বাসাইলের সাবেক ইউএনওর অনৈতিক সম্পর্কের সত্যতা মিলেছে

টাঙ্গাইল জেলার মানচিত্র

কলেজছাত্রীর সঙ্গে টাঙ্গাইলের বাসাইলের সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মনজুর হোসেনের অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগের প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি। তবে যৌন হয়রানি ও প্রতারণার অভিযোগের বিষয়টি নিশ্চিত হতে পারেনি কমিটি। টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসকের তদন্তের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সোহানা নাসরিন তাঁর তদন্ত প্রতিবেদনে এমন কথা জানিয়েছেন।

তদন্ত প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, অভিযোগকারী ছাত্রীর সঙ্গে মনজুর হোসেনের অনৈতিক সম্পর্ক ছিল। তাঁদের মধ্যে শারীরিক সম্পর্ক ছিল কি না, তা ডাক্তারি পরীক্ষা বা উপযুক্ত স্বাস্থ্য পরীক্ষার মাধ্যমে অনুসন্ধান করা যেতে পারে।

গত বছরের ২০ অক্টোবর ওই কলেজছাত্রী জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগে বলেন, ২০২১ সালে বাসাইলের ইউএনও মো. মনজুর হোসেনের সঙ্গে তাঁর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পরিচয় হয়। বিয়ের কথা বলে ইউএনও তাঁর সরকারি বাসভবনে ডেকে নিয়ে শারীরিক সম্পর্ক করেন। পারিবারিকভাবে তাঁর (ছাত্রীর) বিয়ে অন্য জায়গায় ঠিক হলে, তিনি (ছাত্রী) বিয়ের জন্য ইউএনওকে বলতে থাকেন। ইউএনও বিয়ের কথা বলে তাঁকে বাড়ি থেকে চলে আসতে বলেন এবং টাঙ্গাইল শহরের পাওয়ার হাউসের কাছে একটি বাসা ভাড়া নেন। সেই বাসায় তাঁরা দুই মাস থাকেন।

লিখিত অভিযোগে কলেজছাত্রী আরও বলেছেন, গত বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর রাতে বেনাপোল হয়ে তাঁকে (ছাত্রীকে) নিয়ে ইউএনও ভারতের কলকাতায় যান। সেখান থেকে উড়োজাহাজে করে হায়দরাবাদে যান। সেখানে তাঁরা দুজন চিকিৎসা নেন। পাসপোর্ট দেখে তিনি জানতে পারেন মনজুর হোসেন বিবাহিত। সেখানে থাকার সময় তাঁর মুঠোফোন থেকে দুজনের ভিডিও ও কথোপকথন মুছে ফেলেন ইউএনও। ভারতে ১২ দিন অবস্থানের পর ৫ অক্টোবর তাঁরা ফিরে আসেন। তারপর থেকে ইউএনও তাঁকে এড়িয়ে চলতে থাকেন।

অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের মাঠ প্রশাসন শৃঙ্খলা অধিশাখা থেকে টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসককে এ বিষয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। জেলা প্রশাসক ১৪ মার্চ টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সোহানা নাসরিনকে তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করেন এবং মতামতসহ প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেন।
তদন্তের অংশ হিসেবে চলতি বছরের ৭ এপ্রিল টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে অভিযোগকারী কলেজছাত্রী, সাবেক ইউএনও মো. মনজুর হোসেন, তাঁর গাড়িচালক বুলবুল মোল্লাসহ ছয়জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। তদন্ত শেষে সোহানা নাসরিন জেলা প্রশাসকের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন।

বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসক মো. আতাউল গনি জানান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের (রাজস্ব) কাছ থেকে তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর একমত পোষণ করে তিনি ১০ দিন আগে ওই প্রতিবেদন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠিয়ে দিয়েছেন।

প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, গত বছরের নভেম্বর মাসে ইউএনও মো. মনজুর হোসেন বাসাইল থেকে ঢাকায় বদলি হন। এরপর চলতি বছরের ৪ মার্চ ইউএনও হিসেবে তাঁকে পদায়ন করা হয়। কলেজছাত্রীর অভিযোগের বিষয়টি গণমাধ্যমে আসার পর তাঁকে প্রত্যাহার করা হয়।