বাজারে রাসায়নিক দিয়ে পাকানো আম, স্বাস্থ্যঝুঁকিতে ক্রেতারা

বরিশাল নগরের ফলপট্টি এলাকার কয়েকটি ফলের দোকান ও আড়ত থেকে শুক্রবার বিকেলে রাসায়নিক দিয়ে পাকানো আম জব্দ করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত
ছবি: প্রথম আলো

বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী ১৫ মে থেকে আম পাকতে শুরু করবে। কিন্তু বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের বাজারের এক সপ্তাহ ধরে ফলের দোকানে শোভা পাচ্ছে পাকা, টসটসে আম। এই আম দেখে লোভ সামলাতে পারেন না ক্রেতারা। ক্রেতাদের এই বাড়তি আগ্রহকে পুঁজি করে এসব আম ৩০০–৪০০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। কিন্তু বাড়িতে নিয়ে ভোক্তারা বুঝতে পারেন আসলে এগুলো পরিপক্ব আম নয়। অপরিপক্ব আম ক্ষতিকর কার্বাইড দিয়ে পাকানো হয়েছে। এসব আম কিনে প্রতিনিয়ত প্রতারিত হচ্ছেন ক্রেতারা।

বরিশাল নগরে ৩০ এপ্রিল বিকেলে নগরের ফলপট্টি ও পোর্ট রোড এলাকায় জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবদুল হাই ও রয়া ত্রিপুরার নেতৃত্বে পৃথক অভিযানে রাসায়নিক দিয়ে পাকানো ১৭৫ কেজি আম জব্দ করা হয়। এ সময় এসব আম বিক্রির অপরাধে ৩ জন ব্যবসায়ীকে ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করেন তাঁরা।
এ সময় মেসার্স বরিশাল ট্রেডার্স থেকে ৪৫ কেজি, আরিফ ফ্রুট কর্নার থেকে ৫৫ কেজি, নগরীর পোর্ট রোড এলাকায় অভিযান চালিয়ে দত্ত বাণিজ্যালয় থেকে ৭৫ কেজিসহ মোট ১৭৫ কেজি আম জব্দ করা হয়। পরে জব্দ করা এসব আম বিনষ্ট করা হয়েছে।

এর আগে গত ২৬ এপ্রিল বরগুনায় জেলা প্রশাসনের এক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে এ রকম ২০ ঝুড়ি আম ধ্বংস করা হয়। এ সময় কয়েকজন ব্যবসায়ীকে অর্থদণ্ড দেওয়া হয়। ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্দেশে পরীক্ষার জন্য এসব আম কাটলে দেখা যায়, অধিকাংশ আমের ভেতরে আঁটিই হয়নি। আবার কিছু কিছু আমে আঁটি অপরিপক্ব।

ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সাতক্ষীরা, রাজশাহীসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী অপরিপক্ব (কাঁচা) আম সংগ্রহ করে বেশি লাভের আশায় বিভিন্ন ক্ষতিকর রাসায়নিক দিয়ে পাকিয়ে আগাম বাজারে তুলছেন। ঢাকার পাইকারি বাজার থেকে এসব আম ছড়িয়ে পড়ছে দেশের বিভিন্ন জেলার খুচরা বাজারে। রমজানে এমনিতেই বিভিন্ন ফলের চাহিদা বেড়ে যায় বাজারে। তার ওপর আমের প্রতি ক্রেতাদের আলাদা একটা আগ্রহ আছে। এ কারণে রাসায়নিক দিয়ে পাকানো আম হাতের কাছে পেয়ে চড়া দামেও কিনছেন ক্রেতারা।

বরিশাল নগরের কয়েকজন ক্রেতা, যাঁরা এ ধরনের আম কিনে ঠকেছেন, তাঁদের সঙ্গে এ বিষয় নিয়ে কথা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে নগরের চৌমাথা এলাকার ক্রেতা আমির হোসেন বলেন, বাজারে টসটসে পাকা আম দেখে এবং ইফতারিতে আম খাবেন, এই ইচ্ছা থেকে তিনি গত বৃহস্পতিবার দুই কেজি আম কিনেছিলেন। কিন্তু বাসায় এনে কেটে দেখেন আমের বিচি অপরিপক্ব। দেখতে পাকা হলেও সেগুলো স্বাদে টক। এরপর বুঝতে পারেন তিনি প্রতারিত হয়েছেন।

রূপাতলীর বাসিন্দা আবদুর রাজ্জাক নামে আরেকজন ক্রেতা বলেন, ‘অনেক আশা করে আগাম পাকা আম কিনেছিলাম। কিন্তু তা খেতে পারিনি। দেখতে পাকা হলেও টক আর পানসে লাগে।’

বরিশাল জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবদুল হাই বলেন, ভোক্তারা অতিরিক্ত মূল্য দিয়ে এসব ক্ষতিকর রাসায়নিক দিয়ে পাকানো আম কিনে প্রতারিত হচ্ছেন। একই সঙ্গে এসব আম মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর। এ জন্য জেলা প্রশাসকের নির্দেশে এসব অসাধু ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করা হয়েছে। জনস্বার্থে এই অভিযান অব্যাহত থাকবে। এ ক্ষেত্রে তিনি সাধারণ ক্রেতাদের সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান।