বানারীপাড়ায় আ.লীগের সাংসদের বিরুদ্ধে হিন্দুদের জমি দখলচেষ্টার অভিযোগ

সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগী হিন্দু পরিবারের সদস্যরা। আজ বরিশাল প্রেসক্লাব মিলনায়তন
ছবি: প্রথম আলো

বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলায় হিন্দুসম্প্রদায়ের বসতবাড়ি ও জমি দখলের চেষ্টা করার অভিযোগ পাওয়া গেছে আওয়ামী লীগের নেতা ও বরিশাল-২ (বানারীপাড়া-উজিরপুর) আসনের সাংসদ শাহে আলমের বিরুদ্ধে।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বরিশাল প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন এ অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা।

ভুক্তভোগীদের পক্ষে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন রতন ঘরামি ও সুমন সিকদার। এ সময় কয়েকটি পরিবারের সদস্য উপস্থিত ছিলেন। এর আগে ২ জানুয়ারি শাহে আলমের বিরুদ্ধে বানারীপাড়া সদরে শহীদ বুদ্ধিজীবী জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতার স্বজনদের জমি দখলের অভিযোগ ওঠে। সাংসদ শাহে আলমের উপস্থিতিতে বানারীপাড়া বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের জন্য ওই জমি দখল করা হয় বলে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেন। সাংসদ ওই বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি।

অভিযোগের বিষয়ে সাংসদ সদস্য শাহে আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘তিন বছর ধরে বানারীপাড়া আওয়ামী লীগের কিছু নেতা আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। তাদের ইন্ধনে এসব হচ্ছে। নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে, ষড়যন্ত্রকারীরা তত সক্রিয় হচ্ছে। আমি এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন করেছি, তা দলের একটি মহলের সহ্য হচ্ছে না। তারা কাল্পনিক অভিযোগ তুলে আমার বিরুদ্ধে নানা ধরনের অপপ্রচার চালাচ্ছে।’

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে রতন ঘরামি বলেন, তাঁরা বানারীপাড়া উপজেলার উদয়কাঠি ইউনিয়নের পশ্চিম তেতলা গ্রামের বাসিন্দা। ১৫ দিন আগে সাংসদ শাহে আলম তাঁকে বানারীপাড়ায় তাঁর বাসায় ডেকে নিয়ে তাঁর (রতন) জমিতে একটা প্রকল্প করার কথা জানান ও ওই জমি তাঁকে (সাংসদ) লিখে দেওয়ার প্রস্তাব দেন। এর পর থেকে সাংসদের লোকজন তাঁকে বিভিন্ন সময় হুমকি-চাপ দিয়ে আসছেন। রতন ঘরামির দাবি, তিনি ছাড়া আরও ১১টি পরিবারের জমিও সাংসদ জোর করে দখলে নিতে চান।

রতন ঘরামি বলেন, ‘সোমবার রাতে সাংসদের নির্দেশে ইউপি সদস্য ইব্রাহিম, সাংসদের ব্যক্তিগত কর্মচারী আল আমিন, তুহিন গাজী ও ইলিয়াস খান আমার বাড়িতে গিয়ে দরজা খুলতে বলেন। আমি অসুস্থ থাকায় স্ত্রী দরজা খুলে দেন। তাঁরা ঘরে ঢুকে আমাকে আটকে রাখেন। ভয়ভীতি দেখিয়ে রেজিস্ট্রি অফিসে গিয়ে এমপি সাহেবকে জমি লিখে দিতে বলেন। বিষয়টি জানতে পেরে আমার আত্মীয়স্বজন জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ কল করলে রাত ২টা ২০ মিনিটে পুলিশ গিয়ে আমাকে উদ্ধার করে। এ সময় তুহিন গাজী ও ইলিয়াস খানকে ধরে নিয়ে যায় পুলিশ। কিন্তু মঙ্গলবার সকালেই পুলিশ তাঁদের ছেড়ে দেয়। পরে আমরা সকালে পালিয়ে বরিশাল আসি। এখন আমার জীবন ও জমি দুটিই ঝুঁকিতে। আমি আইনি সহায়তা চাইলেও পুলিশ আমাদের কোনো সহায়তা করেনি।’

এ প্রসঙ্গে বানারীপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, ৯৯৯ থেকে অভিযোগ পাওয়ার পর বানারীপাড়ার লবণসারা পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের সহকারী উপপরিদর্শক মো. জাভেদ ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন। তবে অভিযোগের সত্যতা না পাওয়ায় তিনি ফিরে আসেন। কাউকে আটক করা হয়নি। পুলিশের কাছে ভুক্তভোগী কেউ কোনো সহায়তা চাননি, কিংবা অভিযোগও দেননি।

আরও পড়ুন

রতন ঘরামির ভাগনে ও প্রতিবেশী সুমন রায় বলেন, ‘ছয় মাস ধরে সাংসদ শাহে আলম পশ্চিম তেতলা গ্রামের ১২টি হিন্দু পরিবারের বসতবাড়ি ও জমি তাঁর দখলে নেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন। শুনেছি, সাংসদ আমাদের জমিতে বড় অ্যাগ্রো ফার্ম করবেন। পাশেই তিনি ১০ বিঘা জমি কিনেছেন। ফার্মের জন্য আরও জমি প্রয়োজন হওয়ায় আমাদের হিন্দু পরিবারগুলোর জমির ওপর নজর পড়েছে তাঁর। আমরা যাতে ভিটেমাটিতে স্বাধীনভাবে নির্ভয়ে থাকতে পারি, প্রশাসনের কাছে সেই নিশ্চয়তা চাই।’

ভুক্তভোগী সুমন সিকদার বলেন, তাঁরা প্রায় ২০০ বছর ধরে পূর্বপুরুষের ভিটেবাড়িতে বসবাস করছেন। বসতবাড়িসহ ১০ কাঠা জমি আছে। এই জমি এমপি সাহেব লিখে নিতে চান। এ অবস্থায় তাঁরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় আছেন।