বাড়িতে হামলা-লুটপাট

বৃহস্পতিবার রাতে পৌরসভার ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপির নেতাকর্মীদের বাড়িতে দফায় দফায় এসব ঘটনা ঘটে।

কুমিল্লার লাকসাম পৌরসভার উত্তর–পশ্চিমগাঁও এলাকায় বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের বাড়িতে হামলার চিত্র
ছবি: সংগৃহীত

কুমিল্লার লাকসাম উপজেলায় বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের বাড়িঘরে রাতের অন্ধকারে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার রাত ১০টা থেকে ১টা পর্যন্ত পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর পশ্চিমগাঁও, মৌলভীপাড়া, কাজীপাড়া, পেয়ারাপুর, ঠাকুরপাড়া ৬ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ পশ্চিমগাঁও এলাকায় দফায় দফায় এসব ঘটনা ঘটে।

ভুক্তভোগী ব্যক্তিরা অভিযোগ করে বলেন, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী লাকসাম পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মনসুর আহমদ মুন্সি এবং ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আবু সাঈদ বাচ্চুর নেতৃত্বে এই হামলা চালিয়েছেন স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। এ সময় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশকে ফোন করেও সাড়া মেলেনি।

লাকসাম উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক তাজুল ইসলাম বলেন, দুই কাউন্সিলরের নেতৃত্বে এই হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়েছে।

বিএনপির নেতা-কর্মীরা বলছেন, ২১ ফেব্রুয়ারি শহীদ মিনারে বিপুলসংখ্যক বিএনপির নেতা-কর্মী নিয়ে শোডাউন করে লাকসাম শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। দীর্ঘদিন পর বড় ধরনের জমায়েত দেখে আওয়ামী লীগ এবং তার সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা ক্ষুব্ধ হয়ে হামলা চালিয়েছেন।

এ বিষয়ে কাউন্সিলর মনসুর আহমদ মুন্সি বলেন, ‘আমি হামলায় জড়িত নই।’ তিনি পাল্টা প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘যাঁরা হামলার দাবি করেছেন, তাঁরা পুলিশকে বলল না কেন? পুলিশ তো ২০০ গজ দূরে ছিল। তাঁরা ৯৯৯ নম্বরে ফোন দিলেন না কেন?’

বিএনপির নেতা-কর্মীদের দাবি, রাত ৮টায় প্রথমে উত্তর পশ্চিমগাঁও এলাকায় যুবদল নেতা মো. সোহাগকে সড়কে পেয়ে বেধড়ক মারধর করা হয়েছে। এ সময় তিনি প্রাণে বাঁচতে পুকুরে ঝাঁপ দিয়ে সাঁতরে অন্য পাড়ে উঠে চলে যান। পেয়ারাপুর এলাকায় যুবদল নেতা মাহবুবুর রহমানের বাড়িতে ভাঙচুর করা হয়। উত্তর পশ্চিমগাঁও এলাকায় যুবদল নেতা মাহবুবুল হকের বাড়িতে লুটপাট ও ভাঙচুর করা হয়েছে। গত পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী ও পৌরসভা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক বেলাল রহমান মজুমদারের বাড়িতেও অতর্কিতভাবে হামলা চালানো হয়। এ সময় ঘরের দরজা, জানালা, বেড়া ও আসবাবপত্রে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে তছনছ করা হয়েছে। এতে বাড়ির শিশু ও নারীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন।

বিএনপির নেতা-কর্মীরা বলেন, হামলার সময় লুটপাট করা হয়েছে টাকাপয়সা, স্বর্ণালংকারসহ মূল্যবান জিনিস। জেলা যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান মানিককে আহত করে তাঁর মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। সাবেক যুবদল নেতা মাহবুবুল হক, জেলা যুবদল নেতা নাজমুল হাসান, পৌরসভা ছাত্রদল নেতা নাজমুল হাসান, উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আবুল হোসেন, বিএনপি নেতা সাদেক হোসেন, পৌর যুবদল নেতা আবুল বাশার, প্রবাসী সোলেমানসহ বেশ কয়েক জন নেতা-কর্মীর বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে যুবদল নেতা সফি উল্লাহর দোকানেও। এ সময় বিএনপি নেতা আমিনুল রহমান, শামসুল হক, জাফর আহমদ, পাখি আকতার আহত হয়েছেন। তাঁরা স্থানীয় বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।

পৌরসভা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক বেলাল রহমান মজুমদার বলেন, বিএনপি নিধনের জন্য এই হামলা। এই হামলা করেছেন দুই কাউন্সিলর মনসুর ও বাচ্চু।

অভিযোগের বিষয়ে কাউন্সিলর আবু সাঈদ বলেন, ‘আমি ঘরে মাথাব্যথা নিয়ে শুয়ে ছিলাম। আমি হামলায় জড়িত না।’ হামলার বিষয়ে থানায় কেউ অভিযোগ করেননি বলে জানিয়েছেন লাকসাম থানার ওসি মেজবাহ উদ্দিন ভূঁইয়া।