‘বাস মোর স্বামীক নয়া বাড়িত উঠার দেইল না’

তারাগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে কাঁদছেন সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত কিশোর চন্দ্রের স্বজনেরা
ছবি: প্রথম আলো

‘বাস মোর স্বামীর প্রাণ কাড়ি নেইল (নিলো)। মোর সুখের সংসার নষ্ট করি দেইল। কষ্ট করি স্বামী বাড়ি বানাইল। বাস মোর স্বামীক নয়া বাড়িত উঠার দেইল না।’

সড়ক দুর্ঘটনায় স্বামী কিশোর চন্দ্র নিহতের পর এমন আহাজারি করছেন স্ত্রী পপি রানী। আজ শুক্রবার রাত সাতটায় রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়কের বালাপাড়ার মোড়ে যাত্রীবাহী বিআরটিসির বাসের ধাক্কায় নিহত হন কিশোর। তাঁর বাড়ি রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার ইকরচালী ইউনিয়নের সাতঘরিপাড়া গ্রামে।

স্থানীয় লোকজন জানান, স্ত্রী–সন্তানকে নিয়ে অভাবের সংসারেও সুখ ছিল দিনমজুর কিশোর চন্দ্রের (৪০)। নিজের আবাদি জমি না থাকায় বর্গাচাষ করতেন তিনি। অন্যের বাড়িতে দিনমজুরি শেষে যেটুকু বেলা বাঁচত তা বর্গা জমিতে খাটতেন। ভাঙাচোরা বাড়ির বদলে স্বপ্ন দেখতেন পাকা বাড়ির। ফসল বিক্রি ও জমানো টাকায় সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নও করেন কিশোর। আর মাত্র এক সপ্তাহ পরে ছাদ পেটানো নতুন দালানে ওঠার কথা ছিল তাঁর। কিন্তু সেই স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে গেল।

প্রত্যক্ষদর্শী ও কিশোর চন্দ্রের পরিবার জানায়, কিশোর চন্দ্রের নতুন পাকা বাড়ির কাজ শেষ। মাত্র দুই বস্তা সিমেন্টের প্রলেপ বাকি ছিল দালানে। তা হলেই নতুন ঘরে উঠতেন তিনি। আজ শুক্রবার তারাগঞ্জ বাজার থেকে নিজ গ্রামের ভ্যানচালক নরেশ চন্দ্রের ভ্যানে করে সেই সিমেন্ট নিয়ে তিনি ফিরছিলেন। রাত ৭টার দিকে রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়কের বালাপাড়ার মোড়ে পৌঁছালে রংপুরগামী যাত্রীবাহী একটি বিআরটিসির বাস তাঁদের ভ্যানটিকে ধাক্কা দেয়। এতে ভ্যানসহ কিশোর চন্দ্র ও নরেশ চন্দ্র সড়কে ছিটকে পড়ে গুরুতর আহত হন। স্থানীয় লোকজন তাঁদের উদ্ধার করে প্রথমে তারাগঞ্জ হাসপাতালে ও পরে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেন। কিশোর রাত আটটায় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। কিশোরের স্ত্রী ও ১০ বছরের এক সন্তান রয়েছে। নরেশ চন্দ্রের বাড়িও একই গ্রামে।

অভিযোগ রয়েছে, বালাপাড়ার মোড়ে রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়ক ও বালাপাড়া-বরাতি সড়ক দখল করে দীর্ঘদিন ধরে বালাপাড়া গ্রামের কয়েকজন ব্যবসায়ী ধান কেনাবেচা করছেন। এতে সড়ক সংকুচিত হওয়ায় যাতায়াতে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। বিশেষ করে শুক্র ও সোমবার তারাগঞ্জে হাট থাকায় এখানে বেশি সমস্যা হয়।

কিশোর চন্দ্রের মৃত্যু নিশ্চিত করে ইকরচালী ইউপির সদস্য রবিউল ইসলাম বলেন, সড়ক দখল করে বালাপাড়া মোড়ে কাঁচনা গ্রামের আবদুল কাইয়ুম দীর্ঘদিন ধরে ধান কেনাবেচা করছেন। সড়কের ওপর তাঁকে ধান কেনাবেচা করতে নিষেধ করলেও তিনি শোনেন না। এ কারণে প্রায়ই এখানে দুর্ঘটনা ঘটে।

তারাগঞ্জ থানার ওসি ফারুক আহম্মদ বলেন, সড়ক দুর্ঘটনার খবর পাওয়ার সঙ্গে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে একজন মারা যান। এ ঘটনায় এখনো কেউ অভিযোগ করেননি।