রেনেজব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। বর্ষার সময় পানি জমে থাকলেও তা দীর্ঘদিনেও নিষ্কাশিত হয় না। আবার মূল সড়কের পাশে রূপাতলী বাসস্ট্যান্ড, বেশ কয়েকটি গাড়ি মেরামতের গ্যারেজ ও বেশ কয়েকজন ভাঙারি ব্যবসায়ীর ভাঙারির স্তূপ রয়েছে। গ্যারেজের পরিত্যক্ত টায়ার, ভাঙারি ব্যবসায়ীদের বোতল মশা উৎপাদনের মূল উৎসস্থল।

পরিবেশ আন্দোলনের বরিশাল বিভাগীয় সমন্বয়কারী রফিকুল ইসলাম বলেন, সামনে বর্ষা মৌসুম। বৃষ্টি হলে এডিস মশা বাড়বে। আবার গরমে বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকলেও মশা বাড়বে। এতে ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধির আশঙ্কা আছে। সাধারণত জুন-সেপ্টেম্বর সময়ে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। এ জন্য উপযুক্ত লার্ভাসাইড বাছাই করে একযোগে ৩০টি ওয়ার্ডের খাল, নর্দমা, নালা, ঝোঁপঝাড়ে মশকনিধন অভিযান হাতে নেওয়া প্রয়োজন। এ ছাড়া নগরের খালগুলো দখলে-দূষণে অনেক স্থানে ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। এসব খাল ও প্রাকৃতিক জলাশয়সহ সর্বত্র নিয়মিত পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালনা করার পদক্ষেপ নিতে হবে।

বরিশাল সিটি করপোশেনের প্রধান পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম গতকাল শনিবার বলেন, মশকনিধন কর্মসূচি চলমান। নগরীর খাল ও নালা, জলাশয়, ডোবা, নালা, নর্দমা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কার্যক্রম ধারাবাহিকভাবেই চলছে। এখন তা আরও জোরদার করা হয়েছে। খালগুলো পুনরায় খননের জন্য পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

রবিউল ইসলাম আরও বলেন, হঠাৎ করেই মশার উপদ্রব বেড়েছে। এটা সারা দেশেই বেড়েছে। এ জন্য কাজের গতি বাড়াতে আরও ১০টি ফগার মেশিন কেনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ১৭ মার্চ থেকে বিশেষ পরিচ্ছন্নতা অভিযান শুরু হবে। এতে মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে গতি আসবে। মাসখানেকের মধ্যে মশার উৎপাত কমে যাবে।