বাজিতপুরে এক কক্ষের কেন্দ্র, ভেতরে হযবরল অবস্থা

কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলার হুমাইপুর ইউনিয়নে আলাইমিয়া ফোরকানিয়া কেন্দ্রটি এক কক্ষের। গাদাগাদি করে ভোটা দিচ্ছেন ভোটাররা। ছবিটি আজ বৃস্পতিবার দুপুরের
ছবি: সুমন মোল্লা

কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলার হুমাইপুর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে আলাইমিয়া ফোরকানিয়া কেন্দ্রটি এক কক্ষবিশিষ্ট। পুরো কেন্দ্র লম্বায় ২০ ফুট আর প্রস্থে ১১ ফুট। ভোটার ১ হাজার ১৪২। কক্ষে দুটি বুথ, বুথ ঘেষে বসেছেন প্রার্থীদের ১৬ জন এজেন্ট। একপাশে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা। প্রিসাইডিং কর্মকর্তার টেবিল ঘেষে রাখা হয়েছে দুটি ব্যালট বাক্স। বাক্সের সামনে বসেছেন সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা। এমন কেন্দ্রে গাদাগাদি করে ভোট দিচ্ছেন ভোটাররা।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা ১০ মিনিটে কেন্দ্রটিতে গিয়ে দেখা যায়, ভোটারদের দীর্ঘ সারি। নারী ও পুরুষের সারি পতিত কৃষিজমিতে। কেন্দ্রটির অবস্থান অন্তত ২০ ফুট ওপরের ভূমিতে। বয়স্ক ব্যক্তিরা অন্যদের সাহায্যে ওপরে উঠে কেন্দ্রে যাচ্ছেন।

শাফিয়া বেগম নামের এক ভোটার বলেন, কেন্দ্রটি যে শুধু এক কক্ষের তা নয়, কেন্দ্রের বাইরে সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়ানোরও জায়গা নেই। দাঁড়াতে হয় দূরের নিচু জমিতে। আবার ওপরে উঠে দিতে হয় ভোট। এই সময়ে এসে এক কক্ষের ভোটকেন্দ্র কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

কেন্দ্রের ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, হযবরল অবস্থা। বিশেষ করে কে ভোটার, কারা এজেন্ট আর কারাই–বা ভোট গ্রহণকারী সহজে বোঝা কঠিন। বুথ দুটি হালকা পর্দায় ঢাকা। বাইরে থেকে ভেতরের সব কিছু স্পষ্ট দেখা যায়। স্পষ্টতা আড়াল করতে পর্দার ওপর একটি গামছা, আর অন্যটিতে একটি লুঙ্গি দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। এতে করেও বুথের গোপনীয়তা রক্ষা হয়নি। এরপরও বাইরে থেকে বুথের ভেতরের সবকিছু দেখা যাচ্ছিল।

সারোয়ার মিয়া নামের এক ভোটার বলেন, ‘বুথের যে অবস্থা, তাতে ভেতরে গিয়ে সিল মারলে যা, দেখিয়ে মারলেও তা। এজেন্টরা তো চাইলেই সবকিছু দেখতে পাচ্ছেন।’

ভোটারদের এমন অভিযোগের সঙ্গে এজেন্টদেরও ভিন্নমত নেই। মোটরসাইকেল প্রতীকের এজেন্ট আ. হামিদ। গাদাগাদি করে বসে দায়িত্ব পালন করতে কষ্ট হচ্ছে কি না জানতে চাইলে বলেন, ‘একটু তো হচ্ছেই।’ বুথের গোপনীয়তার বিষয়ে জানতে চাইলে কথা না বলে শুধু হাসলেন।’

বুথ ঘেষে বসেছেন প্রার্থীদের ১৬ জন এজেন্ট। আজ বৃস্পতিবার দুপুরে কিশোরগঞ্জের বাজিতপুরের হুমাইপুর ইউনিয়নে আলাইমিয়া ফোরকানিয়া কেন্দ্রে
ছবি: প্রথম আলো

কেন্দ্রের নিরাপত্তার দায়িত্বে আছেন উপপরিদর্শক সাকিব হোসেন। এ বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করতে চাননি। শুধু বলেন, ‘সমস্যা। বড় সমস্যা।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এক কক্ষের কেন্দ্রটির বয়স ২৫ বছর। এটি মূলত মক্তব। ভোট এলে প্রতিবারই কেন্দ্রটির বিষয়ে নানা কথা হয়। কক্ষ বাড়ানোর বিষয়ে উদ্যোগের কথা শোনা যায়। শেষে কিছুই হয় না। এবারও কেন্দ্রটির বিষয়ে আপত্তি ছিল অনেকের।

কেন্দ্রের পাশেই সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান শফিউল হকের বাড়ি। বিষয়টি তাঁর নজরে আনলে তিনি বলেন, এই কেন্দ্রে আরাম করে ভোট দেওয়ার সুযোগ নেই। ওপরে কেন্দ্র, নিচে লাইন। আবার ভেতরে গিয়ে দুই পা একসঙ্গে ফেলাটাও মুশকিল। অন্তত পরের নির্বাচনে যেন আর কেন্দ্রটি এক কক্ষের না থাকে, সে বিষয়ে কর্তৃপক্ষের মনোযোগ আকর্ষণ করেন তিনি।

কেন্দ্রের ভেতরের চিত্র নিয়ে বিব্রত প্রিসাইডিং কর্মকর্তা জহিরুল ইসলামও। তিনি বলেন, ‘সমস্যার বিষয়টি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জানিয়েছি। কিন্তু প্রতিকার হয়নি। কষ্ট হলেও এর মধ্যে ভোট নেওয়া শেষ করতে হচ্ছে। দুপুর ১২টার মধ্যে ভোট পড়েছে ৩৫০টি।’