বাবার ওষুধ ও ভাতের জন্য মানুষের কাছে হাত পাতে মেয়েটি

ফার্মেসি থেকে বাবার জন্য ওষুধ কিনছে আকলিমা। পঞ্চগড় বাজার, ২ সেপ্টেম্বররাজিউর রহমান

কন্যাশিশুটির চোখ-মুখ শুকনা। তার পরনে ময়লা কাপড়, আর হাতে একটি ব্যাগ। পঞ্চগড় শহরের অলিগলিতে আর্থিক সাহায্যের জন্য মানুষের কাছে হাত পাতছে সে। নাম তার আকলিমা আক্তার (১২)। অসুস্থ বাবার ওষুধ ও ভাতের জোগাড় করতেই প্রতিদিন আকলিমা ছুটে চলে শহরের আনাচকানাচে। বছরখানেক ধরে ভিক্ষা করছে মেয়েটি।

অসুস্থ বাবা মো. হেলালকে নিয়ে পঞ্চগড়ে মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম রেলস্টেশন এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকে আকলিমা। কাঁচা বাসায় প্রতি মাসে ভাড়া দিতে হয় ৭০০ টাকা। হেলালের পৈতৃক বাড়ি ছিল মুন্সিগঞ্জ জেলার শ্রীনগর উপজেলায়। ঢাকার সাভারের হেমায়েতপুর এলাকায় নির্মাণশ্রমিকের কাজ করতেন তিনি। তাঁর প্রথম স্ত্রীর পাঁচ ছেলে ও এক মেয়ে। দ্বিতীয় বিয়ের পর স্ত্রীকে নিয়ে সাভার এলাকায় আলাদা থাকতেন হেলাল। সেখানেই জন্ম হয় আকলিমার। তার বয়স যখন দুই বছর, তখনই ডায়াবেটিসসহ নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান আকলিমার মা নাসিমা আক্তার। এরপরই ছোট মেয়েকে নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েন হেলাল। দীর্ঘদিন আশপাশের লোকজনের কাছে মেয়েকে রেখে কাজে যেতেন তিনি। অনেক কষ্টে মেয়েকে বড় করে স্থানীয় একটি স্কুলে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়িয়েছেন। তিন বছর আগে হৃদ্‌রোগ, উচ্চ রক্তচাপ, শ্বাসকষ্ট, চোখে কম দেখাসহ নানা রোগে আক্রান্ত হন তিনি। ফলে আর কাজ করতে পারেন না।

আকলিমা আক্তার বলে, ‘প্রতিদিন সকালে রেলস্টেশন এলাকায় হোটেল থেকে পরোটা কিনে বাবাকে নিয়ে খাই। এরপর বাবাকে ওষুধ খাইয়ে ভিক্ষার জন্য বাড়ি থেকে বের হয়ে যাই। পঞ্চগড় বাজার ছাড়াও মাঝেমধ্যে সদর উপজেলার জগদল বাজারেও ভিক্ষা করতে যাই। দিনে প্রায় দুই থেকে আড়াই শ টাকা পাই, তা দিয়েই বাবার জন্য ওষুধ ও খাবার কিনি।’

আকলিমার বাবা মো. হেলাল বলেন, আগের স্ত্রীর ছেলেমেয়েরা কেউ খবর নেন না। এই মেয়েটাই তাঁর জন্য কষ্ট করছে। এখনো সে টাকা তুলে ওষুধ নিয়ে আসে, খাবারও নিয়ে আসে। ওর ভবিষ্যতের কথা ভেবে খুব খারাপ লাগছে। অসুস্থতার কারণে তিনি অসহায় হয়ে পড়েছেন। সুযোগ পেলে মেয়েটাকে কাপড় তৈরির কাজ শেখাবেন।

পঞ্চগড় বাজারের হা-মীম ফার্মেসির স্বত্বাধিকারী মো. হায়াতুন নবী বলেন, মেয়েটা সারা দিন ভিক্ষা করে প্রতিদিন বিকেলে ওর বাবার জন্য ওষুধ নিতে আসে। লাভ না করে প্রতিদিন কেনা দামে তার কাছে ওষুধ বিক্রি করা হয়। দেখতে দেখতে এক বছর হয়ে গেল। মেয়েটা যত বড় হচ্ছে, ততই তার ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার দিকে যাচ্ছে। এখনই তার পাশে কারও না কারও দাঁড়ানো উচিত।

পঞ্চগড় জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. আল মামুন বলেন, এত কম বয়সী একটি মেয়ে এভাবে বাবার চিকিৎসার ওষুধ আর খাবার জোগাতে ভিক্ষা করছে। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। মেয়েটির খোঁজখবর নিয়ে তার জন্য কিছু করার চেষ্টা করা হবে।