বালু উত্তোলনে বাঁধ হুমকির মুখে

ইজারা ছাড়াই দীর্ঘদিন ধরে বালু উত্তোলনের ফলে সরকারও হারাচ্ছে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব।

সরিষাবাড়ীর যমুনা নদীর পূর্ব তীরের সংরক্ষণ বাঁধের পাশ থেকে আবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এতে বাঁধটি হুমকির মুখে পড়েছে। সম্প্রতি উপজেলার যমুনা নদীর কুলপাল এলাকায়প্রথম আলো

জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার আওনা ইউনিয়নে যমুনা নদীর জেগে ওঠা চরে খননযন্ত্র বসিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এতে নষ্ট হচ্ছে ফসলি জমি। পাশাপাশি যমুনা নদীর পূর্ব তীর সংরক্ষণ বাঁধও পড়ছে হুমকির মধ্যে। এদিকে, কোনো ধরনের ইজারা ছাড়াই আওনা ইউনিয়নের কাওয়ামারা ও কুলপাল এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে বালু উত্তোলনের ফলে সরকারও হারাচ্ছে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় ভূমি কার্যালয় ম্যানেজ করেই যমুনা নদীর জেগে ওঠা চর ও পূর্ব তীরে খননযন্ত্র বসিয়ে অবৈধভাবে একটি চক্র বালু উত্তোলন করে আসছে। এ বালু ট্রাকে করে বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।

বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন ২০১০-এর (৪)-এর(খ) ও (গ) ধারা অনুযায়ী, সেতু, কালভার্ট, বাঁধ, সড়ক, মহাসড়ক, বন, রেললাইন ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনা অথবা আবাসিক এলাকা থেকে এক কিলোমিটারের মধ্যে বালু তোলা যাবে না। নদের তীর ভাঙনের শিকার হওয়ার আশঙ্কা থাকলেও বালু তোলা নিষেধ।

সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার আওনা ইউনিয়নের কাওয়ামারা ও কুলপাল এলাকায় যমুনা নদীর বিশাল চর জেগে উঠেছে। এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে আওনা ইউনিয়নের স্থল গ্রামের সাইফুল ইসলাম, নয়ন, আলতাব, ইকবাল, আনিছুর রহমান, হাফিজুর রহমান ও কাওয়ামারা গ্রামের হাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে কাওয়ামারা ও কুলপাল এলাকার যমুনা নদীর জেগে ওঠা চর থেকে খননযন্ত্র বসিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এসব বালু তাঁরা বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করছেন। পাশাপাশি মাটি তুলে ভিটেবাড়ি ভরাটের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন বলেন, যাঁরা বালু উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত, তাঁরা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এ জন্য তাঁদের কেউ কিছু বলে না। নদীর চর থেকে প্রতি ট্রাক বালু বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা করে। প্রতিদিন ভেকু মেশিনের মাধ্যমে শতাধিক ট্রাকে বালু তুলে বিক্রি করা হচ্ছে। বালু উত্তোলন করায় ফসলি জমি নষ্ট হচ্ছে। যমুনা নদীর পূর্ব তীর বাঁধও হুমকির মুখে পড়ছে।

কুলপাল গ্রামের কৃষক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘যমুনা নদীর জেগে ওঠা চরে আমরা ফসল আবাদ করেছি। সরকারদলীয় লোকজন জোরপূর্বক ড্রেজার বসাইয়ে বালু ও মাটি কাইটে নিয়ে যাচ্ছে। আমরা কী কইরে খামু। অভিযোগ দিয়েও কাজ হয় না।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে যমুনার তীর থেকে বালু উত্তোলনকারী আওনা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য সাইফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘সরকার আমাদের ক্ষমতায়। নদী থেকে বালু তুলি আমরা। লিইখে যা করেন কইরেন? আমাদের বালু তোলা বন্ধ করতে পারবেন না।’

আরেক বালু উত্তোলনকারী আওনা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য কুলপাল গ্রামের বাসিন্দা হাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমাদের জমি থেকে বালু তুলি, আপনাদের কী? বালু তোলার মাধ্যমে নদী শাসন করে দিচ্ছি। পাড় ভাঙে গেলে আমাদের কী হইব?’

আওনা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা বেল্লাল হোসেন বলেন, নদী থেকে বালু উত্তোলনকারীদের দমন করতে না পারলে যমুনার পূর্ব তীর সংরক্ষণ বাঁধ সামনে ভেঙে যাবে।

জানতে চাইলে সরিষাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শিহাব উদ্দিন আহমদ বলেন, এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে অভিযোগ পেলে বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জামালপুরের পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী আবু সাইদ বলেন, নরপাড়া-রাধানগর যমুনা পূর্ব তীর সংরক্ষণ বাঁধ নির্মাণে ২০০ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। তীর সংরক্ষণের প্রকল্পের কাজ মাত্রই শেষ হয়েছে। এ মুহূর্তে তীর সংরক্ষণ বাঁধের কাছ থেকে বালু উত্তোলন করা হলে বর্ষা এলে বাঁধ যমুনা নদীর ভাঙনে বিলীন হয়ে যাবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে প্রায়ই ওই এলাকায় অভিযান পরিচালনা করা হয়। এরপরও তীরের পাশ থেকে কেউ বালু উত্তোলন করতে যাতে না পারে, সেদিকে তাঁরা লক্ষ রাখছেন।