বাসের ওপর নির্ভর না করে বিকল্প যানের ব্যবস্থা করতে হবে

সাতক্ষীরা থেকে যশোরের সড়কপথে সরাসরি যোগাযোগ দীর্ঘ দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে বন্ধ। যশোর থেকে সাতক্ষীরা ও সাতক্ষীরা থেকে যশোর যেতে পথে বাস পরিবর্তন করতে হচ্ছে। ফলে মানুষের দুর্ভোগ বাড়ছে। এতে যাত্রীদের যাতায়াতের খরচও বেড়েছে কয়েক গুণ। এই দুর্ভোগের কারণ এবং কীভাবে এ সমস্যা সমাধান করা যায়, সে বিষয়গুলো নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক আনিসুর রহিম।

প্রশ্ন :

সাতক্ষীরার সঙ্গে যশোরের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ ১৮ নভেম্বর থেকে বন্ধ থাকার বিষয়টি আপনি কীভাবে দেখছেন?

আনিসুর রহিম: এ ঘটনায় দেশের একজন নাগরিক হিসেবে আমি খুবই হতাশ। দীর্ঘদিন ধরে সাতক্ষীরার সঙ্গে দেশের বিভিন্ন এলাকার নৌপথেও যোগাযোগ বন্ধ। প্রধানমন্ত্রী ১২ বছর আগে সাতক্ষীরায় এক জনসভায় সাতক্ষীরায় রেল যোগাযোগ চালু করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত এর কার্যত কোনো অগ্রগতি নেই। ফলে এ জেলার মানুষ সড়কপথের ওপর নির্ভরশীল। আর এ সুযোগে বাসমালিক ও শ্রমিকেরা ইচ্ছেমতো বাস বন্ধ করে সাধারণ যাত্রীদের দুর্ভোগে ফেলছেন।

প্রশ্ন :

যাত্রীবাহী বাস সরাসরি যশোরে না যাওয়ায় কিংবা সাতক্ষীরায় না আসায় কারা সবচেয়ে দুর্ভোগে পড়ছেন?

আনিসুর রহিম: আমাদের দেশে উচ্চবিত্ত কিংবা মধ্যবিত্তের একাংশ পাবলিক বাসে চড়ে না। মধ্যবিত্তের একাংশ ও নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণির অধিকাংশ মানুষ বাসে যাতায়াত করে থাকে। কিন্তু বাস মালিক শ্রমিক সমিতির দ্বন্দ্বসহ নানা কারণে যাত্রীবাহী বাস বন্ধ করে দেওয়া হয়। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় দরিদ্ররা।

প্রশ্ন :

সরাসরি না চললেও সাতক্ষীরা জেলার সীমানা পর্যন্ত বাস যাচ্ছে। আবার সেখান থেকে যশোরে বাসে করে গন্তব্যে যেতে পারছেন যাত্রীরা। এতে যাত্রীদের কি সমস্যা হচ্ছে?

আনিসুর রহিম: সাতক্ষীরা থেকে যশোরের দূরত্ব ৬৪ কিলোমিটার। সোয়া এক ঘণ্টায় যশোর যাওয়া যেত। কিন্তু মাঝপথে বাস পরিবর্তনের কারণে সময় বেশি লাগছে। ব্যয়ও বেশি হচ্ছে। দুর্ভোগ ও কষ্টও বেড়েছে। বিশেষ করে রোগীদের নিয়ে বেশি সমস্যা হচ্ছে।

প্রশ্ন :

আপনি তো সাতক্ষীরা নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক, বাস চলাচল পুনরায় চালু করার জন্য আপনি কি কোনো উদ্যোগ নিয়েছেন?

আনিসুর রহিম: সাতক্ষীরা নাগরিক কমিটি ছাড়া আরও কয়েকটি কমিটি রয়েছে, যারা সাধারণ মানুষের পক্ষে কথা বলে। ইচ্ছেমতো গাড়ি থামিয়ে এক ঘণ্টার পথ দুই ঘণ্টা কিংবা আরও বেশি লাগিয়ে জনদুর্ভোগ বাড়ানো হয়। এসব বিষয় একাধিকবার স্থানীয় প্রশাসন, বাস মালিক সমিতির নজরে নিয়ে আসার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু ফল পাওয়া যাচ্ছে না।

প্রশ্ন :

সাতক্ষীরা থেকে শ্যামনগর, দেবহাটা ও তালা উপজেলায় সরাসরি বাসে যাতায়াত করা যায় না। এসব এলাকার যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য কোনো ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে কী?

আনিসুর রহিম: দেখুন সুন্দরবন বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ। আর সড়কপথে একমাত্র সাতক্ষীরা থেকে সুন্দরবনে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। সুন্দরবন সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার মধ্যে। সাতক্ষীরা থেকে বাস কালীগঞ্জ পর্যন্ত যাওয়ার পর প্রায় এক কিলোমিটার হেঁটে আবার বাস পরিবর্তন করতে হয়। প্রতিদিন কয়েক শ মানুষ, বিশেষ করে শীত মৌসুমে প্রতিদিন কয়েক হাজার সুন্দরবন ভ্রমণে আসে। কিন্তু এখানে এসে তাঁরা দুর্ভোগে পড়েন। এ ব্যাপারে প্রশাসন কিংবা পর্যটন করপোরেশনের কোনো উদ্যোগ নেই। আর দেবহাটা ও তালার অবস্থা একই। নাগরিক কমিটির পক্ষ থেকে বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

প্রশ্ন :

সাতক্ষীরায় জেলায় যোগাযোগের ক্ষেত্রে বিদ্যমান বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের আপনার কোনো পরামর্শ আছে কী?

আনিসুর রহিম: সবার আগে বিকল্প যাতায়াতের ব্যবস্থা বিশেষ করে রেলপথ চালু করতে হবে। রেললাইন চালু হলে শুধু সাতক্ষীরার মানুষ নয়, দেশের মানুষ নানাভাবে উপকৃত হবে। মাছ, ধান, আম, বড়ই, সবজিসহ অল্প খরচে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠাতে পারবে। সাতক্ষীরাসহ সুন্দরবনে মানুষ আসতে পারবে সহজে ও অল্প খরচে। শুধু বাসের ওপর নির্ভর হওয়ায় যাত্রীদের জিম্মি করা সহজ হচ্ছে। রেললাইন চালু করা গেলে এ অবস্থার পরিবর্তন আসবে।