বাজার ও কবরস্থান নদীগর্ভে বিলীনের মুখে

অবৈধভাবে মেঘনা নদী থেকে বালু উত্তোলন করছে স্থানীয় প্রভাবশালী মহল। গোয়ালনগর, নাসিরনগর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ৯ সেপ্টেম্বর
শাহাদৎ হোসেন

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলায় খননযন্ত্রের মাধ্যমে মেঘনা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এর প্রভাবে উপজেলার গোয়ালনগর বাজার, চর পিয়ালপুর ও শত বছর পুরোনো কবরস্থান নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার উপক্রম হয়েছে। এ বিষয়ে স্থানীয় ১৬ ব্যক্তি জেলা প্রশাসক হায়াত-উদ-দৌলা খানের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। গোয়ালনগর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আজহারুল ইসলাম ও তাঁর ভাই মাজহারুল ইসলামের নির্দেশে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।

এদিকে ৭ সেপ্টেম্বর ঘটনাস্থলে গিয়ে বালু উত্তোলনে বাধা দিলে বালু উত্তোলনকারী প্রভাবশালী মো. শাহেদুজ্জামান গোয়ালনগর ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) আতিকুর রহমানসহ দুই কর্মচারীকে মাটিতে পুঁতে ফেলার হুমকি দেন। এ বিষয়ে তিনি উপজেলা ভূমি কার্যালয়ে একটি প্রতিবেদন জমা দেন।

গত ২৫ আগস্ট জেলা প্রশাসকের কাছে দেওয়া অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার গোয়ালনগর ইউনিয়নের দক্ষিণদিয়া এলাকার গোয়ালনগর ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়ের চর পিয়ালপুর মৌজার মেঘনা নদী থেকে খননযন্ত্রের মাধ্যমে অবৈধভাবে প্রতিদিন লাখ টাকার বালু উত্তোলন করে বিক্রি করছেন স্থানীয় প্রভাবশালী মো. শাহেদুজ্জামান, মিন্দি আলী ও আশিকুজ্জামান। গোয়ালনগর ইউপি চেয়ারম্যান আজহারুল ইসলাম এবং তাঁর ছোট ভাই নাসিরনগর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের স্বাস্থ্য সহকারী মাজহারুল ইসলামের নির্দেশে ওই প্রভাবশালী মহল বালু উত্তোলন করছে। এতে ইউনিয়নের গোয়ালনগর বাজার, শতবর্ষী সরকারি কবরস্থান ও কৃষকদের শত শত বিঘা জমি নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার মুখে।

উপজেলা ভূমি কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা ও স্থানীয় লোকজন বলেন, বালু উত্তোলনের কারণে গোয়ালনগর বাজারের সীমানাপ্রাচীর হেলে পড়েছে। বাজারের পশ্চিম দিকে শত বছরের পুরোনো কবরস্থানটিও হুমকির মধ্যে পড়েছে। নদীর মধ্যে থাকা চরটিও নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। প্রতিদিন ৪০ থেকে ৫০ হাজার ফুট বালু উত্তোলন করা হচ্ছে।

আজ বুধবার বেলা ১১টার দিকে সরেজমিনে দেখা যায়, সামিয়া ড্রেজিং প্রকল্পের একটি খননযন্ত্রের মাধ্যমে গোয়ালনগরের শাহেদুজ্জামান বালু উত্তোলন করছেন। খননযন্ত্রের পাশেই বড় স্টিলের একটি নৌকায় বালু উত্তোলন করে রাখা হচ্ছে। পাশে আরও একটি খালি বড় স্টিলের নৌকা আছে। সেখানে অবস্থান করার প্রায় ২০ মিনিট পর বালু ভরা পূর্ণ হয়ে গেলে স্টিলের নৌকাটি সরিয়ে আরও একটি খালি স্টিলের নৌকা ভেড়ানো হয়। পরে সেটিতে বালু উত্তোলন করে রাখা শুরু করেন শ্রমিকেরা।

সেখানে কথা হয় অভিযুক্ত বালু উত্তোলনকারী মো. শাহেদুজ্জামানের সঙ্গে। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘ইউপি চেয়ারম্যান এখান থেকে বালু তোলার নির্দেশ দিয়েছেন। তাই আমি দুই লাখ টাকায় ড্রেজার ভাড়া এনে বালু উত্তোলন করা শুরু করেছি। ২০ থেকে ২৫ দিন বালু উত্তোলন করছি। সকাল থেকে দুপুর ও বিকেল মিলিয়ে প্রতিদিন ২০ থেকে ২৫ হাজার ফুট বালু উত্তোলন করা হয়। এখন পর্যন্ত তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার ফুট বালু উত্তোলন করা হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, বাজারের সামনে নদীর মধ্যে এক থেকে দুই কিলোমিটার চর জেগে উঠেছে। চেয়ারম্যানের নির্দেশেই এ চর থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে।

গোয়ালনগর ইউপির চেয়ারম্যান আজহারুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘এসব অভিযোগ সত্য নয়। বাজারের সামনে একটি চর জেগে উঠেছে। এ জন্য তাঁরা বালু উত্তোলন করছে। তবে এর সঙ্গে আমার ভাই ও আমি জড়িত না।’

নাসিরনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাজমা আশরাফী বলেন, বালু উত্তোলনের সত্যতা পাওয়া গেছে। ডেকে এনে নিষেধ করার পরও তাঁরা বালু উত্তোলন করছেন। আর বাধা দেওয়ায় প্রভাবশালীরা ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছেন। এ বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জেলা প্রশাসক হায়াত-উদ-দৌলা খান প্রথম আলোকে বলেন, বালু উত্তোলনকারীদের আটক করতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের একটি দল একাধিকবার সেখানে গেলেও কাউকে পায়নি। তবে এ বিষয়ে শিগগিরই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।