বাবার জন্য হৃদ্‌রোগ বিশেষজ্ঞ হতে চান মেডিকেল ভর্তিতে দ্বিতীয় তানভীন

তানভীন আহমেদ
ছবি: প্রথম আলো

সন্তানকে ভালো পরিবেশে পড়াশোনা করাতে অনেক অভিভাবককে গ্রাম ছেড়ে শহরে থাকার কথা শোনা যায়। তবে বিমানবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সার্জেন্ট মো. শাহজাহান নিজের সাধ্যের মধ্যে ছেলেকে ভালো পরিবেশে পড়াতে বেছে নিয়েছিলেন গ্রামে অবস্থিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ছেলে তানভীন আহমেদও বাবার আস্থার প্রতিদান দিয়ে গ্রামে থেকে মেডিকেল কলেজে পড়ার সুযোগ করে নিয়েছেন, তা–ও আবার ভর্তি পরীক্ষায় সারা দেশের মধ্যে দ্বিতীয় হয়ে।

তানভীন আহমেদ পড়াশোনা করেছেন টাঙ্গাইলের সখীপুরের পাহাড়কাঞ্চনপুর বিমানবাহিনী ঘাঁটিতে অবস্থিত বিএএফ শাহীন কলেজে। এমবিবিএস ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষার ফলাফলে সারা দেশের মধ্যে দ্বিতীয় হয়ে প্রশংসায় ভাসছেন তানভীন। তাঁর এই সফলতায় সহপাঠী থেকে শুরু করে কলেজের শিক্ষক ও এলাকাবাসী তাঁকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছে। ভর্তি পরীক্ষায় ১০০ নম্বরের মধ্যে ৮৭ নম্বর পেয়েছেন তানভীন।

মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ করে নিয়ে তানভীন আহমেদ বলছেন, ‘আমার বাবা হার্টের (হৃদ্‌রোগ) রোগী। আমি হার্টের চিকিৎসক হয়ে বাবার চিকিৎসা করতে চাই। অসহায় মানুষের সেবা করতে চাই।’

তানভীনের বাবা শাহজাহান বলেন, ২০১৪ সালে তিনি বিমানবাহিনীর সার্জেন্ট হিসেবে ঢাকা থেকে অবসরে যান। ঢাকা শহরে ভাড়া বাসায় থেকে তাঁর সন্তানদের পড়াশোনা করানো সম্ভব নয় বলে তিনি চিন্তায় পড়ে যান। শাহজাহানের ছোট ভাই শামীম আহমেদ সখীপুরের পাহাড়কাঞ্চনপুর বিমানবাহিনী ঘাঁটিতে চাকরি করেন। ওই ঘাঁটির ভেতরে বিএএফ শাহীন স্কুল অ্যান্ড কলেজ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি গ্রামে থাকায় ওই স্থানে বাসা ভাড়া কম। শামীম আহমেদের পরামর্শে ২০১৪ সালে পুরো পরিবার নিয়ে সখীপুরের নলুয়ার আড়ালিয়া পাড়া গ্রামে বাসা ভাড়া নেন তিনি। ওই বছর বিএএফ শাহীন স্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে তানভীন আহমেদ ও তৃতীয় শ্রেণিতে ভর্তি হন ছোট ভাই তাহসীন আহমেদ। ওই প্রতিষ্ঠান থেকেই এসএসসি ও এএইচসিতে জিপিএ ৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন তানভীন আহমেদ।

সাত বছর ধরে তানভীনের পরিবার সখীপুর উপজেলার নলুয়ার আড়ালিয়াপাড়া এলাকায় একটি বাসা ভাড়া নিয়ে থাকছেন। তাঁর মা পারভীন বেগম একজন গৃহিণী। দুই ভাই এক বোনের মধ্যে তানভীন সবার বড়। তানভীনদের গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার তশরা গ্রামে।

তানভীন আহমেদ আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি নিয়মমাফিক পড়াশোনা করেছি। ভর্তি পরীক্ষার আগে ঢাকা ও টাঙ্গাইলেও কোচিং করেছি। মফস্বলে থেকেও ভালো ফল করা যায়, এটা অন্তত প্রমাণ করেছি। তবে আমি ভাবিনি এমন ফলাফল করব। আমার এই সাফল্যের পেছনে আমার বাবা, মা, চাচাসহ কলেজের শিক্ষকদের অবদান অনেক বেশি।’

তানভীনের বাবা মো. শাহজাহান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার ছেলে সারা দেশে দ্বিতীয় হওয়ায় আমার বাড়িতে অনেকেই আসছেন। অনেকেই শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন। পত্রপত্রিকায় আমার ছেলের ছবি ছাপা হচ্ছে। আমার বুক আনন্দে ভরে যাচ্ছে। আমার ছেলের জন্য আপনারা দোয়া করবেন, যেন সে পড়াশোনা করে চিকিৎসক হয়ে মানুষের সেবা করতে পারে।’

পাহাড়কাঞ্চনপুর বিএএফ শাহীন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক প্রণব কুমার বলেন, তানভীন খুব মেধাবী শিক্ষার্থী। এ বছর আমাদের কলেজ থেকে তানভীনসহ দুইজন মেডিকেলে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছে। কলেজ থেকে তাদের শিগগিরই সংবর্ধনা দেওয়া হবে।