বান্দরবানে জেলাজুড়ে বন্যা, পানিতে থইথই লামা শহর

বন্যায় ডুবে থাকা লামা উপজেলা শহরের চেয়ারম্যানপাড়া সড়ক। বৃহস্পতিবার দুপুরে তোলা
ছবি: সংগৃহীত

বান্দরবানে টানা চার দিনের বৃষ্টিপাতে মাতামুহুরি নদীর পানি অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় লামা উপজেলা শহর পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। আজ বৃহস্পতিবারও উপজেলা পরিষদ ভবন, থানাসহ প্রায় সব সরকারি কার্যালয়, দোকানপাট ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান পানিতে থইথই করছে। বিদ্যুৎ–সংযোগ বিচ্ছিন্ন ও যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়েছে। বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে বলে সকালে বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন উঁচু জায়গায় আশ্রয় নেওয়া শহরের লোকজন জানিয়েছেন।

জেলা সদরসহ অন্য উপজেলাগুলোতেও নিম্নাঞ্চল ডুবে যাওয়ায় অনেক পরিবার আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে। জেলা শহরে প্রায় দুই হাজার মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছেন। নাইক্ষ্যংছড়ি ঘুমধুমের তুমব্রু ও কোনাপাড়া এলাকায় পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় দুটি বাজার ও শতাধিক পরিবারের ঘরবাড়ি ডুবে গেছে।

লামা পৌরসভার লোকজন জানান, গতকাল বুধবার সন্ধ্যা থেকে উপজেলা শহরের একের পর এক এলাকা পানিবন্দী হতে থাকে। রাত ৯টা থেকে ১০টার দিকে থানা ভবন, উপজেলা পরিষদ কার্যালয়, ব্যাংক, বাজারসহ পৌরসভার অধিকাংশ এলাকায় পানি ওঠে। রাতে বিদ্যুৎবিহীন অন্ধকারে অনেকে নৌকা ও ইঞ্জিনচালিত নৌকায় করে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন।

বন্যায় ডুবে রয়েছে লামা থানা ভবন। বৃহস্পতিবার দুপুরে তোলা
ছবি: সংগৃহীত

একতা নামের একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার কর্মকর্তা আবুল কালাম বলেন, পৌরসভার লাইনঝিরি, মধুঝিরি, ছাগলখাইয়া, চেয়ারম্যানপাড়া, হাসপাতাল এলাকা, উপজেলা সদর বাজারসহ পৌরসভার অধিকাংশ এলাকা এখনো পানির নিচে রয়েছে। উপজেলার সব সরকারি-বেসরকারি কার্যালয়ও এসব এলাকায় হওয়ায় সেগুলোও ডুবে গেছে।

লামা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান বলেন, থানার প্রথম তলা ডুবে যাওয়ায় দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলা পানিবন্দী হয়ে রয়েছে। দুই দিন ধরে উপজেলায় বিদ্যুৎ নেই। নলকূপ, পাতকুয়া ও পৌরসভার পানি সরবরাহব্যবস্থা ডুবে বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকটে রয়েছেন। সকাল থেকে বৃষ্টি কমে যাওয়ায় পানি ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছে বলে ওসি জানান।

বন্যার পানিতে প্লাবিত বান্দরবান সদরের দলবনিয়া পাড়া
ছবি: সংগৃহীত

নাইক্ষ্যংছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর হোসেন বলেন, সড়ক ডুবে যাওয়ায় ও পাহাড় ধসে পড়ায় উপজেলা সদরের সঙ্গে ইউনিয়ন পরিষদগুলোর যোগাযোগ বন্ধ হয়েছে। ঘুমধুম ইউনিয়নে মিয়ানমারের সীমান্তের তুমব্রু খালের পানি বেড়ে যাওয়ায় তুমব্রু বাজার এলাকা ও কোনাপাড়া পানিতে তিন দিন ধরে ডুবে রয়েছে। কোনাপাড়া সীমান্তের শূন্যরেখায় আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরও তলিয়ে গেছে। তবে আজ থেকে পানি সরতে শুরু করেছে। রোহিঙ্গারা আজ সকালে কেউ কেউ আশ্রয়শিবিরে চলে এসেছে।

বান্দরবান সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তৌছিফ আহমেদ বলেন, সাঙ্গু নদের পানি বেড়ে যাওয়ায় বান্দরবান জেলা শহরের আর্মিপাড়া, কাশেমপাড়া, ইসলামপুর, বরিশালপাড়া, বালাঘাটার আমবাগান পাড়াসহ কয়েকটি নিচু এলাকা ডুবে গেছে। সেখানকার প্রায় ২ হাজার মানুষ ১২টি আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছেন। তাঁদের খাবার বিতরণ করা হচ্ছে।

এ ছাড়া আলীকদম, রুমা ও থানচিতে নিচু এলাকা ডুবে কিছু পরিবার আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট ইউএনওরা জানিয়েছেন।