উপজেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক মামুন রিমান্ডে

বাজিতপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মামুন
সংগৃহীত

কিশোরগঞ্জের বাজিতপুরে ব্যবসায়ী উমর চান হত্যা মামলায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মামুনের দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। সোমবার বিকেলে কিশোরগঞ্জ আদালতের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. আল মামুন এই আদেশ দেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) কিশোরগঞ্জ ইউনিটের পরিদর্শক মো. মজিবুর মামুনের পাঁচ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন। তিনি বলেন, ‘হত্যায় মামুনের সম্পৃক্ততার যথেষ্ট তথ্য আমাদের কাছে রয়েছে। যদিও গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকে তিনি এই বিষয়ে মুখে কুলুপ এঁটে রয়েছেন। সেই কারণে রিমান্ড প্রয়োজন ছিল।’

পিবিআই সূত্র জানায়, বাজিতপুরে ২০১৭ সালের ২৬ জুন ঈদুল ফিতরের রাতে খুন হন ব্যবসায়ী উমর চান (৩৫)। ওই হত্যা মামলায় এ পর্যন্ত গ্রেপ্তার দুই ব্যক্তি স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। তাতে মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে নাম উঠে এসেছে আবদুল্লাহ আল মামুনের নাম। ১১ নভেম্বর রাতে মামুনকে গ্রেপ্তার করা হয়। পিবিআই আরও জানায়, আসামিদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে জানা গেছে, ঘটনার দিন আবদুল্লাহ আল মামুনের নিয়োগকৃত পেশাদার খুনিরা মূলত নিহতের ছোট ভাই মো. লায়েছকে (৩৩) খুন করতে গিয়েছিলেন। এ সময় ঘরে মশারির ভেতর লায়েছের বড় ভাই উমর চান ঘুমিয়ে ছিলেন। ভুল করে তাঁকেই খুন করে আসেন খুনিরা।

আরও পড়ুন

বাজিতপুর আওয়ামী লীগের এই শীর্ষ নেতাকে গ্রেপ্তারের পরপরই ব্যবসায়ী উমর চান হত্যার ঘটনাটি এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে। উমর সান বলিয়ারদী ইউনিয়নের শিমুলতলা গ্রামের বাসিন্দা। ব্যবসায়িক সূত্রে তাঁর ছোট ভাই লায়েছের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতা মামুনের দীর্ঘদিনের সখ্য ছিল।

এ ঘটনায় পরদিন লায়েছ বাদী হয়ে বাজিতপুর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। ওই সময় এজাহারে একমাত্র নামীয় আসামি করা হয়েছিল পৌর শহরের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের দাঁড়িগাও গ্রামের মো. হেলিম নামের এক ব্যক্তিকে। হেলিম পেশায় রাজমিস্ত্রি।

কিছুদিন পর মামলাটি পিবিআইয়ের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ঘটনার সাড়ে তিন বছর পর গত ২২ অক্টোবর পিবিআই দাঁড়িগাও গ্রামের নান্টু মিয়া নামের এক ব্যক্তিকে আটক করে। নান্টু স্থানীয়ভাবে ‘পেশাদার কিলার’ (খুনি) হিসেবে পরিচিত। নান্টু ওই দিনই আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। এই জবানবন্দির সূত্র ধরে আটক করা হয় ৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আল আমিনকে। আটকের পরদিন আল আমিনও আদালতে স্বীকারোক্তি দেন। দুজনের স্বীকারোক্তিতে হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী আবদুল্লাহ আল মামুনের নাম উঠে আসে। জবানবন্দিতে আসামিরা জানান, ব্যবসায়িক লেনদেনের সূত্র ধরে বিরোধে লায়েছকে খুন করতে চেয়েছিলেন মামুন। সেই কারণে দুই লাখ টাকার বিনিময়ে খুনিদের ভাড়া করা হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী রাতে ঘরে ঢুকে মশারির নিচে একজনকে ঘুমিয়ে থাকতে দেখে তাঁরা খুন করে চলে আসেন। পরবর্তী সময়ে বুঝতে পারেন, টার্গেট ভুল হয়েছে। ছোট ভাইকে খুন করতে গিয়ে বড় ভাইকে খুন করে ফেলেন খুনিরা।

মামুন আমার পাওনা টাকা দিতে চাচ্ছিলেন না। এই নিয়ে নানা সময় চোখ রাঙানোর চেষ্টা করেছেন। আমিও এখন নিশ্চিত হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী মামুনই।
মো. লায়েছ, মামলার বাদী

ওই দুই আসামির জবানবন্দির সূত্র ধরে মামুনকে ১১ নভেম্বর রাত পৌনে ১১টার দিকে উপজেলার সিনেমা হল রোড এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ ঘটনায় ১২ নভেম্বর প্রথম আলোর অনলাইনে ‘ছোট ভাইকে খুন করতে গিয়ে বড় ভাইকে খুন: পিবিআই’ ও পরদিন প্রিন্ট সংস্করণের ৬-এর পাতায় ‘বাজিতপুরে হত্যা মামলায় আওয়ামী নেতা গ্রেপ্তার’ শীর্ষক সংবাদ প্রকাশ হয়।

মামলার বাদী মো. লায়েছ প্রথম আলোকে বলেন, ‘মামুন আমার পাওনা টাকা দিতে চাচ্ছিলেন না। এই নিয়ে নানা সময় চোখ রাঙানোর চেষ্টা করেছেন। আমিও এখন নিশ্চিত হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী মামুনই।’

এদিকে দলীয় সূত্র জানায়, মামুন ক্ষমতাসীন দলের উপজেলা পর্যায়ের শীর্ষ পদ পাওয়ার পর থেকেই পাল্টে যেতে থাকেন। জীবনাচরণে ব্যাপক পরিবর্তন আসে। অল্প সময়ের ব্যবধানে ইটভাটাসহ একাধিক নতুন ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত হন। ইটের দাদন বাবদ লোকজনের কাছ থেকে কোটি টাকা নেন। পরবর্তী সময়ে দেনা-পাওনা মেটানো নিয়ে তাঁর সঙ্গে বেশির ভাগ লোকের সম্পর্কের অবনতি ঘটে। এই সময়ে টাকাপয়সার লেনদেন নিয়ে তাঁর সঙ্গে অসংখ্য মানুষের দূরত্ব তৈরি হয়। এর আগে চেক জালিয়াতির অভিযোগও ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে।