বাঞ্ছারামপুরে কোভিডে নার্সের মৃত্যু

ছবিটি প্রতীকী
ছবিটি প্রতীকী

ঘড়িতে তখন সকাল ৯টা ৪০ মিনিট। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে থাকা জহিরুল ইসলাম পানি খেতে চাইলেন। এ কথা শুনেই স্ত্রী তাঁকে প্রথমে এক চামচ পানি দেন। পরে আরেক চামচ পানি দিতেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন জহিরুল। করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সঙ্গে লড়াইয়ে সামনের সারিতে থাকা এই নার্স এভাবেই জীবনের লড়াইয়ে হেরে গেলেন।

জহিরুল ইসলাম (৪৩) ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সিনিয়র স্টাফ নার্স। করোনায় সংক্রমিত হয়ে বৃহস্পতিবার সকাল পৌনে ১০টার দিকে ঢাকার মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিনি মারা যান। করোনায় এটিই ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার প্রথম কোনো স্বাস্থ্যকর্মীর মৃত্যুর ঘটনা।

জহিরুল ইসলাম কুমিল্লার তিতাস থানার নাগেরচর গ্রামের বাসিন্দা। তাঁর স্ত্রী নাছিমা আক্তার কুমিল্লার হোমনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সিনিয়র স্টাফ নার্স। তাঁদের নবম শ্রেণিতে পড়ুয়া এক মেয়ে (১৪) ও সাড়ে তিন বছর বয়সী একটি ছেলেসন্তান আছে।

স্বাস্থ্য বিভাগ ও পরিবার সূত্রে জানা গেছে, গত ১৭ জুন বাঞ্ছারামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জহিরুল করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা দেন। সে সময় করোনার উপসর্গ হিসেবে তাঁর জ্বর, কাশি, গলাব্যথা ও শ্বাসকষ্ট ছিল। এরপর থেকে তিনি বাঞ্ছারামপুরে নিজ বাসাতেই আইসোলেশনে ছিলেন। তবে শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ায় ২০ জুন রাতে অ্যাম্বুলেন্সে করে তাঁকে ঢাকার মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। ২৭ জুন তাঁর করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট ‘পজিটিভ’ আসে। গতকাল বুধবার রাত থেকেই তিনি খাওয়াদাওয়া তেমন করতে পারছিলেন না। আজ বৃহস্পতিবার সকাল পৌনে ১০টার দিকে মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।

স্ত্রী নাছিমা আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, নমুনা দেওয়ার পরপর তাঁর স্বামী আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েন। বুধবার রাত থেকে তাঁর খাওয়াদাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। পানিও পান করতে পারেননি। খাওয়ানোর শত চেষ্টা করেও পারেননি। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা ৪০ মিনিটে স্বামীর সঙ্গে তাঁর শেষ কথা হয়। সে সময় তিনি পানি খাবেন বলে জানান। প্রথমে এক চামচ পানি ও পরে আরেক চামচ পানি দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চোখ উল্টে যায়। কান্নারত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘আল্লাই নিয়া গেছে। সময় দিছে না।’

বাঞ্ছারামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আল মামুন প্রথম আলোকে বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সিনিয়র স্টাফ নার্স জহিরুল ইসলাম করোনায় আক্রান্ত ছিলেন। আজ সকাল পৌনে ১০টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।