বাইরে থেকে আটকানো ছিল দরজা, ভেতরে মা ও দুই সন্তানের লাশ

নরসিংদীর বেলাবতে ঘরের ভেতর থেকে মা ও দুই শিশুর রক্তাক্ত লাশ উদ্ধারের পর কান্নায় ভেঙে পড়েন এ স্বজন
ছবি: প্রথম আলো

নরসিংদীর বেলাব উপজেলায় বাইরে থেকে আটকানো মাটির দুটি ঘর থেকে এক নারী ও তাঁর দুই শিশুসন্তানের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। আজ রোববার বেলা ১১টার দিকে উপজেলার পাটুলী ইউনিয়নের বাবলা গ্রামের বাড়ি থেকে লাশ তিনটি উদ্ধার করা হয়। কী কারণে কারা এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে, সে বিষয়ে কিছু বলতে পারেনি পুলিশ।

নিহত তিনজন হলেন উপজেলার পাটুলী ইউনিয়নের বাবলা গ্রামের গিয়াস উদ্দিন শেখের স্ত্রী রাহিমা বেগম এবং তাঁদের দুই সন্তান রাব্বি শেখ (১৩) ও রাকিবা শেখ (৭)। রাহিমা বেগম এলাকায় কাপড় সেলাইয়ের দরজি হিসেবে পরিচিত। রাব্বি স্থানীয় একটি মাদ্রাসার ছাত্র ও রাকিবা স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করত।

পুলিশ ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গিয়াস উদ্দিন শেখ গাজীপুরের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে টেন্ডারের মাধ্যমে রঙের কাজ করেন। তিনি বেশির ভাগ সময় গাজীপুরে অবস্থান করেন। আর দুই সন্তানকে নিয়ে রাহিমা বেগম গ্রামের এ বাড়িতে থাকতেন। গতকাল শনিবার বিকেলে গিয়াস উদ্দিন গাজীপুরের কর্মস্থলে যান। স্ত্রী ও দুই সন্তানের লাশ পড়ে থাকার খবর পেয়ে তিনি আজ সকাল ১০টার দিকে গাজীপুর থেকে বাড়িতে যান।

স্থানীয় লোকজন জানান, আজ সকাল আটটার দিকে স্থানীয় এক নারী বানাতে দেওয়া পোশাক আনতে যান রাহিমা বেগমের বাড়িতে। বাইরে থেকে দরজা আটকানো দেখে বেশ কয়েকবার নাম ধরে সজোরে ডাকাডাকি করেন তিনি। কিন্তু আশপাশ থেকেও কারও কোনো সাড়াশব্দ পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে কৌতূহলবশত দরজার নিচ দিয়ে ঘরের ভেতরে তাকান তিনি। এ সময় তিনি রক্ত দেখতে পেয়ে চিৎকার দেন। তখন স্থানীয় লোকজন ও প্রতিবেশীরা এসে ওই ঘরের একটি জানালা ভেঙে ঘরের ভেতর লাশ পড়ে থাকতে দেখেন। এরপর বেলাব থানা-পুলিশকে খবর দেওয়া হয়।

সকাল সাড়ে নয়টার দিকে বেলাব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাফায়েত হোসেনের নেতৃত্বে পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। পরে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নরসিংদীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) সাহেব আলী পাঠান ঘটনাস্থলে আসার পর লাশ উদ্ধারের কাজ শুরু হয়। এ সময় দুই ঘরের দরজা খুলে নিহত তিনজনের লাশ উদ্ধার করা হয়।

নরসিংদীর বেলাব উপজেলার পাশাপাশি এ দুটি ঘর থেকে মা ও দুই সন্তানের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ
ছবি: প্রথম আলো

বেলাব থানার ওসি সাফায়েত হোসেন জানান, গতকাল দিবাগত রাতের কোনো এক সময় কে বা কারা তাঁদের তিনজনকে হত্যা করে বাইরে থেকে দরজা আটকে দিয়ে পালিয়ে গেছে। তাঁদের শরীরে ধারালো অস্ত্রের একাধিক আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। ওই নারীর শরীরে আঘাতের চিহ্ন সবচেয়ে বেশি। তাঁর মাথায়, গলায়, বুকে ও হাতে উপর্যুপরি আঘাত করা হয়েছে। তাঁদের শ্বাসরোধে হত্যার আলামতও দেখা যাচ্ছে। পুলিশ সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করছে। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ নরসিংদী সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হবে।

গিয়াস উদ্দিন শেখের অভিযোগ, ১০-১২ দিন আগে বাড়িতে কয়েকটি গাছ কেটেছিলেন তিনি। এ নিয়ে তখন তাঁর এক চাচাতো ভাইয়ের সঙ্গে ঝগড়া হয়। ওই চাচাতো ভাই তাঁদের গাছগুলো বিক্রি করতে দেননি। এ নিয়ে তর্কবিতর্ক বাড়লে তিনি হত্যার হুমকিও দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ করেন গিয়াস উদ্দিন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, গিয়াস উদ্দিন শেখের বাড়িতে পাশাপাশি লাগোয়া দুটি মাটির ঘর। পশ্চিম দিকের ঘরটিতে থাকতেন রাহিমা বেগম। দক্ষিণ দিকের ঘরে থাকত রাব্বি ও রাকিবা। নিজ নিজ ঘরেই তাদের হত্যা করা হয়েছে। রাহিমা বেগমের রক্তাক্ত লাশ পড়ে ছিল ঘরের মেঝেতে। অন্যদিকে রাব্বি ও রাকিবার লাশ পড়ে ছিল তাদের খাটের ওপরে। বাড়িটির সামনেই বিশাল খোলা মাঠ। অন্তত ৫০ গজ দূরত্বে দুই দিকে দুটি বাড়ি আছে। আশপাশে আর কোনো বাড়িঘর নেই।

নরসিংদীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) সাহেব আলী পাঠান জানান, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ইতিমধ্যে তিনজনকে আটক করা হয়েছে। খুব দ্রুতই এই তিন হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্‌ঘাটন করা যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।