বাউফলে বাঁচার আকুতি অগ্নিদগ্ধ শিশু রাব্বানির

শিশুটির নাম রাব্বানি বেগম। বয়স তার আট বছর। অগ্নিদগ্ধ হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় কাতরাচ্ছে আর বলছে, ‘তোমরা আমারে বাঁচাও, আমি বাঁচতে চাই।’ শিশুটির বাঁচার আকুতি দেখে উপস্থিত সবাইকে কাঁদতে দেখা যায়।

আজ শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এমন দৃশ্য দেখা যায়।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক এ এস এম সায়েম বলেন, শিশুটির শরীরের প্রায় ৭০ শতাংশ পুড়ে গেছে। এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তার চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব নয়। দীর্ঘ মেয়াদে চিকিৎসা নিতে হবে। এতে প্রায় তিন থেকে চার লাখ টাকা ব্যয় হতে পারে। শিশুটিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে নেওয়ার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

শিশুটির বাড়ি উপজেলার কেশবপুর ইউনিয়নের মমিনপুর গ্রামে। বাবা মোক্তার আলী মৃধা মারা গেছেন চার বছর আগে। মায়ের নাম কুলসুম বেগম। ভিক্ষা করে সংসার চালান তিনি। তাঁর পক্ষে শিশুটির চিকিৎসার ব্যয় বহন করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়।
স্থানীয় বাসিন্দা ও শিশুটির মায়ের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত শনিবার সকালে প্রতিদিনের মতো চার বছরের কন্যাশিশু জামিলাকে নিয়ে ভিক্ষা করতে বেরিয়ে যান রাব্বানির মা কুলসুম। বড় বোন মৌসুমিও ঘরে ছিলেন না। এ সময় চুলায় চাল ভাজতে যায় রাব্বানি। একপর্যায়ে চুলার আগুন তার পরিধেয় পোশাকে লেগে শরীর পুড়ে যায়। শিশুটির চিৎকার শুনে বাড়ির লোকজন শিশুটিকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে ভর্তি করান।

মমিনপুর এলাকার মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ‘কয়েক দিন আগেও ফুটফুটে এই শিশুটি ছিল সদা হাস্যোজ্জ্বল ও প্রাণবন্ত। অর্থাভাবে শিশুটির জীবনপ্রদীপ নিভু নিভু করছে।’ তিনি শিশুটির চিকিৎসার ব্যয় বহন করতে সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার জন্য আহ্বান জানান এবং প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

রাব্বানির মা কুলসুম বেগমের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাব্বানির বাবা খেয়ার নৌকা চালাতেন। তাঁর অল্প আয় দিয়েই তাঁদের সংসার চলত। চার বছর আগে তিনিও মারা যান। এরপর ভিক্ষা করে সংসার চালানো ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না কুলসুমের।
কুলসুম বলেন, ‘ভিক্ষা কইরা সংসার চালাই। মাইয়াডার গাও (শরীর) পুইড়া গ্যাছে। অর কান্দোন দ্যাখলে আমি ঠিক থাকতে পারি না। ক্যামনে আমার মাইয়াডারে বাঁচামু? কই টাহা (টাকা) পামু? তোমরা (সাংবাদিক) আমার মাইয়াডারে বাঁচাও। এসব কথা বলে হাউমাউ করে কাঁদতে থাকেন কুলসুম। তাঁকে থামানো যাচ্ছিল না।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাকির হোসেন বলেন, ‘খুবই হৃদয়বিদারক। বিষয়টি শুনে শিশুটিকে দেখতে গিয়েছি। ঢাকায় নেওয়ার জন্য ১০ হাজার টাকা দিয়েছি। এরপরও সাধ্য অনুযায়ী পাশে থাকার চেষ্টা করব।’ তিনি শিশুটিকে বাঁচাতে বিত্তশালীদের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানান।