বলেছি আমি জুলহাসের বউ, সবাই ভোট দেবেন; তাঁরা সাড়া দিয়েছেন

জেসমিন আক্তার জুলহাস

ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার রাধাকানাই ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে সংরক্ষিত মহিলা সদস্যপদে জিন ক্যাটামিন পেট্রিয়াকা ওরফে জেসমিন আক্তার জুলহাস জয়ী হয়েছেন। বিদেশি এই নারীকে নিয়ে এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকসহ সবখানে বেশ আলোচনা চলছে। প্রথম আলো কথা বলেছে তাঁর সঙ্গে।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: ফিলিপাইন থেকে বাংলাদেশে এসে কীভাবে মানিয়ে নিয়েছেন নিজেকে?

জেসমিন আক্তার: নতুন একটি দেশে এসে ভিন্ন সংস্কৃতিতে নিজেকে মানিয়ে নেওয়া খুবই দুঃসাধ্য কাজ ছিল। বিশেষ করে ভাষাগত সমস্যা হতো পরিবারের অন্যদের সঙ্গে কথা বলতে গেলে। খাবার, পোশাক ও জীবনযাত্রায় ভিন্নতা থাকায় সেটাও আস্তে আস্তে মানিয়ে নিতে হয়েছে। তবে সবকিছুতেই আমাকে আমার স্বামী অনেক সহযোগিতা করেছেন। প্রতিবেশীরাও আমাকে ভাবি হিসেবে অনেক ভালোবাসেন।

প্রশ্ন:

আপনাদের পরিচয় কীভাবে? বিয়ের সিদ্ধান্ত কেমন করে হলো?

জেসমিন আক্তার: আমরা দুজন একই সঙ্গে সিঙ্গাপুরে একটি কোম্পানিতে চাকরি করতাম। সেখানে আমাদের বন্ধুত্ব হয়। সে থেকেই নিয়মিত যোগাযোগ হতো। বছরখানেক পর জুলহাস সিঙ্গাপুর থেকে বাংলাদেশে চলে আসেন। আমিও ফিলিপাইনে ফিরে যাই। এরপর দুই বছর চলে যায়। তবে আমাদের নিয়মিত যোগাযোগ হতো। একপর্যায়ে জুলহাস আমাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। আমি তাঁকে আমার দেশে যেতে বলি। এই প্রস্তাবে জুলহাস রাজি হন। পরিবারের সম্মতিতেই আমাদের বিয়ে হয়। আমি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করি এবং বিয়ের পর বাংলাদেশে চলে আসি। আমার নাম হয় জেসমিন আক্তার জুলহাস।

প্রশ্ন:

বাংলাদেশে এখন কেমন লাগে?

জেসমিন আক্তার: বাংলা ভাষাটা এখনো পুরোপুরি শিখতে পারিনি। এ ব্যাপারে আমার স্বামী বেশির ভাগ সময় দোভাষীর কাজ করেন। আমি ইংরেজি, ফিলিপিনো ও তাগালক ভাষা জানি, কিন্তু বাংলা সম্পর্কে কোনো ধারণাই নেই। অনুবাদের মাধ্যমে ভাষা চর্চা করছি। প্রথম প্রথম ভাষা, সংস্কৃতি, পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়ানো অনেক কঠিন ছিল। স্বামীর একান্ত সহযোগিতায় সব বাধা কাটিয়ে এখন আদর্শ বাঙালি বউ হয়ে উঠতে পেরেছি।

প্রশ্ন:

নিজের দেশ-স্বজনের কথা মনে পড়ে না?

জেসমিন আক্তার: আমার মাতৃভাষায় আমি কথা বলতে পারি না, এটা সবচেয়ে খারাপ লাগে। ছেড়ে আসা পরিবার ও আত্মীয়স্বজনের কথা মনে হয়। তাদের সঙ্গে অবশ্য প্রায়ই কথা হয়।

প্রশ্ন:

নির্বাচন করলেন কেন?

জেসমিন আক্তার: এলাকার মানুষ অনেকটা জোর করেই আমাকে নির্বাচনে দাঁড় করিয়েছেন। ব্যক্তিগতভাবে আমি রাজনীতি পছন্দ করি না, কিন্তু সবার আবদার-অনুরোধ রাখতে গিয়ে আমাকে নির্বাচনে অংশ নিতে হয়েছে। এলাকার বিভিন্ন সমস্যার কথা ও জনগণের সেবা করার চিন্তা থেকেই ভোটের লড়াইয়ে নেমেছি। এর পেছনে আমার স্বামী ও এলাকাবাসী পূর্ণ সমর্থন দিয়েছেন।

প্রশ্ন:

ভিনদেশে নির্বাচন করে জয়ী হলেন, কেমন লাগছে?

জেসমিন আক্তার: নির্বাচনের আগে প্রতিদিন মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট চেয়েছি। বলেছি আমি জুলহাসের বউ, সবাই আমাকে ভোট দেবেন। সকালে বের হয়ে রাত পর্যন্ত জনসংযোগ করেছি, ভোটারদের কাছে গিয়েছি। তাঁরা সাড়া দিয়েছেন। সাধারণ ভোটাররা সবাই আমাকে সানন্দে গ্রহণ করেছেন। অনেকে খেতে দিয়েছেন। প্রতিবেশীরাও নির্বাচনী প্রচারণায় সহযোগিতা করেছেন।

প্রশ্ন:

জনপ্রতিনিধি হিসেবে এখন জনগণের জন্য কী কী কাজ করবেন?

জেসমিন আক্তার: এই দেশের নারী ও শিশুরা অনেক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। তাদের জন্য নাগরিক সেবা প্রদানে সর্বোচ্চ চেষ্টা করব। গ্রামের যেসব রাস্তার অবস্থা নাজুক, সেগুলো ঠিক করব। শিক্ষার হার বাড়ানো এবং দারিদ্র্য বিমোচনে কাজ করার ইচ্ছা আছে।