বাঁধ সংস্কার হয়নি, বৃষ্টিতে ভোগান্তি আরও বেড়েছে

ভোগান্তিতে রয়েছে অন্তত ২০ হাজার মানুষ। খাবারসহ সুপেয় পানির জন্য তাঁদের কষ্টের সীমা নেই।

রাস্তাঘাট পানিতে ডুবে থাকায় লোকজনকে চলাচলে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। গত বুধবার আশাশুনির প্রতাপনগর বাজার এলাকায়।ছবি: প্রথম আলো

ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে উঁচু জোয়ারে বাঁধ ভেঙে গেছে। তিন সপ্তাহ পরও সেই বাঁধ মেরামত হয়নি। বাড়ির আঙিনায় জোয়ার-ভাটার পানি ওঠানামা করছে। বর্তমানে বৃষ্টির পানিতে সমস্যা আরও প্রকট হয়ে উঠছে। এই পরিস্থিতি সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়নের।

এই ইউনিয়নের নয়টি গ্রামের মানুষ কার্যত পানিবন্দী হয়ে আছে। ভোগান্তিতে রয়েছে এখানকার অন্তত ২০ হাজার মানুষ। খাবারসহ সুপেয় পানির জন্য তাঁদের কষ্টের সীমা নেই।

গত বুধবার গিয়ে দেখা যায়, প্রতাপনগর ইউনিয়নের প্রতাপনগর, শ্রীপুর, কুড়িকাউনিয়া, সোনাতনকাটি, কল্যাণপুর, লস্কারিখাজরা, নাকনা, বন্যতলা ও দিঘলারআইট গ্রামে পানি আর পানি। নৌকায় করে চলাফেরা করছে লোকজন। তাঁরা জানান, ঘূর্ণিঝড় আম্পানের পর ভাটায় পানি সরে যেত। এবার পানি সরছে না। ফলে ভোগান্তি বাড়ছে। অনেকের জ্বর, কাশি, সর্দি, ডায়রিয়াসহ দেখা দিচ্ছে নানা পানিবাহিত রোগ। রাস্তার পাশে যাদের বাড়ি, তাদের কেউ কেউ ত্রাণ পাচ্ছে। তবে দুর্গম এলাকায় কেউ ত্রাণ পাচ্ছে না।

শ্রীপুর গ্রামের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ওহিদুল ইসলাম বলেন, অনেকে এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছে। প্রতিবছর এভাবে নদীভাঙনে সর্বস্বান্ত হলে এলাকায় কোনো লোক থাকতে পারবে না।

প্রতাপনগর গ্রামের মাহমুদ হাসানের ২০ বিঘার চিংড়ির ঘের ছিল। আম্পানে ১০ মাস ডুবে থাকার পর আবার চিংড়ি চাষ শুরু করেছিলেন। দুই মাস না যেতেই ইয়াসের প্রভাবে নদীভাঙনে তাঁর সব শেষ হয়ে গেছে। মাহমুদ হাসান বলেন, স্থায়ী বেড়িবাঁধ না হলে এই এলাকায় মানুষ বসবাস করতে পারবে না।

এই জলাবদ্ধতার মধ্যে নারীদের ভোগান্তি বেশি। দিঘলারআইট গ্রামের রমেচ্ছা খাতুন বলেন, ‘পানির মদ্যি রয়েছি প্রায় মাস হয়ে গেল। কোনো কাজ নি। এক বিলা জোটে তা আর বিলা জোটে না। এভাবে কুনোরকমে ব্যাচি নইছি। বাঁধ বাধার ব্যবস্থা কুরো, নাহলি আমাগে গেরাম ছাড়ি চলে যাতি হবেনে।’

প্রতাপনগর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জাকির হোসেন বলেন, গত বছরের ২০ মে আম্পানে জোয়ারের পানিতে ভেসে গেছে কোটি কোটি টাকার সম্পদ। সেই ক্ষত কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছিল এই উপকূলের মানুষ। এর মধ্যেই ইয়াসের আঘাত। ৯টি গ্রামের ২০ হাজার মানুষ এখনো পানিবন্দী। কাজ নেই, খাবার নেই। কেউ মারা গেলে ওই সব গ্রামে কবর দেওয়ার পর্যন্ত জায়গা নেই। ধনী-গরিব সবাই সমান হয়ে গেছে।

উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসে আশাশুনি সদর, প্রতাপনগর, বড়দল, আনুলিয়া, খাজরা ইউয়িনের ১৪টি স্থানে বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়। অধিকাংশ স্থানে স্থানীয় মানুষ, পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ও প্রশাসনের সহায়তায় বাঁধ মেরামত করা হয়েছে। তবে প্রতাপনগরের চারটি স্থান বাঁধ সংস্কার এখনো সম্ভব হয়নি।

সাতক্ষীরা পাউবোর বিভাগ-২–এর নির্বাহী প্রকৌশলী রাশেদুর ইসলাম বলেন, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়ে সাতক্ষীরা ও খুলনার কয়রার ২৫টি স্থানে বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করছিল। ইতিমধ্যে ২০টি স্থানের বাঁধ সংস্কার করা হয়েছে। কয়রার দুটি ও সাতক্ষীরার প্রতাপনগরের চারটি পয়েন্টে বাঁধ দিয়ে এলাকায় পানি ঢুকছে। বর্তমানে প্রতাপনগরের কুড়িকাউনিয়া ও হরিষখালীতে কাজ চলছে। বন্যতলা পয়েন্টে জাইকার অর্থায়নে কাজ হবে। ২৬ জুন পূর্ণিমায় নদীতে পানি বৃদ্ধি পেতে পারে। এর আগেই সব বাঁধের কাজ করা যাবে।