বালু তোলায় ভোগাই নদের বাঁধে ভাঙন

ভোগাই নদ রক্ষা বাঁধের নিচ থেকে বালু তোলায় বাঁধ ভেঙে যাচ্ছে। গত রোববার শেরপুরের নালিতাবাড়ীর মণ্ডলিয়াপাড়ায়।ছবি: প্রথম আলো

শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলায় ভোগাই নদের রক্ষা বাঁধের নিচ থেকে বালু তোলা হচ্ছে। এতে বাঁধ ভেঙে পড়ছে। এর ফলে বর্ষায় বাঁধের ভাঙা অংশ দিয়ে পানি ঢুকে আশপাশের এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় লোকজন। তাঁরা বাঁধ রক্ষার দাবি জানিয়েছেন।
স্থানীয় রামচন্দ্রকুড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান খোরশেদ আলম বলেন, ‘আমরা দিনে বাধা দিলে রাতে বালু তোলা হয়। তাই বালু তোলা বন্ধে প্রশাসনের অভিযান দরকার।’

এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, গত বৈশাখ থেকে ১ কোটি ৩৯ লাখ টাকায় ভোগাই নদের চারটি স্থান থেকে বালু তোলার ইজারা পায় মেসার্স ইলিয়াস এন্টারপ্রাইজ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। স্থানগুলো হলো তন্তর, মণ্ডলিয়াপাড়া, ফুলপুর ও নয়াবিল এলাকা। কিন্তু এসব এলাকায় পর্যাপ্ত বালু না থাকায় মণ্ডলিয়াপাড়া এলাকায় নদ রক্ষার ৪০০ মিটার বাঁধের নিচ থেকে বালু তোলা হচ্ছে। স্থানীয় ওয়াহাব আলী, আবু সামাদ, গেন্দা মিয়া, জনি মিয়া, নয়ন মিয়া, সাদ্দাম হোসেন, হানিফ মিয়া, নজরুল ইসলাম, আমানত উল্লাহ, মো. মিসকিন ১০-১২টি শ্যালো মেশিন বসিয়ে এসব বালু তুলে বিক্রি করছেন।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য চেষ্টা করেও ওয়াহাব আলী ছাড়া অন্য বালু ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
ওয়াহাব আলী বলেন, তিনি নিজের জমি থেকে বালু তুলছেন। এ কারণে বাঁধের ক্ষতি হচ্ছে না। অন্যরাও হয় নিজের জমি থেকে অথবা অন্যের জমি থেকে চুক্তিতে বালু তুলছেন।
বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১০-এর (৪)-এর (খ) ও (গ) ধারা অনুযায়ী, সেতু, কালভার্ট, ড্যাম, ব্যারেজ, বাঁধ, সড়ক, মহাসড়ক, বন, রেললাইন ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনা অথবা আবাসিক এলাকা থেকে সর্বনিম্ন এক কিলোমিটারের মধ্যে বালু তোলা যাবে না। নদের তীর ভাঙনের শিকার হওয়ার আশঙ্কা থাকলেও বালু তোলা নিষেধ।

সম্প্রতি গিয়ে দেখা যায়, নয়াবিল এলাকায় নাকুগাঁও স্থলবন্দরে যাতায়াতের জন্য দুই লেন সড়ক রয়েছে। সড়কটি রক্ষায় বাঁধের বাজার এলাকা নদে ৫০০ মিটার পাকা বাঁধ। এই বাঁধের ১০০ মিটার পূর্ব দিকে মণ্ডলিয়াপাড়া এলাকায় ৫০০ মিটার মাটির বাঁধ রয়েছে।
এ সময় এলাকার লোকজন বলেন, ১৫ দিন ধরে ওই মাটির বাঁধের নিচে ১০টি শ্যালো মেশিন বসিয়ে বালু তোলা হচ্ছে। বালু তোলার জন্য বাঁধের ওপরের গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। আগাছা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এতে বাঁধে বড় ধরনের গর্ত তৈরি হয়েছে। বর্ষায় পানি এলে যেকোনো সময় বাঁধের ভাঙা অংশ দিয়ে পানি ঢুকে এলাকা প্লাবিত হয়ে যাবে।
মণ্ডলিয়াপাড়া গ্রামের হুরমুজ আলী বলেন, ‘যেভাবে গাঙের বান্দ ভাইঙা বালু তোলা অইতাছে, ঢল আইলে বান্দ গড়াইয়া পানি আমগর বাড়িঘরে ডুইকা পড়ব। প্রশাসনের লোকজন বাধা না দিলে তো এই বালু তোলা বন্ধ অইত না। এলাকার মানুষের বিরাট ক্ষতি আইব।’
বালু তোলা বন্ধের বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহফুজুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওই স্থানে বালু তোলার বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়ার জন্য ইউপি চেয়ারম্যানকে বলব। তিনি জানানোর পর দরকার হলে অভিযান চালাব।’