বাঘা যতীনের ভাস্কর্য ভাঙচুর: যুবলীগ নেতাসহ তিনজনকে রিমান্ডে নিতে পারছে না পুলিশ

ভাঙচুরের পর ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের নেতা বিপ্লবী বাঘা যতীনের ভাস্কর্য । কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে
ফাইল ছবি

কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে বিপ্লবী বাঘা যতীনের ভাস্কর্য ভাঙচুরের মামলায় আসামি যুবলীগ নেতাসহ তিনজনকে রিমান্ডে নিতে পারছে না পুলিশ। রিমান্ড মঞ্জুরের পরদিন রিমান্ড বাতিলের আবেদন করেন আসামিপক্ষের আইনজীবী সাহেদুজ্জামান খোকন।
এদিকে আজ বৃহস্পতিবার কুষ্টিয়া অবকাশকালীন অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ-২ আদালতের বিচারক তারেক আজিজ রিমান্ড বাতিলের শুনানি শেষে আগে দেওয়া প্রত্যেক আসামির রিমান্ডের আদেশ বহাল রাখেন।

সন্ধ্যায় কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মজিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, আসামিপক্ষের আইনজীবী রিমান্ড বাতিলের আবেদন করেছিলেন। ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ১৫ দিনের সময় দিয়েছেন আদালত। আইনি জটিলতার কারণে আসামিদের রিমান্ডে নেওয়া যাচ্ছে না।

কুষ্টিয়া আদালতের সরকারি কৌঁসুলি অনুপ কুমার নন্দী প্রথম আলোকে বলেন, অবকাশকালীন আদালতের আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে রিভিশন করার জন্য কুমারখালী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আবেদন করেন আসামিপক্ষের আইনজীবী। ম্যাজিস্ট্রেট তাঁদের ১৫ দিন সময় দেন।

আসামিপক্ষের আইনজীবী রিমান্ড বাতিলের আবেদন করেছিলেন। এ জন্য আসামিদের রিমান্ডে নেওয়া সম্ভব হয়নি।

১৭ ডিসেম্বর রাতে কুমারখালী উপজেলার কয়া গ্রামে বাঘা যতীনের ভাস্কর্যটি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে, আনিচুর রহমানের নেতৃত্বে কয়েকজন যুবক সরাসরি ভাস্কর্য ভাঙায় অংশ নিয়েছেন। কয়া মহাবিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদ কমিটি দ্বন্দ্বে আনিচ এ ঘটনা ঘটিয়েছেন। এ ঘটনার পরের দিন শুক্রবার বিকেলে কয়া কলেজের অধ্যক্ষ হারুন অর রশীদ বাদী হয়ে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করেন।

আসামিরা হলেন কুমারখালী উপজেলার কয়া ইউনিয়নের রায়ডাঙ্গার মো. মহিউদ্দিনের ছেলে আনিচুর রহমান (৩২), শাহাব উদ্দিনের ছেলে মো. হৃদয় আহম্মেদ (২০) ও চাপড়া ইউনিয়নের ছেঁউড়িয়া মণ্ডলপাড়া এলাকার নাজিম উদ্দিনের ছেলে মো. সবুজ হোসেন (২০)। আনিচুর কয়া ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি। তবে ঘটনার পর তাঁকে দল থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও কুমারখালী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রাকিবুল হাসান আসামিদের পুলিশি হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ড আবেদন করেন। গত সোমবার শুনানি শেষে কুষ্টিয়া সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সেলিনা খাতুন তিন আসামির প্রত্যেককে তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

পুলিশ সূত্র জানায়, রিমান্ড মঞ্জুরের পরদিন আসামিপক্ষের আইনজীবী সাহেদুজ্জামান খোকন রিমান্ড বাতিল চেয়ে আবেদন করেন। আজ বৃহস্পতিবার সেই আবেদন না মঞ্জুর করে রিমান্ড বহাল রাখেন আদালত।

ভাস্কর্য ভাঙচুরের ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃতদের কোনো মদদদাতা আছে কি না, তা খুঁজে বের করতে আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ প্রয়োজন। কিন্তু আসামিপক্ষের আইনজীবীর রিভিশন আবেদনের কারণে তা হচ্ছে না।
জয়দেব কুমার বিশ্বাস, রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী জয়দেব কুমার বিশ্বাস বলেন, ভাস্কর্য ভাঙচুরের ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃতদের কোনো মদদদাতা আছে কি না, তা খুঁজে বের করতে আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ প্রয়োজন। কিন্তু আসামিপক্ষের আইনজীবীর রিভিশন আবেদনের কারণে তা হচ্ছে না। রিমান্ড হলে হয়তো আরও অনেক নেতার নাম চলে আসতে পারে, এ জন্য অসৎ উদ্দেশ্যে এসব করা হচ্ছে।

এর আগে ৪ ডিসেম্বর রাতে কুষ্টিয়া শহরের পাঁচ রাস্তার মোড়ে বঙ্গবন্ধুর নির্মাণাধীন ভাস্কর্য ভাঙচুর করা হয়। ওই ঘটনায় পুলিশ আসামি মাদ্রাসার দুই শিক্ষককে চার দিন করে ও দুই ছাত্রকে পাঁচ দিন রিমান্ডে নিয়েছিল। পরে তাঁরা সবাই ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন।