বাংলাবাজার ঘাটের রেস্তোরাঁগুলো ক্রেতাশূন্য

পদ্মা সেতুর দর্শনার্থীদের কথা চিন্তা করে অল্প কিছু রেস্তোরাঁ খোলা রাখা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বাংলাবাজার ঘাটে
ছবি: প্রথম আলো

পদ্মা সেতুর উদ্বোধন হয়েছে ২৫ জুন। এর এক দিন আগেই বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌপথে যাত্রী পারাপার বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর একে একে বাংলাবাজার ঘাটের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে নীরবতা নেমে এসেছে। এর মধ্যে ৫০টি ছোট-বড় রেস্তোরাঁ ছিল। তবে ঘাটে লোক না থাকায় গত কয়েক দিনে প্রায় সব রেস্তোরাঁ বন্ধ হয়ে গেছে।

মাঝেমধ্যে পদ্মা সেতু দেখতে আসা কিছু মানুষ আসেন ঘাটে। তাঁদের জন্য ওই ঘাটে পাঁচটি খাবার হোটেল খোলা রাখা হয়েছে। তবে তাঁদেরও বেচাকেনাও ভালো নয়।

দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌপথ ব্যবহার করে ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় যাতায়াত করতেন। বাংলাবাজার ঘাটটি মাদারীপুরের শিবচরে, আর শিমুলিয়া ঘাটটি মুন্সিগঞ্জের লৌহজং উপজেলায় অবস্থিত। ৩৬ বছর আগে নৌপথটি চালু করা হয়। নৌপথে ফেরি, লঞ্চ ও স্পিডবোটে পদ্মা নদী পারাপার হতো মানুষ। এর পর বাংলাজার ঘাট থেকে বাসে করে দক্ষিণের জেলাগুলোতে মানুষ যাতায়াত করতেন। এ ঘাট ব্যবহার করে প্রতিদিন লক্ষাধিক মানুষ যাতায়াত করতেন। ফলে ঘাটকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছিল সেখানে। তবে ২৬ জুন থেকে তাঁরা পদ্মা সেতু ব্যবহার করে তুলনামূলক কম সময়ে যাতায়াত করছেন। ফলে ঘাটকেন্দ্রিক ব্যবসাগুলো গত কয়েক দিনে বন্ধ হয়ে গেছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলাবাজার ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, টার্মিনালে নৌযানগুলো নোঙর করে রাখা হয়েছে। আর ঘাটের আশপাশের অধিকাংশ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে তালা ঝুলছে। একসময়ের প্রাণচঞ্চল ঘাট এখন সুনশান। ঘাট এলাকায় শুধু পাঁচটি হোটেল ও দুটি চায়ের দোকান খোলা থাকতে দেখা গেছে। পদ্মা সেতু দেখতে আসা কিছু মানুষ নদী শাসনের বাঁধ দেখতে এসে বাংলাবাজার ঘাটে আসছেন। এসব দর্শনার্থীদের অনেকে হোটেলগুলোতে খাওয়াদাওয়া করছেন।

ঘাট এলাকার রাজ হোটেলের মালিক সিরাজ ফকির ২০ বছর আগে রেস্তোরাঁ ব্যবসা শুরু করেন শিবচরের কাওরাকান্দি ঘাটে। ব্যবসার টাকা দিয়েই তাঁর পরিবার চলে। অসুস্থতার কারণে পাঁচ বছর ধরে ব্যবসা দেখছে ছেলে আমানত হাসান।

আমানত হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘দিনরাত ২৪ ঘণ্টা আমাদের হোটেল খোলা থাকত। এক মিনিটের জন্যও বিশ্রামের সুযোগ ছিল। কিন্তু এখন আর ক্রেতাই নাই। গত কয়েক দিনে ২০ জন শ্রমিককে বাদ দিতে হয়েছে। এখন পদ্মা সেতু দেখতে আসা মানুষদের জন্য হোটেলটি খোলা রেখেছি।’

মোল্যা হোটেলের মালিক দুলাল মোল্যা প্রথম আলোকে বলেন, ‘১৫ বছরের হোটেল ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে। বড় মায়া হয়, ছেড়ে যেতে কষ্ট হচ্ছে। তাই এখনো প্রতিদিন হোটেল খুলি। পদ্মা সেতু দেখতে আসা কিছু মানুষ আমাদের হোটেলে খাবার খেতে আসেন। কিন্তু শ্রমিকদের খরচ ওঠে না। তাই ১২ জন শ্রমিক ছেড়ে দিয়েছি। এখন এভাবে কতদিন চলতে পারব বুঝতে পারছি না।’