বসন্ত বাতাসে ভালোবাসার উড়াল

প্রকৃতির অমোঘ নিয়মে বিদায় নিচ্ছে শীত। ঋতুরাজ বসন্ত প্রাণ সঞ্চার করছে প্রকৃতিতে। পয়লা ফাল্গুন আর ভালোবাসা দিবস উদ্‌যাপন শুরু হয়ে গেছে ইতিমধ্যে। পোশাকে ফাগুনের ছোঁয়া। নানা সাজে মনের আনন্দে মেতেছে সবাই। গতকাল রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে
ছবি: আশরাফুল আলম

রাজধানীর নীলক্ষেতের ছোট সড়ক বিভাজকে ছোট একটি ঝাঁকড়া শিমুলগাছ। তাতে ফুল ফুটেছে। মোহাম্মদপুরের কৃষি মার্কেটে যাওয়ার সড়কের মুখেই আরেকটি শিমুলগাছে ফুলের জন্য পাতা প্রায় দেখাই যাচ্ছে না। রিকশা বা গাড়িতে চলাচলের ফাঁকে শহুরে মানুষ শিমুল দেখে বুঝে নেয় বসন্ত এসে গেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বড় বড় গাছে কোকিলের কু-উ-হু ডাকে আবার মন উদাস হয়।

ঋতুরাজ বলে বসন্তের খ্যাতি আছে। যৌবন ও প্রেমের ঋতু হিসেবেও সমাদৃত। এবার রঙিন পয়লা ফাল্গুন আর বিশ্ব ভালোবাসা দিবস একই দিনে, অর্থাৎ আজ রোববার নগরবাসী দুটো দিনকে একসঙ্গে বরণ করছেন। বাসন্তী বা টুকটুকে লাল পোশাকে ভালোবাসার মানুষকে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘ভালোবাসি’ বলার ফুরসত পাচ্ছেন নগরবাসী।

সাংস্কৃতিক সংগঠন পুনশ্চ যশোরের আয়োজনে বসন্ত উৎসবে সংগীত পরিবেশন করেন সংগঠনের শিল্পীরা। শনিবার বিকেলে যশোর টাউন হল ময়দানের রওশন আলী মঞ্চে
ছবি: এহসান-উদ-দৌলা

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব পৃথিবীকে প্রায় উল্টেপাল্টে দিয়েছে। দেশে করোনা এখন কিছুটা নিয়ন্ত্রণে। গত বছরের মার্চ থেকে দীর্ঘ সময় মানুষ প্রায় ঘরবন্দী ছিল। সেখান থেকে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে শুরু করেছে মানুষ। এমন পরিস্থিতিতে একসঙ্গে দুটি উৎসব উদ্‌যাপন করতে যাচ্ছেন নগরবাসী।

শনিবার অনেকের পোশাক-সাজে দেখা গেছে ফাল্গুন আর ভালোবাসার রঙের ছোঁয়া। তাজা ফুল বিক্রেতারা রোববারের জন্য অপেক্ষা করছেন। তবে শনিবারও ফুলের দোকানগুলোতে বেশ ভালোই কেনাবেচা হতে দেখা গেছে। মোড়ে মোড়ে তরুণ ছেলেরা কাঠের টেবিল পেতে বসেছিলেন বাহারি ফুল নিয়ে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে শনিবার থেকেই বসন্ত ও ভালোবাসা দিবসের ইতিউতি টের পাওয়া গেছে। অনেকেই পলাশ ফুলের ছবি বা নিজের বাসন্তী বা লাল রঙের পোশাকের ছবি শেয়ার করেছেন। দিবস দুটিকে নিয়ে নগরবাসীর উচ্ছ্বাসে এবার কিছুটা ভাটা পড়েছে। করোনার কবলে অমর একুশে গ্রন্থমেলার সেই চিরাচরিত চিত্র এবার উধাও হয়ে গেছে। ফাল্গুন আর ভালোবাসা দিবস উদ্‌যাপনের আরেক প্রাণকেন্দ্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। এবার এ ক্যাম্পাসও বন্ধ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় নিউমার্কেট ও গাউছিয়া মার্কেটেও তার ছাপ পাওয়া গেছে।

স্বাস্থ্যবিধি মেনে ফুলের দোকানে ক্রেতারা। শনিবার রংপুর নগরের নিউ ইঞ্জিনিয়ারপাড়া এলাকায়
ছবি: মঈনুল ইসলাম

শনিবার দুপুর থেকেই নিউমার্কেটে ভিড় বাড়তে থাকে। চারটার দিকে মার্কেটের সামনের গাড়ি পার্কিংয়ে জায়গা পাওয়াই মুশকিল হয়ে পড়ে। তবে বিক্রেতারা বললেন, করোনা নিয়ে মানুষের মধ্যে ভয়ডর একটু কমেছে। শনিবার ছুটির দিন, পরিবারের কেনাকাটার জন্য অনেকেই নিউমার্কেট আসতে শুরু করেছেন। আলাদা করে বসন্ত বা ভালোবাসা দিবসের জন্য কেনাকাটা করতে আসা ক্রেতার সংখ্যা কম।

পছন্দের ফুল কিনে নিজেদের সাজাচ্ছেন তরুণীরা। শনিবার সকালে বগুড়া শহরের শহীদ শিশু উদ্যানসংলগ্ন ফুল মার্কেটে
ছবি: সোয়েল রানা

ইংরেজিতে ‘আই লাভ ইউ’ লেখা লাল টুকটুকে, তুলতুলে ছোট ছোট কুশন নিয়ে বসেছিলেন জুয়েল রানা। একমুখ হাসি দিয়ে বললেন, কুশন বেচাকিনি ভালো হচ্ছে। ২৫০ টাকা থেকে শুরু করে বিভিন্ন দামের কুশন একজন ক্রেতাই কিনেছেন ৩৫টি।

পয়লা ফাল্গুন, বিশেষ করে পশ্চিমা বিশ্বের জনপ্রিয় ‘ভালোবাসা দিবস’ উদ্‌যাপন নিয়ে অনেকে দ্বিমতও পোষণ করেন। তাঁদের মতে, প্রিয়জনকে ভালোবাসা জানানোর জন্য বিশেষ দিনের কোনো প্রয়োজন নেই। ভালোবাসা দিবসের ইতিহাস বলছে, প্রায় দুই হাজার বছর আগে তৎকালীন রোমান সাম্রাজ্যে ভালোবাসা দিবস উদ্‌যাপন শুরু করা হয়। ২৭০ খ্রিষ্টাব্দের কোনো একসময় রোমান সম্রাট দ্বিতীয় ক্লদিয়াস সাম্রাজ্যের তরুণদের বিয়ে না করার নির্দেশ দেন। কিন্তু সম্রাটের আদেশ অমান্য করে ভালোবাসার বাণী প্রচার শুরু করেন ভ্যালেন্টাইন নামের এক সাধু। শাস্তিস্বরূপ ভ্যালেন্টাইনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। পঞ্চম শতাব্দীর মাঝামাঝি, পোপ গেলাসিয়াস ভ্যালেন্টাইনের আত্মত্যাগকে স্মরণীয় করার উদ্দেশ্যেই ফেব্রুয়ারি মাসের ১৪ তারিখকে ভালোবাসা দিবস ঘোষণা করেন।