বারবার নাম ও ঠিকানা বদল করেও শেষ রক্ষা হলো না

হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পাওয়া আসামি মহুবর রহমান। মামলার রায় হওয়ার প্রায় ১৮ বছর পর তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়
ছবি: সংগৃহীত

নাম পরিবর্তন ও ঘন ঘন ঠিকানা বদল করেও শেষ রক্ষা হলো না হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মহুবর রহমানের। বুধবার সকালে রায় ঘোষণার ১৮ বছর পর রংপুর নগরের মাহিগঞ্জের আলুপট্টি থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
বুধবার বিকেলে লালমনিরহাট পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সম্মেলনকক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে লালমনিরহাটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রবিউল ইসলাম এ তথ্য জানান।

গ্রেপ্তার আসামি মহুবর রহমান  (৪৫) লালমনিরহাটের আদিতমারীর মহিষখোচা ইউনিয়নের চরগোবরধন গ্রামের মনসুর আলীর ছেলে। রংপুর থেকে গ্রেপ্তার করে আনার পর মহুবর রহমানের দুই ভাই আবদুল লতিফ ও আবদুল মজিদ তাঁকে আদিতমারী থানায় এসে শনাক্ত করেন।

পুলিশ সূত্র জানায়, ১৯৯৯ সালের ২৭ মে বিকেলে আদিতমারীর কালারপাড়া খেয়াঘাটের কাছে বছর উদ্দিনের একটি বাছুর মনসুর আলীর খেতের ফসল খেয়ে ফেলে। এ ঘটনায় বাছুরটি আটক করে খোঁয়াড়ে নিয়ে যাওয়ার সময় বছর উদ্দিন ও তাঁর ভাতিজা আফজাল হোসেন জমির মালিক মনসুর আলী ও তাঁর ছেলে মহুবর রহমানকে বাধা দেন। এ নিয়ে তর্কাতর্কির একপর্যায়ে মনসুর আলীর নির্দেশে তাঁর ছেলে মহুবর রহমান বাছুরের মালিক বছর উদ্দিন ও তাঁর ভাতিজা আফজাল হোসেনকে ছুরিকাঘাত করেন। এতে আফজাল হোসেন ঘটনাস্থলেই মারা যান।

এ ঘটনায় ১৯৯৯ সালের ২৭ মে রাতে নিহত আফজাল হোসেনের বাবা কাচু শেখ বাদী হয়ে আদিতমারী থানায় মনসুর আলী ও তাঁর ছেলে মহুবর রহমানের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। মনসুর আলীকে পুলিশ ঘটনার দিনই গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে লালমনিরহাট জেলা কারাগারে পাঠায়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আদিতমারী থানার তৎকালীন এসআই ফজলুল হক ১৯৯৯ সালের ২ সেপ্টেম্বর আদালতে মনসুর আলী ও তাঁর ছেলে মহুবর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন।

আফজাল হোসেনকে হত্যার অপরাধে ২০০৩ সালের ২৯ মার্চ লালমনিরহাটের তৎকালীন অতিরিক্ত দায়রা জজ আকবর হোসেন মৃধা আসামি মনসুর আলী ও তাঁর ছেলে মহুবর রহমানকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন। একই সঙ্গে প্রত্যেককে এক হাজার টাকা জরিমানা ও তা অনাদায়ে আরও তিন মাসের কারাদণ্ড দেন আদালত।
রায় ঘোষণার সময় দুই আসামির মধ্যে শুধু মনসুর আলী আদালতে উপস্থিত ছিলেন। ওই সময় মহুবর রহমান পলাতক ছিলেন। রায়ের পর মনসুর আলীকে কারাগারে পাঠানো হয়। কারাদণ্ড ভোগ করে ২০১৩ সালে লালমনিরহাট জেলা কারাগার থেকে ছাড়া পান মনসুর আলী।

রায় ঘোষণার পর ১৮ বছর মহুবর রহমান দেশের ঢাকা, গাজীপুর, কুমিল্লা, রংপুরসহ বিভিন্ন স্থানে নাম পরিবর্তন করে মাহবুব রহমান নাম ধারণ করে আত্মগোপনে ছিলেন। মহুবর রহমানকে বুধবার সকালে রংপুর মহানগরের মাহিগঞ্জের আলুপট্টি থেকে গ্রেপ্তারের পর আদিতমারী থানার পুলিশ বুধবার বিকেলে লালমনিরহাটের আদালতে সোপর্দ করে। আদালত মহুবর রহমানকে লালমনিরহাট জেলা কারাগারে সাজাভোগের জন্য পাঠিয়ে দেন।

মহুবর রহমানকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে বুধবার বিকেলে লালমনিরহাট পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সম্মেলনকক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আদিতমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোক্তারুল ইসলাম, ওই থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোজাম্মেল হক, এসআই জয়নাল আবেদীন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।