বহিষ্কৃত দুই শিক্ষার্থী আমরণ কর্মসূচিতে

গতকাল শনিবার খুলনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের দাবি জানান এই দুই শিক্ষার্থী
প্রথম আলো

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বহিষ্কৃত দুই শিক্ষার্থী তাঁদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে আমরণ কর্মসূচি শুরু করেছেন। ওই কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ রোববার সন্ধ্যা সাতটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের সামনে তাঁরা অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন।

ওই দুই শিক্ষার্থী হলেন বাংলা ডিসিপ্লিনের (বিভাগ) মোহাম্মদ মোবারক হোসেন ওরফে নোমান এবং ইতিহাস ও সভ্যতা ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থী ইমামুল হোসেন। শিক্ষকদের সঙ্গে অসদাচরণ, তদন্ত কমিটিকে সহযোগিতা না করাসহ বিভিন্ন কারণে ওই দুই শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা বোর্ড। ওই বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে তাঁরা কর্মসূচি শুরু করেছেন।

এর আগে গতকাল শনিবার খুলনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের দাবি জানান ওই দুই শিক্ষার্থী। অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া ওই দুই শিক্ষার্থী বলেছেন, আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তাঁদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা না হলে আমরণ অনশন কর্মসূচি শুরু করবেন।

কর্মসূচি শুরু করেই ইমামুল হোসেন তাঁর ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন। সেখানে তিনি লেখেন, ‘২৪ ঘণ্টায় দিয়েছিলাম আমার অন্যায্য শাস্তি প্রত্যাহারের জন্য। কিন্তু প্রশাসন এই সময়ের মধ্যে আমার শাস্তি প্রত্যাহার করেনি। তাই আমি আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং দেশবাসীকে সাক্ষী রেখে আজকে থেকে আমরণ কর্মসূচি শুরু করছি। এই ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে যদি আমার অন্যায্য শাস্তি প্রত্যাহার না করা হয়, তবে আমি আরও কঠোর কর্মসূচিতে যাব। আমি দেশবাসীকে বলছি, এই বহিষ্কার প্রত্যাহার না করলে এবং এই বহিষ্কারের সংবাদ শুনার পর আমার আব্বা-আম্মার কিছু হলে তার জন্য দায়ী থাকবে আমার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। আমি আবারও বলছি অন্যায়ের বিপক্ষে লড়াই করতে গিয়ে আমি আমার জীবন দিতে প্রস্তুত আছি। আশা করছি, এই ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে প্রশাসন আমার বিরুদ্ধে নেওয়া অন্যায্য শাস্তি প্রত্যাহার করবে ইনশা আল্লাহ। আল্লাহ আমাদের সাথেই আছেন। তাই আমাদের বিজয় কেউ ঠেকাতে পারবে না।’

এর আগে গত বছরের ১ ও ২ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বেতন–ফিস কমানো, আবাসনসংকট নিরসনসহ পাঁচ দফা দাবি আদায়ে শত শত শিক্ষার্থীর সঙ্গে তাঁরাও অংশ নিয়েছিলেন। ওই সময় দুই শিক্ষকের সঙ্গে অসদাচরণ করার অভিযোগ তোলা হয় তাঁদের বিরুদ্ধে।

শনিবারের সংবাদ সম্মেলনে তাঁরা বলেন, একজন শিক্ষার্থী হিসেবে একটি ন্যায্য দাবির আন্দোলনে যুক্ত থাকার কারণে এভাবে তাঁদের শিক্ষাজীবনকে নষ্ট করার সিদ্ধান্ত তাঁরা মেনে নিতে পারছেন না। শিক্ষকদের অভিযোগের ভিত্তিতে তাঁদের যে শাস্তি দেওয়া হয়েছে, তা ভিত্তিহীন ও প্রহসনমূলক।

শিক্ষকদের অসদাচরণ করা প্রসঙ্গে তাঁরা বলেন, আন্দোলনের সময় সব সিদ্ধান্ত সম্মিলিতভাবেই নেওয়া হয়। সেখানে ব্যক্তিগতভাবে কোনো শিক্ষকের সঙ্গে অসদাচরণ করা বা যাতায়াতে বাধা প্রদান করার কোনো প্রশ্নই আসে না। আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের হাদী চত্বরে অবস্থান করছিলেন। ঠিক ওই সময় দুজন শিক্ষক গাড়ি চালিয়ে তাঁদের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এতে শিক্ষার্থীরা সবাই বিস্মিত হন ও সম্মিলিতভাবেই ওই শিক্ষকদের বিকল্প রাস্তা দিয়ে যেতে অনুরোধ করেন।

এর দেড় মাস পর অর্থাৎ ১৬ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত কমিটি থেকে ছাত্রবিষয়ক পরিচালকের দপ্তরে বক্তব্য প্রদানের জন্য উপস্থিত থাকতে বলা হয়। সে অনুযায়ী দুই দিন পর ছাত্রবিষয়ক পরিচালকের দপ্তরে গিয়ে তাঁদের বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ অভিযোগের অনুলিপি চেয়ে লিখিত আবেদন করেন।

তাঁরা অভিযোগ করেন, ওই আবেদনের পর দীর্ঘদিন চলে গেলেও তাঁরা অভিযোগের বিবরণী ও তৎসংশ্লিষ্ট কোনো পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি পাননি। সম্প্রতি জানতে পেরেছেন, তাঁদের বহিষ্কার করা হয়েছে। ওই খবর জেনে তাঁরা যারপরনাই বিস্মিত হয়েছেন। দুজন শিক্ষকের সঙ্গে অসদাচরণ হিসেবে তাঁদের নামে যে অভিযোগ করা হয়েছে, তা সম্পূর্ণরূপে অমূলক। ওই আন্দোলনে তাঁরা দুজন কর্মী ছিলেন মাত্র।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রবিষয়ক পরিচালন ও শৃঙ্খলা বোর্ডের সদস্যসচিব অধ্যাপক মো. শরীফ হাসান বলেন, অভিযোগকারী শিক্ষকদের কাছে ঘটনার বিবরণ ও ঘটনার কিছু স্থিরচিত্র ছিল। সেই স্থির চিত্রে শিক্ষার্থীদের চিহ্নিত করে তদন্ত কমিটি সাক্ষাৎকারের জন্য ডাকে। কিন্তু তাঁরা তদন্ত কমিটিকে কোনো তথ্য না দিয়ে অসহযোগিতা করেন ও অনুমতি ছাড়া বক্তব্য রেকর্ড করার চেষ্টা করেন।

তিনি বলেন, এখনো ওই দুই শিক্ষার্থীর শাস্তি কার্যকর হয়নি। প্রথমে শৃঙ্খলা বোর্ড শাস্তি আরোপের সিদ্ধান্ত নেয়। এরপর শাস্তির কারণ ও সিদ্ধান্ত জানিয়ে শাস্তিপ্রাপ্তদের আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য চিঠি পাঠায়। ওই চিঠির জবাব পাওয়ার পর তা আবার শৃঙ্খলা বোর্ডে উপস্থাপন করা হয়। এরপর শাস্তির বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। শাস্তি চূড়ান্ত হলে শিক্ষার্থীরা যাথাযথ কর্তৃপক্ষ বরাবর আপিল করতে পারবেন।