বাংলা চ্যানেল পাড়ি দেওয়া সর্বকনিষ্ঠ রাব্বীর পড়াশোনার দায়িত্ব নিলেন সাংসদ

১৫তম বাংলা চ্যানেল সাঁতারে প্রথম স্থান অর্জনকারী রাব্বী রহমানের সঙ্গে তার বাবা আলালুর রহমান। ৩০ নভেম্বর, সোমবার, সেন্ট মার্টিনপ্রথম আলো

সাড়ে তিন বছর বয়স থেকে বাবার হাত ধরে পানিতে ভাসা শুরু। এরপর শৈশবের গণ্ডি পেরোতে না পেরোতেই সাফল্যের ঝুড়িতে একের পর এক স্বর্ণপদক জয়। শেষে ১৩ বছর ৬ মাস বয়সে সবচেয়ে কম বয়সে বাংলা চ্যানেল পাড়ি দিয়ে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙেছে বগুড়ার কিশোর রাব্বী রহমান। এবার অসচ্ছল পরিবারের সন্তান রাব্বীর পড়াশোনার দায়িত্ব নিয়েছেন বগুড়া-৬ (সদর) আসনের সাংসদ ও এসআর গ্রুপের চেয়ারম্যান গোলাম মো. সিরাজ।

বঙ্গোপসাগরের টেকনাফ শাহপরীর দ্বীপ থেকে সেন্টমার্টিন পর্যন্ত বাংলা চ্যানেল হিসেবে পরিচিত ১৬ দশমিক ১ কিলোমিটার সাগরপথ সাঁতরে পাড়ি দেওয়া বাংলাদেশি সাঁতারুদের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ সাঁতারুর রেকর্ড গড়েছে এই কিশোর। এতে তাঁর সময় লেগেছে ৩ ঘণ্টা ২০ মিনিট। শুধু তাই নয়, গত ৩০ নভেম্বর বঙ্গোপসাগরে অনুষ্ঠিত ১৫তম বাংলা চ্যানেল সাঁতারে ৪০ জন সাঁতারুর মধ্যে সবার আগে সাঁতার শেষ করে চ্যাম্পিয়ন হয় রাব্বী। জয় করে স্বর্ণপদক।

১৫তম বাংলা চ্যানেল সাঁতারে জয়ী সর্বকনিষ্ঠ সাঁতারু রাব্বী রহমানকে সংবর্ধনা দেয় গোলাম রব্বানী ফাউন্ডেশন। আজ মঙ্গলবার বগুড়া শহরের মফিজ পাগলার মোড় এলাকায় এসআর টাওয়ারে
প্রথম আলো

রাব্বী বগুড়া শহরের ফুলবাড়ি এলাকার পরিবহনশ্রমিক আলালুর রহমানের ছেলে। আলালুর রহমান শ্রমিকের কাজের পাশাপাশি বগুড়া জেলা ক্রীড়া সংস্থায় খণ্ডকালীন সাঁতার প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করেন। তাঁর দুই মেয়ে ও এক ছেলের মধ্যে রাব্বী শহরের সুবিল উচ্চবিদ্যালয়ে নবম শ্রেণিতে পড়াশোনা করছে।

গোলাম মো. সিরাজের বাবার নামে প্রতিষ্ঠিত ‘গোলাম রব্বানী ফাউন্ডেশন’-এর পক্ষ থেকে আজ মঙ্গলবার বিকেলে বাংলা চ্যানেল পাড়ি দেওয়া কিশোর রাব্বীকে সংবর্ধনা প্রদান করা হয়। এই অনুষ্ঠানে কিশোর এই সাঁতারুর আজীবন পড়াশোনার খরচ জোগানোসহ বিদেশে যেকোনো প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের সব খরচ বহনের ঘোষণা দেন বিএনপি দলীয় সাংসদ সিরাজ। এ ছাড়া এসআর ট্রাভেলসে বিনা মূল্যে ভ্রমণের সুযোগ পাবে রাব্বী। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে রাব্বীর হাতে এককালীন ১০ হাজার টাকার শিক্ষা অনুদানও তুলে দেন সাংসদ।

বগুড়া শহরের মফিজ পাগলার মোড় এলাকায় এসআর টাওয়ারে সাংসদ গোলাম মো. সিরাজের ব্যক্তিগত কার্যালয়ে এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এ সময় সাংসদ সিরাজ বলেন, রাব্বী হাসান যত দিন পড়াশোনা করতে চায়, তত দিন তাকে মাসিক বৃত্তি প্রদান করা হবে।

এ সময় বগুড়ার ইসলামি হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মাজেদুর রহমান তাঁর হাসপাতালে রাব্বীকে বিনা মূল্যে চিকিৎসাসেবার ঘোষণা দেন।

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে জেলা বিএনপির নেতারা ছাড়াও বাংলাদেশ সুইমিং ফেডারেশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আমিনুল হক দেওয়ান, রাব্বী হাসানের বাবা আলালুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বগুড়ার ইসলামি হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মাজেদুর রহমান তাঁর হাসপাতালে রাব্বীকে বিনা মূল্যে চিকিৎসাসেবার ঘোষণা দেন।

রাব্বীর বাবা আলালুর রহমান পেশায় পরিবহনশ্রমিক। তবে তিনি নিজেও সাঁতারু। অভাবের সংসার। ছেলেকে সব সুবিধা দিয়ে পড়াশোনা করাতে পারেননি। তবে সাড়ে তিন বছর থেকে ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে পুকুরে সাঁতার শেখাতেন তিনি।

২০১৬ সালে বয়সভিত্তিক সাঁতার প্রতিযোগিতায় জাতীয় পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন হয় রাব্বী। এরপর ২০১৮ সালে শেখ রাসেল জাতীয় ক্লাব সাঁতার প্রতিযোগিতাতেও প্রথম হয় সে। ২০১৯ সালে শিশু একাডেমির সাঁতার প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে পায় রাষ্ট্রপতি পদক।

রাব্বী বলে, সাঁতারের মাধ্যমে বিশ্বজয়ের স্বপ্ন দেখছে সে। তার প্রথম স্বপ্ন ছিল বাংলা চ্যানেল পাড়ি দেওয়া। সাড়ে ১৩ বছর বয়সে সেই রেকর্ড ভেঙে আগামীতে তার স্বপ্ন ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি এবং অলিম্পিক গেমসে দেশের হয়ে সোনা জয়।