বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌপথে ৫ ফেরি দিয়ে চলছে পারাপার
মাদারীপুরের বাংলাবাজার ও মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া নৌপথে ফেরি চলাচল এখনো পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি। পদ্মায় এখনো বেশ স্রোত থাকায় ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ফেরি সেবা চালু আছে এই নৌপথে। একই সঙ্গে নৌপথে চলাচলরত পাঁচটি ফেরিতে হালকা যানবাহন লোড নেওয়া হচ্ছে। ভারী যানবাহনগুলো পারাপারে বিকল্প নৌপথ ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছে ঘাট কর্তৃপক্ষ।
পদ্মা নদীতে তীব্র স্রোতের কারণে টানা ৪৭ দিন ফেরি চলাচল বন্ধ থাকার পর গতকাল সোমবার উভয় ঘাট থেকে চারটি কে-টাইপের ফেরি হালকা যানবাহন নিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে ছাড়া হয়। সফলভাবে ফেরি চারটি উভয় ঘাটে পৌঁছালে আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ফেরি চলাচল শুরু করে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি)।
ফেরিঘাট সূত্র জানায়, বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌপথে ১৮ থেকে ২০টি ফেরি আছে। পদ্মায় এখনো ঘণ্টায় ৫ থেকে ৬ কিলোমিটার স্রোতের গতিবেগ থাকায় দুর্ঘটনা এড়াতে রো রো ও ডাম্ব ফেরি বন্ধ আছে। চালু রাখা হয়েছে তিনটি কে-টাইপের ফেরি ও দুটি ছোট ফেরি। এসব ফেরি সকাল ৬টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত শুধু হালকা যানবাহন (প্রাইভেট কার, জিপ, মাইক্রোবাস, অ্যাম্বুলেন্স) লোড নেওয়া হচ্ছে। পণ্যবাহী ট্রাক ও যাত্রীবাহী সব বাসকে বিকল্প নৌপথ হিসেবে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ও মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া হয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে বিআইডিব্লউটিসি।
বিআইডব্লিউটিসি বাংলাবাজার ফেরিঘাটের ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, সকাল থেকে ৫টি ফেরি উভয় ঘাট থেকে ছাড়া হয়েছে। ফেরিগুলো কোনো ধরনের সমস্যা ছাড়াই ঘাটে পৌঁছাতে পারছে। তবে ফেরিগুলোয় হালকা যানবাহন লোড দেওয়া হচ্ছে। ভারী কোনো যানবাহন আপাতত লোড করা হচ্ছে না। ভারী যানবাহন নিয়ে স্রোতের বিপরীতে ফেরি চলতে গিয়ে দুর্ঘটনার কবলে পড়তে পারে। সেই আশঙ্কা থেকেই ভারী যানবাহন নেওয়া হচ্ছে না।
এদিকে ফেরি চলাচল সীমিত হওয়ায় উভয় ঘাটেই পারাপারের জন্য বেশ কিছু সময় অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে যানবাহনের চালক ও যাত্রীদের। এই নৌপথে পণ্যবাহী ট্রাকসহ ভারী যানবাহন পারাপারের জন্য এসে বিপাকে পড়ছে। পরে ফিরে যেতে হচ্ছে অন্য পথে। এতে সময় ও খরচ বেশি লাগছে।
বরিশাল থেকে আসা চট্টগ্রামগামী পণ্যবাহী ট্রাকের চালক ইকবাল হোসেন বলেন, ‘রাতে ফেরি চালু হওয়ার কথা শুনে এই রুটে আসি। এসে কিছুক্ষণ অপেক্ষা থাকার পর ঘাটের সিরিয়ালম্যান জানান, ট্রাক ফেরিতে লোড নেবে না। অথচ চোখের সামনে দেখি ছোট গাড়ি, পিকআপ লোড নিচ্ছে। গতকালও মালবোঝাই ট্রাক ফেরিতে পার করছে। আজ থেকে আবার নতুন সিদ্ধান্ত। মানে, আমাদের ট্রাকচালকদের দুর্ভোগে ফেলানো। উল্টো পথ ঘুরে যেতে আমাদের সময় ও খরচ দুটোই দ্বিগুণ লাগে।’
খুলনা থেকে আসা প্রাইভেট কারের চালক সোহরাব সরদার বলেন, ‘ফেরি কম চলে। ঘাটে এসে সকাল আটটা থেকে বসে আছি। ফেরির সিরিয়াল পাচ্ছি না। ভিআইপি লাইনে না থাকলে ফেরি আসা মাত্রই ওঠা যায় না। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা আর দুর্ভোগের শেষ নেই আমাদের।’
আজ সকালে সরেজমিন বাংলাবাজার ফেরিঘাটে দেখা যায়, ফেরি চালু হওয়ার খবরে সকাল থেকেই ঘাটে পারাপারের জন্য অপেক্ষায় আছে মাইক্রোবাস, প্রাইভেট কার, মোটরসাইকেল, পিকআপ ভ্যান, কাভার্ড ভ্যানসহ বেশ কিছু যানবাহন। ফেরি চলাচল সীমিত হওয়ায় যানবাহনের চালক ও যাত্রীদের বেশ কিছু সময় ঘাটে অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে। তবে ঘাটে অতিরিক্ত ভিড় বা চাপ নেই।
বাংলাবাজার ঘাটের ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক জামালউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, সকাল থেকে ফেরি চালু থাকায় যানবাহনের চাপ তেমন নেই। কিছুক্ষণ পরপরই ফেরি ঘাটে ভিড়ছে। ছোট গাড়ি আসা মাত্রই ফেরিতে উঠতে পারছে। অ্যাম্বুলেন্সসহ জরুরি যানবাহন অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ফেরিতে ওঠানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তবে ভারী যানবাহনগুলো ফেরিতে উঠতে দেওয়া হচ্ছে না। বাস ও পণ্যবাহী ট্রাককে বিকল্প নৌপথে যাওয়ার জন্য বলা হচ্ছে।