বাবুগঞ্জে ২৪টি ইটভাটার দূষণ থেকে মুক্তি চান এলাকাবাসী

বাবুগঞ্জের রহমতপুর ইউনিয়নে ইটভাটার কারণে পরিবেশ দূষণ বিষয়ে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার সকালে স্থানীয় মানিককাঠী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে
ছবি: প্রথম আলো

এলাকায় নির্মিত ২৪টি ইটভাটার দূষণ থেকে মুক্তি চান বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার রহমতপুর ইউনিয়নের বাসিন্দারা। এই ইউনিয়নে ২৪টি ইটভাটার বেশির ভাগই আইন মেনে করা হয়নি। কোনোটির ড্রাম চিমনি, কোনোটিতে সিমেন্টের স্থায়ী (ফিক্সড) চিমনি ব্যবহার করে ইট পোড়ানো হচ্ছে। এগুলোতে কাঠ পুড়িয়ে বিষিয়ে তোলা হয়েছে এলাকার পরিবেশ। এতে শ্বাসকষ্টসহ নানা ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছেন এলাকাবাসী।

আজ শুক্রবার দুপুরে রহমতপুর ইউনিয়নের মানিককাঠী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এক মতনিনিময় সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। এ জন্য তাঁরা উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হতে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) সহায়তা কামনা করেন।

বেলার একটি সূত্র জানায়, রহমতপুর ইউনিয়নের বাসিন্দারা ইটভাটাগুলোর দূষণ থেকে পরিত্রাণ চেয়ে সম্প্রতি তাদের কাছে আবেদন করেন। এরপর আজ সকালে রহমতপুর এলাকার এসব ইটভাটার কারণে বর্তমান পরিবেশগত পরিস্থিতি বিষয়ে আলোচনা সভার (কমিউনিটি কনসালটেশন) আয়োজন করে ‘বেলা’। স্থানীয় মানিককাঠী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় যোগ দেন এলাকার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ভুক্তভোগী নারী-পুরুষ। স্থানীয় প্রবীণ শিক্ষক এইচ এম আবুল কালামের সভাপতিত্বে সভার শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন বেলার বরিশাল বিভাগীয় সমন্বয়কারী লিংকন বায়েন।

সভায় বক্তারা বলেন, রহমতপুর ইউনিয়নের ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় আইন না মেনে এ পর্যন্ত ২৪টি ইটভাটা গড়ে তোলা হয়েছে। স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা এসব ইটভাটার মালিক। আইন অনুযায়ী এসব ইটভাটায় ১২০ ফুট চিমনি থাকার নিয়ম থাকলেও বেশির ভাগ ভাটায় তা নেই। এমনকি অনেক ভাটায় টিনের চিমনি ব্যবহার করা হচ্ছে। ইটভাটার ধোঁয়ায় বাড়িঘরে টিকে থাকাই দায় হয়ে পড়েছে। এর প্রভাবে এলাকার অনেক মানুষ শ্বাসকষ্টসহ নানা ব্যাধিতে ভুগছেন।

বক্তারা আরও বলেন, সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের উদাসীনতায় এবং রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় গড়ে তোলা এসব ইটভাটার সব কটিতে কয়লার পরিবর্তে কাঠ ব্যবহারের কারণে এলাকার বনভূমি উজাড় হচ্ছে। শব্দ ও বায়ুদূষণ অসহনীয় পর্যায়ে চলে যাওয়ায় এলাকায় বসবাস করা দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে। ভাটার দূষণের কারণে ফলদ বৃক্ষে ফল ধরে না, কৃষিজমিতে ফসল হয় না। নদীর চরের ও কৃষিজমির ওপরের স্তরের মাটি কেটে ইটভাটায় ব্যবহার করায় নদীভাঙনসহ কৃষিজমির উর্বরতা শক্তি হ্রাস পাচ্ছে। এসব বিষয়ে কথা বললে বা প্রতিবাদ জানালে ইটভাটার ক্ষমতাধর মালিকেরা তাঁদের নানাভাবে হয়রানি করেন। এই অসহনীয় পরিবেশ দূষণ থেকে মুক্তি পেতে বিষয়টি উচ্চ আদালতে তুলে ধরার আহ্বান জানান তাঁরা। একই সঙ্গে প্রশাসনকে কিভাবে আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করতে বাধ্য করা যায়, সে বিষয়ে পরামর্শ চান।

সভায় বক্তব্য দেন স্থানীয় বাসিন্দা আবদুল্লাহ আল মামুন, এ কে এম শহিদুল ইসলাম, মো. ইউনুস মোল্লা, রাশিদা আক্তার, শাওন হোসেন, মো. জহির মোল্লা প্রমুখ।

সভার সভাপতি এইচ এম আবুল কালাম বলেন, ‘দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে ইটভাটার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। তবে তা পরিচালিত হতে হবে আইনানুগভাবে। নিয়মবহির্ভূতভাবে মানুষের জীবন হুমকির মুখে ফেলে রহমতপুরে যেসব ইটভাটা গড়ে উঠেছে, সেগুলোর ইতিবাচক পরিবর্তন চাই।’

এ ব্যাপারে প্রশাসনকে আরও আন্তরিক হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।