বাকেরগঞ্জে মুঠোফোন চুরির অভিযোগে হাত-পা বেঁধে শিশুকে নির্যাতন

বরিশালের বাকেরগঞ্জে মুঠোফোন চুরির অভিযোগ তুলে জুঁই আক্তার (৯) নামের এক শিশুকে হাত-পা বেঁধে নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ সময় শিশুটির কাছ থেকে চুরির স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য তার নাক-মুখে পানি ঢেলে নির্যাতন করা হয়। গত বৃহস্পতিবার বিকেলে এই নির্যাতনের ঘটনার পর শিশুটি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে প্রথমে বাকেরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং পরে সন্ধ্যায় বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

এ ঘটনায় বাকেরগঞ্জ থানায় গতকাল শুক্রবার সকালে পাঁচজনকে আসামি করে মামলা হয়েছে। ওই দিনই তিন আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এর মধ্যে দুই আসামিকে শনিবার আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। অন্য দুই আসামিকে গ্রেপ্তারে শনিবার দুপুরেও বাড়িতে অভিযান চালানো হয়েছে। কিন্তু তাঁদের পাওয়া যায়নি।

জুঁই আক্তার ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার দিনমজুর বশির হাওলাদারের মেয়ে। শিশুটির পরিবার জানায়, সংসারে টানাপোড়েনের কারণে জুঁই তার নানার বাড়ি বাকেরগঞ্জ উপজেলার নীলগঞ্জ গ্রামে থেকে পড়াশোনা করে। সে নীলগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী। বৃহস্পতিবার বিকেলে নানাবাড়ির প্রতিবেশী ওমর আলী সাঈদ তাঁর মোবাইল খুঁজে পাচ্ছিলেন না। পরে ওমর আলী সাঈদ তাকে ডেকে বাড়ির ভেতরে নিয়ে যান। সেখানে উপস্থিত হন সাঈদের চাচা হেলাল চৌকিদার, আলতাফ চৌকিদার, জাকির মীর ও শাহাবুদ্দিন। তাঁরা জুঁইয়ের হাত-পা বেঁধে লাঠি দিয়ে পেটাতে থাকেন।

যতবার আমি জানি না বলছি, ততবার জোরে জোরে ওনারা আমাকে লাঠি দিয়ে জোরে জোরে আঘাত করেন। একপর্যায়ে তাঁরা আমাকে বাথরুমে নিয়ে নাক-মুখে পানি ঢালা শুরু করেন। আমি দম নিতে পারছিলাম না, আমার দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল। এভাবে অনেকক্ষণ চলতে থাকে। আমি তাঁদের বারবার বলেছি মোবাইল আমি দেখিনি। আমাকে ছেড়ে দেন। তবু তাঁরা মারধর করেই গেছেন।
জুঁই আক্তার, নির্যাতনের শিকার শিশু

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শিশুটি শনিবার বিকেলে সাড়ে চারটার দিকে প্রথম আলোকে বলে, ‘যতবার আমি জানি না বলছি, ততবার জোরে জোরে ওনারা আমাকে লাঠি দিয়ে জোরে জোরে আঘাত করেন। একপর্যায়ে তাঁরা আমাকে বাথরুমে নিয়ে নাক-মুখে পানি ঢালা শুরু করেন। আমি দম নিতে পারছিলাম না, আমার দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল। একপর্যায়ে তাঁরা পানি ঢালা বন্ধ করেন। দম নিতে শুরু করলে কিছুক্ষণ পর আবার পানি ঢালা শুরু করেন। এ সময় মোবাইল চুরির কথা স্বীকার না করলে আরও কঠোর শাস্তি দেবেন বলে আমাকে তাঁরা শাসাতে থাকেন। এভাবে অনেকক্ষণ চলতে থাকে। আমি তাঁদের বারবার বলেছি মোবাইল আমি দেখিনি। আমাকে ছেড়ে দেন। তবু তাঁরা মারধর করেই গেছেন। পরে চিৎকার শুনে আমার খালা এসে আমাকে উদ্ধার করেন।’

জুঁইয়ের বাবা বশির হাওলাদার বলেন, ‘জুঁই নানাবাড়িতে থাকে। বৃহস্পতিবার রাতে জানতে পারি, ওমর আলী সাঈদ ও তাঁর স্বজনেরা মেয়েকে মোবাইল চুরির অপবাদ দিয়ে হাত-পা বেঁধে পিটিয়েছেন। শুনেছি, হারিয়ে যাওয়া মোবাইল ফোনের দাম আড়াই হাজার টাকা। আমরা গরিব মানুষ। তারপরও তারা বললে ধারদেনা করে টাকা দিতাম। কিন্তু ওরা আমার মেয়েটাকে এত বর্বরভাবে নির্যাতন করল...।’

শিশুটিকে নির্যাতনের ঘটনায় শুক্রবার সকালে বাকেরগঞ্জ থানায় পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন বশির হাওলাদার। এরপর ওই রাতের মধ্যেই পুলিশ অভিযান চালিয়ে তিন আসামিকে গ্রেপ্তার করে।

বাকেরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবুল কালাম শনিবার বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, এ ঘটনায় শুক্রবার সকালে পাঁচজনকে আসামি করে মামলা হয়েছে। আসামি ওমর আলী সাঈদ, সাঈদের চাচা হেলাল চৌকিদার ও শাহাবুদ্দিন সাগরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্য দুই আসামি আলতাফ চৌকিদার ও জাকির মীরকে গ্রেপ্তারে দুপুরেও বাড়িতে অভিযান চালানো হয়েছে। কিন্তু তাঁদের পাওয়া যায়নি। তাঁদের ধরার জন্য বিভিন্ন স্থানে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। গ্রেপ্তার তিনজনের মধ্যে দুজনকে শনিবার দুপুরে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। গ্রেপ্তার অন্য অভিযুক্ত ১৪ বছর বয়সী কিশোর। সে এসএসসি পরীক্ষার্থী। তার বাবা নেই। বৃদ্ধ মা রয়েছেন। তাই তাকে থানার শিশুবান্ধব কর্মকর্তা ও উপজেলা প্রবেশন কর্মকর্তার মাধ্যমে মায়ের জিম্মায় দেওয়া হয়েছে।